মনের জোর বাড়াবেন কীভাবে? | How to increase the strength of the mind

 


মনের জোর বাড়াবেন কীভাবে? | How to increase the strength of the mind:

জীবনে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে আমরা অনেকেই কমবেশি দুর্বল হয়ে পড়ি। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। মনে হয়, ফিরে আসার সব রাস্তা বন্ধ। কিন্তু বেঁচে থাকার মূলমন্ত্রই তো হল মানসিকভাবে নিজেকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলা।

আপনি হয়তো একা মা। সংসার, সন্তানের দায়িত্ব একা হাতে নিতে গিয়ে কোনও না কোনওদিন নিশ্চয়ই একটু হলেও হতাশ লাগে। ভাবেন, আপনার এই দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার মতো কোনও সঙ্গী থাকলে কত ভাল হত। আবার, আপনি হয়তো পরিবারের একমাত্র চাকুরে সদস্য। পুরো পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার দায়িত্ব নিতে গিয়ে আপনার নিজস্ব ইচ্ছে-অনিচ্ছে কোথায় হারিয়ে গেছে। মাঝেমধ্যেই হয়তো ভাবেন, কোনওদিন যদি এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন... হতাশ ও ব্যর্থতার ভয়ে কখনও মনের জোর হারাননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে, হেরে যাওয়া অবস্থা থেকে ফিরে আসার লড়াইটা তো আপনাকেই করতে হবে। আর এজন্য ইস্পাতকঠিন মনের জোর গড়ে তোলা জরুরি সবার আগে। কাজে ব্যর্থতা, প্রিয়জনকে হারানোর দুঃখ, জীবনে কোন কিছু না পাওয়ার ক্ষোভ, অভিমান, হতাশ, অবসন্নতা, ভাল না লাগা নানা কারণেই মনের জোর হারিয়ে যায়। মনের জোর বাড়ানোর চাবিকাঠি কিন্তু আপনার হাতেই রয়েছে। সবার প্রথমে বলব মন ভাল রাখুন। 

আর সেটা সম্ভব যখন আপনি নিজেকে ভাল রাখবেন। জীবনটাকে প্রাণভরে উপভোগ করুন। দেখুন জীবন অনেকটা খেলার মাঠের মতো। হার জিত, সাফল্য ব্যর্থতা তো থাকলেই। এই সত্যটা মেনে নিতে শিখুন। স্পোর্টসম্যানশিপ স্পিরিট নিয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলুন। মনোবল হারালে কিন্তু চলবে না। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। আত্মবিশ্বাসী হন। নতুন করে আরও একবার ভাবার চেষ্টা করুন। ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাবেন না। পরিস্থিতির মোকাবিলা করুন। আত্মবিশ্বাস থাকলে, মনের জোর না হারালে জীবনে সত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক না, ঠিক কামব্যাক করা যায়। কীভাবে নিজেকে মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলবেন? রইল কিছু উপায়।

ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুন:

মনের জোর বাড়াতে প্রথমেই বলব, সমস্ত নেগেটিভ ইমোশনকে একেবারে ঝেড়ে ফেলে পজিটিভ মাইন্ড সেট করুন। আমার দ্বারা কিছু হবে না' বা 'আমার কপালটাই খারাপ' – এই জাতীয় নেগেটিভ চিন্তাভাবনা ভুলেও মনে আনবেন না। যতই শক্ত কাজ আসুক না কেন, সেটাকে গ্রহণ করুন। মনের জোর হারাবেন না। নিজেকে বলুন হ্যাঁ, চেষ্টা করলে আপনিও পারবেন। ফল কি হল, সেই বিষয়ে মাথা না ঘামাবেন না। বরং নিজে কি করতে পারেন, তার উপর জোর দিন। আপনার তরফ থেকে ১০০ পারসেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করুন। আর হ্যাঁ, আশেপাশে যত পজিটিভিটি দেখবেন ততই আপনার মধ্যেও ইতিবাচক ধ্যানধারণা তৈরি হবে। তাই বলব, এমন লোকজন এড়িয়ে চলুন যাঁরা কোনওকিছুর মধ্যে ভাল দেখতে পান না বা অন্যের সাফল্যে হিংসে করেন বা শুধু অন্যদের নামে নিন্দা করেন। পরিবর্তে যে বন্ধু বা সহকর্মীরা ইতিবাচক কথাবার্তা বলেন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করুন। গঠনমূলক আদানপ্রদান হলে দেখবেন আপনি তাঁদের থেকে মোটিভেশন পাচ্ছেন। আর আপনার মনের জোরও বাড়ছে।

