বিয়ের পরে ফিটনেস-চর্চা | Fitness practice after marriage
বিয়ের পরে ফিটনেস-চর্চা | Fitness practice after marriage:
বিয়ের পরে কেন ওজন বাড়ে মেয়েদের? কীভাবেই বা এই বাড়তি মেদ ঝরিয়ে থাকবেন ছিপছিপে? বিবাহ পরবর্তী ফিটনেস-চর্চা ও পারফেক্ট ডায়েটের হদিশ বাতলালেন বিশেষজ্ঞরা।
বিয়ের পরে কেন ওজন বাড়ে মেয়েদের? কীভাবেই বা এই বাড়তি মেদ ঝরিয়ে থাকবেন ছিপছিপে? বিবাহ পরবর্তী ফিটনেস-চর্চা ও পারফেক্ট ডায়েটের হদিশ বাতলালেন বিশেষজ্ঞরা। শুনলেন ইন্দ্রাণী ঘোষ।
সবেমাত্র মাসখানেক হল বিয়ে হয়েছে শ্রীপর্ণার। কিন্তু এরই মধ্যে চিরকালের তন্বী শ্রীপর্ণার কোমরে মেদ জমতে শুরু করেছে। গাল, হাত-পায়ের ঊর্ধ্বাংশ, থুতনির ‘ডবল চিন’-এর মধ্যেও যেন সেই স্থূলত্বের ঈষৎ আভাস প্রকট। ঘরোয়া আড্ডায় বন্ধুরা হাসাহাসি করে। তাদের দাবি, বরের ‘সোহাগে’ই নাকি এহেন হাল শ্রীপর্ণার। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা হলেও কথা ওঠে এ নিয়ে। বিয়ের জল গায়ে পড়ে শ্রীপর্ণার কী-কী ‘উন্নতি’ হয়েছে, কত কেজি ওজন বাড়ল, সে নিয়ে জোর চর্চা চলে মহিলা-মহলে।
বিয়ে করলে সত্যিই মেয়েদের ওজন বাড়ে কি না, কেনই বা ওজন বাড়ে, এ নিয়ে তর্কের শেষ নেই। তবে ডিসিপ্লিনড লাইফস্টাইল আর নিয়ম মেনে এক্সারসাইজ়ই কিন্তু ঝরঝরে চেহারার চাবিকাঠি। বিয়ের পরে ফিট থাকতে শরীরচর্চার টিপস দিলেন েসলিব্রিটি নিউট্রিশনিস্ট ও লাইফস্টাইল কনসালট্যান্ট মুনমুন গনেরিওয়াল ।
মিথ ভার্সেস রিয়্যালিটি:
বিয়ে করলে ওজন যে বাড়বেই, মহিলাদের ক্ষেত্রে এ ধারণা ধ্রুব সত্য। বিয়ের পর নারী-পুরুষ উভয়েরই নিয়মিত যৌনজীবন শুরু হয়। অনেকেই মনে করেন, নিত্য শারীরিক সম্পর্কের কারণেই দ্রুত বাড়তে শুরু করে ওজন! ফলে বিয়ের অনতিকাল পরেই মহিলাদের এই ওজন বৃদ্ধিকে বেশিরভাগই সুস্থ স্বাভাবিক দাম্পত্যজীবনের ফলশ্রুতি রূপে দেখতে শুরু করেন। এমনকি, বিয়ের পরে ওজন বাড়লে সেটাকে ‘স্বাস্থ্যকর’ বলে ‘এনকারেজ’-ও করে থাকেন কেউ কেউ। কারওর মতে, বিয়ের পর নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কের ফলে মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু হরমোনাল পরিবর্তন আসে, সেটাই ওজন বৃদ্ধির আসল কালপ্রিট!
মজার ব্যাপার, আম-আদমির মনে ‘বিয়ের জল’ গায়ে পড়ে ওজন বাড়ার এ হেন ধারণা থাকলেও এটি কিন্তু আদতে মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়। খেয়াল রাখবেন, ওজনের এই পরিবর্তন কিন্তু সদ্য বিবাহিত পুরুষটির ক্ষেত্রে হয় না, একান্তভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। ফলে বিয়ের পর কেন শুধু মহিলাদেরই ওজন বাড়ে, তার পিছনে আছে বেশ কিছু কারণ।
অভ্যাসের হঠাৎ বদল:
♦ বিয়ের পর মেয়েদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন আসে। বিয়ের পর মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে যেতে হয়। ফলে তার এতদিনের চলে আসা জীবনযাত্রার ধরন, রোজকার রুটিন, খাদ্যাভ্যাস... সবেতেই আসে বদল। অন্যদিকে পুরুষটি কিন্তু থাকেন তাঁর বাড়িতেই। ফলে তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস একই থাকে। স্বভাবতই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার দৈনন্দিন রুটিনে এই আকস্মিক বদলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগে মেয়েটির। আর কে না জানে, ‘শরীরের নাম মহাশয়’! ফলে রোজকার নিয়মে একটু-আধটু বদল হলেই তার প্রভাব পড়তে শুরু করে মেয়েটির শরীরে।
♦ বদল আসে খাওয়ার সময়তেও। ধরুন, বিয়ের আগে ছাব্বিশ বছর ধরে আপনি বাড়িতে রোজ রাত দশটায় ডিনার করতেন, সকাল ন’টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে নিতেন। শ্বশুরবাড়িতে কাজের চক্করে সেই ডিনার টাইম এখন গিয়ে ঠেকেছে রাত এগারোটায়, ব্রেকফাস্ট যখন সারেন, তখনও ঘড়ির কাঁটা নিত্য সাড়ে দশটা ছুঁইছুঁই।
♦ শুধু তাই নয়, বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি স্থানান্তরে রোজকার খাবারের ধরন, রান্নার প্যাটার্ন, রেসিপিতে আসে বদল। কেউ ধরুন বিয়ের আগে কম তেল, ঝাল দিয়ে রান্নায় অভ্যস্ত ছিলেন। শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দেখলেন, সব রান্নাই মশলাদার, তেলের ভাগও তাতে বেশি। খাদ্যাভ্যাসের এই আচমকা পরিবর্তনেও কিন্তু শারীরিক গঠনের পরিবর্তন হতে শুরু করে।
♦ ঘুমের সময়ের বদলও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে কাঁধে চাপে বাড়তি দায়িত্ব, সকাল-সন্ধে নিয়ম করে ঘরের কিছু কাজ। অনেক বাড়িতে এখনও সব কাজ সেরে রাত জেগে স্বামীর জন্য বসে থাকতে হয় সদ্যবিবাহিতা মেয়েটিকে। তাছাড়া যে-মেয়ে হয়তো বিয়ের আগে সকাল আটটার আগে ঘুম থেকে উঠতেই চাইত না, কাজের চক্করে এখন তাকে রোজ উঠে পড়তে হচ্ছে ছ’টায়! ফলে ঘুমের সময় সাড়ে সাত-আট ঘণ্টা থেকে কমতে-কমতে পৌঁছে যায় সাড়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টায়। সংসার আর অফিস দু’হাতে সামলাতে গিয়ে বর্তমানের আধুনিকাদের অনেক সময়েই হাজারও চিন্তায় ঘুম গভীর হয় না। ফলে সকালে উঠলেও ক্লান্তি যেন কাটতেই চায় না! আর ঘুমের ‘কোয়ালিটি’ আর ‘কোয়ান্টিটি’র এই হেরফেরেই দ্রুত বাড়তে থাকে ওজন।
জোর থাকুক নিয়মে:
মনে রাখবেন, আমাদের শরীর কিন্তু সবসময়েই নিয়ম পছন্দ করে। আর নিয়মের সামান্য বদল হলেই শুরু হয় তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া। তাই সুস্থ থাকতে এই নিয়মানুবর্তিতার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যিক। বিয়ের পর সব আগের নিয়মে চলবে না। এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি বাড়িতে এসে আপনাকে সব না হলেও নতুন কিছু বিষয় অ্যাডপ্ট করতেই হবে। তাই সেটাকে মেনে নিন। এক্ষেত্রে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির সকলে যদি একটু সাহায্য করেন, তাহলেই কিন্তু গোটা বিষয়টি খুব সহজ হয়ে যায়। বিয়ের কয়েকদিন এমনিতেই সকলের খুব চাপ যায়। সেসময় খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম হয়েই থাকে। কিন্তু এই ব্যাপারগুলি মিটে গেলেও যদি দেখেন, শ্বশুরবাড়িতে নতুন সময়ে খেলে আপনার হজমের সমস্যা হচ্ছে, তাহলে সেটি আপনি স্বামী বা অন্য কাউকে জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে সকলে মিলে একটা মধ্যস্থতায় আসুন। আজকাল অনেক পরিবারেই এইসমস্ত ব্যাপারে নতুন বউদের মতামতকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে এটি নিয়ে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রোজ নিয়ম করে সময়ে খেলে বা দৈনন্দিন জীবনযাপন, ঘুম সবের ক্ষেত্রেই যদি কনসিস্টেন্সি বজায় রাখতে পারেন, তাহলে ওজন বাড়ার সমস্যা হয় না।
‘মি-টাইম’-এ ছেদ?
বর্তমানে করোনার পর অনেকেই শরীরের যত্ন নিয়ে বাড়তি সচেতন হয়ে পড়েছেন। ফিট থাকার জন্য নিয়ম করে কিছু এক্সারসাইজ়ও করছেন কেউ-কেউ। কিন্তু আগে নিয়ম করে শরীরচর্চা করলেও অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিয়ের পরে সেই অভ্যাসে ছেদ পড়ে যায়। তাছাড়া, বিয়ের আগে স্বাভাবিকভাবেই সংসারের প্রতি মেয়েদের দায়িত্ব অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ফলে তখন নিজের শরীর নিয়ে যত্ন নেওয়ার অবকাশও বেশি থাকে। কেউ হয়তো নিয়ম করে সকালে উঠে আধঘণ্টা যোগা করতেন, বা মর্নিং ওয়াকে যেতেন। বিয়ের পর কাঁধে সংসারের নানা দায়িত্ব চাপায় অনেকেই তখন নিজের দিকে সময় দিতে পারেন না। সকালে ওই সময়টায় হয়তো ঘুম থেকে উঠেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন চা করতে বা বরের ও নিজের অফিসের টিফিন রেডি করতে, শ্বশুর-শাশুড়ির জলখাবার বানাতে। মনে রাখবেন, যাই করুন না কেন, দিনে আধঘণ্টা সময় বের করে নিজের দিকে মন দেওয়া কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। সে-সময় হাঁটাহাঁটি, যোগাসন... বিয়ের আগে যেটা করতেন, সেটাই করতে থাকুন। তাহলে দেখবেন, ফিট থাকছেন।
শরীরচর্চায় অপরাধবোধ?
শরীরচর্চা মানেই কিন্তু আসলে নিজের দিকে নজর দেওয়া। বিয়ের আগে যেভাবে ফ্রি হয়ে শরীরচর্চা করতেন, বিয়ের পর অনেকেই সেটা আর করতে পারেন না। বিয়ের পর নতুন পরিবেশে অনেকেই বুঝতে পারেন না, দরজা বন্ধ করে যোগা করলে, বা নব্য বিবাহিতা বউ সকালে স্কিপিং শুরু করলে ‘লোকে কী বলবে’। তাছাড়া সংসারের কাজ না করে ‘মি-টাইম’ কাটানোটাকে আজও অনেকেই ‘খারাপ’ বলে দেখে থাকেন। তাঁরা ভাবেন, শাশুড়ির হাতে-হাতে সারাক্ষণ কাজ না করলেই বুঝি তিনি ‘খারাপ’ বউ হয়ে যাবেন। ফলে অচিরেই শুরু হয় অপরাধবোধ। এই ধারণা থেকে বেরতে হবে। আশপাশের কেউ যদি আপনার ফিট থাকার প্রচেষ্টা বা শরীরের যত্ন নেওয়াকে বাঁকা চোখে দেখেন, সেটা তাঁর সমস্যা, আপনার নয়। তাই শরীরচর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে সকলকে বোঝান। দরকারে স্বামীর সঙ্গেও এই নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন।
দু’য়ে মিলে...
আজকাল অনেকেই কিন্তু এটা করে থাকেন। এখনকার দিনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্বামীরা বেশ সাপোর্টিভ হন। নিজেরাও শরীরচর্চা করে ফিট থাকেন, স্ত্রীকেও উৎসাহ দেন। এরকম যদি হয়, তাহলে নিজেরাই একসঙ্গে ফিটনেস চ্যালেঞ্জ নিন, গোল সেট করুন। একসঙ্গে সকালের জিম করুন বা যোগাসন সারুন। দেখবেন, দু’জনের ক্ষেত্রেই এটি বাড়তি উদ্দীপনার সঞ্চার করবে।
ফিট থাকতে হিট ফর্মুলা?
মনে রাখবেন, বিয়ের পরে রোগা হওয়ার কিন্তু কোনও ম্যাজিক ফর্মুলা নেই। আর বিয়ের পরে ফিট থাকতে কে কী ধরনের শরীরচর্চা করবেন, বা কতটা করবেন, এরও কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও টোটকা নেই। বিয়ের আগে যে-ধরনের সময় নিজের শরীরচর্চায় দিতেন, বিয়ের পরেও কিন্তু সেই কনসিস্টেন্সি বজায় রাখা জরুরি। আপনি যদি বিয়ের আগে সপ্তাহে দু’দিন যোগা করতেন, তাহলে এখনও তাই করুন। কেউ যদি জিমে গিয়ে সপ্তাহে ছ’দিন ভারি ওয়র্কআউট করতেন, তাহলে সেটাই কন্টিনিউ করুন। মোট কথা, এক্ষেত্রে নিজের শরীরের ক্ষমতা বুঝে শরীরচর্চা করাটা জরুরি। যদি আপনি বিগিনার হন, বিয়ের আগে কোনওরকম শরীরচর্চার অভ্যেসই না থেকে থাকে, তাহলে আধঘণ্টা হাঁটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। করোনার পর থেকে অনলাইনে নানারকম ফিটনেস ক্লাসের সংখ্যা বেড়েছে, সেগুলো ফলো করতে পারেন। এছাড়া ইউটিউবেও টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। তবে মনে রাখবেন, এক্সরসাইজ়ের মূল উদ্দেশ্যই কিন্তু হল প্রগ্রেস। ফলে আজ হাঁটা দিয়ে শুরু করলেও যে দু’মাস পরেও হাঁটতে থাকবেন, এমন কিন্তু নয়। ক্রমশ নিজের এক্সরসাইজ় লেভেল বাড়ান। হাঁটা থেকে জগিং করুন। তারপর রান, স্প্রিন্ট। ফিট থাকতে স্কিপিংও কিন্তু দারুণ উপকারী। ফলে সেটাও ট্রাই করতে পারেন। যোগাসন, প্রাণায়াম করুন। এগুলি নিয়ম করে করতে পারলে কিন্তু ওজনকে নির্দিষ্ট একটি মাত্রায় বেঁধে রাখতে পারবেন। আর কখনও যদি একদিন অনিয়ম করে ফেলেন, তাহলে বাকি দিনগুলিতে নিয়ম করে শরীরচর্চা করুন।
খাওয়ার নিয়ম-নিয়মের খাওয়া:
খেয়াল রাখবেন, সুস্থ ও ফিট থাকতে ডিসিপ্লিনড থাকা জরুরি। আর এই ডিসিপ্লিন শুধু শরীরচর্চার ক্ষেত্রেই নয়, খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রেও দরকার। বিয়ের কয়েকদিন ও তার পরেও সোশ্যালাইজ়েশন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাড়ি যাওয়া-আসা লেগেই থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই নেমন্তন্নগুলো রাতে থাকে। তাই খাব না-খাব না করেও সপ্তাহে বেশ কয়েকদিন তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া হয়েই যায়। সাধারণত দুপুরে এই ভারি তেল-মশলাযুক্ত খাবার হজম হয়ে গেলেও রাতের খাবার হজম হতে সময় লাগে বলে রাতে সবসময়ে হালকা খাওয়া উচিত। তাছাড়া রাতে ভারী খাবার খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। তাই রাতে হালকা, সহজপাচ্য খাবার খান। এই নেমন্তন্নগুলো যাতে রাতের বদলে দুপুরে ফেলতে পারেন, সেজন্য এটি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করুন। আত্মীয়দের বলা সম্ভব না হলেও বন্ধুদের কিন্তু অনায়াসে দুপুরে নেমন্তন্ন করার কথা বলতেই পারেন। পরপর যদি এরকম ভারি মশলাদার খাবার খাওয়া হয়ে যায়, তাহলে সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে ব্যালান্স করে হালকা খাওয়া খান।
♦ ব্যালান্সড খাবারের জন্য যে আপনাকে সারাক্ষণ স্যালাড খেতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। বার্লি বা যে-কোনওরকমের খিচুড়ি খেতে পারেন। খিচুড়ি খাওয়ার পর পেট দীর্ঘক্ষণ ভর্তি থাকে, তাছাড়া এটি হালকা হওয়ায় হজম করাও সহজ। খিচুড়িতে থাকা চাল ও ডালের মিশ্রণ কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের দুর্দান্ত সোর্স। এছাড়া এতে ঘি দিলে তা গুড ফ্যাট হিসেবে কাজ করে। খিচুড়িকে কমপ্লিট ফুড বলা হয়, তাই সপ্তাহে পাঁচদিন রাতে খিচুড়ি খেলে কয়েক মাসের মধ্যেই ওজন কমবে।
♦ সুপকেও ব্যালান্সড খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। ক্রিম, কর্নফ্লাওয়ার, মাখন বাদ দিয়ে ক্লিয়ার সুপ বানিয়ে নিন। এখন শীতকাল আসছে, ফলে যে-কোনওরকম সবজি দিয়েই এই সুপ খেতে উপাদেয় লাগবে। মেথি, পালংশাক দিয়ে গ্রিন সুপ বানিয়ে। এছাড়া মুরগির মাংস, মুগডাল দিয়েও সুপ বানাতে পারেন।
ছকে বাঁধা রুটিন:
জীবন কিন্তু আসলে ছন্দে চলে। আর সেই ছন্দ আসে ছক মেনেই। ফলে জীবনের ক্ষেত্রে এই ছকে বাঁধা ডিসিপ্লিন খুব জরুরি। বিয়ের পর নতুন রুটিন, নতুন জীবনযাত্রা একা আপনার নয়, আপনার আগেও লক্ষ-লক্ষ মেয়ের হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রেও এই একই বিষয় ঘটেছে। তাই এই নতুন রুটিনটাকে মেনে নিয়ে সেটা ফলো করুন। খাবার এবং ঘুমের সময় এক রাখার চেষ্টা করুন। রোজ রাতে দশটায় ডিনার করলে সেটাই মেনে চলুন। এই ছক মেনে চললেই শরীরও আপনার কথা শুনবে।
সুস্থ থাকার খাদ্যাভ্যাস:
ডায়েট মানেই অনেকে ধরে নেন খুব কম খাওয়া। এমন কিন্তু একেবারেই না। বিয়ের পর অনেক মহিলাই নিয়ম করে ওসিপি বা ওরাল কনট্রাসেপ্টিভ পিল নিতে শুরু করেন। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ওজনও বাড়তে শুরু করে চড়চড় করে। এরকম হলে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আনা দরকার।
♦ মিষ্টি বা মিষ্টিযুক্ত কোনওরকম খাবার বাদ দিন। আখের রস একেবারেই খাবেন না। এছাড়া কোনওরকম হেলথ ড্রিংক সাপ্লিমেন্ট খাওয়া বন্ধ করুন।
♦ দুধ বা দুধের প্রডাক্ট যেন ডবল টোনড হয়। মাখন, ঘি কয়েকদিনের জন্য খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়াই শ্রেয় হবে।
♦ ভাজাভুজি, কোল্ড ড্রিংকস বাদ দিন।
নিয়ম মেনে ডায়েট:
বিয়ের কয়েকদিন, এমনকি বিয়ের পরেও সোশ্যালাইজেশনের দৌলতে প্রচুর অনিয়ম হয়। তাই শরীরকে ঠিক রাখতে এসময় অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট খাবার খাওয়া জরুরি। খাওয়াটাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে নিয়ে অল্প-অল্প করে খান। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এতে কেটে যাবে।
♦ হাতের কাছে মরশুমি যে ফল পাবেন, সেই তিনরকমের ফল প্রত্যেকটি ৩০ গ্রাম করে নিয়ে স্মুদি বানিয়ে নিন। এতে দই ও আমন্ড পাওডার দিতে পারেন। সন্ধেবেলার স্ন্যাকসে বা রাতে ডিনারের পর এই স্মুদি খেয়ে নিলে শরীর ডিটক্সিফাই হবে। ফিট থাকতেও সাহায্য করবে।
♦ ঘুমের প্যাটার্ন বদলে যদি রাতে ঘুমতে সমস্যা হয়, তাহলে শুতে যাওয়ার আগে দুটো পেস্তা ও একটা আমন্ড খেয়ে ঘুমতে যান, উপকার পাবেন।
♦ প্রচুর তেল মশলা খেয়ে ফেলার পর অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়। এটা যদি খুব বাড়ে, তাহলে দুপুরে খাওয়ার পর ২০০ গ্রাম পাকা পেঁপে খেতে পারেন।
♦ বিয়ের সময় একগাদা তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেয়ে ফেলার ফলে পরে খুব সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে সকালবেলা খালিপেটে একগ্লাস জিরের জল হজমে দারুণ সাহায্য করে। এছাড়া দিনে ২.৫-৩ লিটার জল নিয়ম করে খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
♦ সেই সঙ্গে ৬-৮ ঘণ্টার পর্যাপ্ত ঘুম মাস্ট।
তাই নিয়ম মেনে শরীরচর্চা এবং যথার্থ খাদ্যাভ্যাস, ফিট থাকতে এই দুটোই কিন্তু জরুরি। শরীরচর্চার ক্ষেত্রে সঙ্গী করুন আপনার পার্টনারকে, দেখবেন আলাদা মোটিভেশন পাচ্ছেন। নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলুন আর ডিসিপ্লিনড থাকুন, দেখবেন, বিয়ের পরেও আপনি দিব্যি ফিট অ্যান্ড ফ্রেশ থাকছেন।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url