অহেতুক দুঃখ পাবেন না:

জীবনে সমস্ত ক্ষেত্রে হয়তো আপনি সমানভাবে সফল হতে পারবেন না। যেমন ধরুন কোনও একটা কাজের জন্য হয়তো অনেক পরিশ্রম করেলেন, কিন্তু কাঙ্খিত ফল পেলেন না। তখন কিন্তু তা নিয়ে আফসোস করবেন না। সময়ের সঙ্গে দৌড়তে দৌড়তে কখনও না কখনও ব্যর্থতার মুখোমুখিও হতে হবে। কিন্তু সেই সময় ভেঙে না পড়ে, নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নিন। নিজের মনকে কন্ট্রোল করতে শিখুন। হ্যা, মানছি অনেক সময়ই দুঃখ হয়, মনে কষ্ট হয়। কিন্তু এই ইমোশনগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী হতে দেবেন না। একটা কথা আছে জানেন তো, দি পেন ইউ ফিল টুডে উইল বি দি স্ট্রেংথ ইউ ফিল টুমরো'। তাই বলব ব্যর্থতা বা না পারা মেনে নিতে শিখুন। কারণ, এগিয়ে নাওয়ার জন্যে কোনও কিছু আঁকড়ে ধরে থাকা উচিত নয়। ব্যর্থতার সঙ্গে করে যে নেগেটিভ ইমোশন নিয়ে আসে, তাকে স্থায়ী হতে দেবেন না। ব্যর্থতাকে পজিটিভলি নিয়ে, তার থেকে শিখতে চেষ্টা করুন। পরবর্তীকালে সেটা কাজে লাগান। দেখবেন, এতে আপনার হারিয়ে যাওয়া মনোবল ফিরে পাবেন।



মনকে প্রস্তুত করুন:

মনের জোর বাড়াতে নিজের উপর বিশ্বাস রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কনফিডেন্ট হন। হতেই পারে আপনি কোনও একটা কাজে সাফল্য পেলেন না। কিন্তু তার জন্য দুঃখ করে লাভ নেই। দেখুন, যা হয়ে গেছে সেটা তো আর পালটাতে পারবেন না। বরং পুরানো ব্যর্থতা ভুলে আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করুন। ব্যর্থতার চুলচেরা হিসেবে না করে নিজেক একটু সময় দিন। রাগ, ফ্রাস্ট্রেশন, দুঃখ, হতাশার মতো অনুভূতি হয়তো মনে আনাগোনা করবে। এই অনুভূতিকে চেপে রাখবেন না। নিজের মতো করে এই অনুভূতির সঙ্গে মোকাবিলা করুন, দেখবেন ঠিক আস্তে আস্তে মনের জোর ফিরে পাবেন।

মেডিটেশন করুন:

ফাস্ট লাইফস্টাইল, ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা, অফিসের টেনশন, সংসারের হাজারও ঝকি—সব মিলিয়ে জীবনে নতুনত্বের অভাব একটা সময়ে আমাদের মানসিকভাবে খুব ক্লান্ত করে দেয়। এই বিরক্তি কাটাতে নিয়মিত মেডিটেশন করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন মনঃসংযোগ বাড়বে, তেমনই আবার শরীরে ও মনে একটা শক্তভাব আসবে। শুধু তাই নয়, মেডিটেশন মনোসংযোগ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মেডিটেশন সব চিন্তা, স্ট্রেস ও টেনশন দূর করে মস্তিষ্ক এবং মনকে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। এর ফলে মানসিক দৃঢ়তা বাড়ে। চিন্তা ভাবনা অনেক বেশি ফোকাসড থাকে এবং সব কাজে মনযোগ বাড়ে।

নিজেকেই নিজে চ্যালেঞ্জ করুন:

অবাক হলেন? হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ করুন। নিজেকে বলুন আর পাঁচজন যখন পারছে তখন আপনি কেন পারবেন না। ভয় পেয়ে পিছিয়ে না গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করুন। নিজেই ছোট ছোট টার্গেট সেট করুন। নিজেকে টাইম লিমিট দিন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটা করতে পারলে নিজেকেই নিজের প্রিয় জিনিস উপহার দিন। উপহার বলে ভাববেন না কোনও দামি জিনিস বা এলাহি আয়োজনের কথা বলছি। ছোট ছোট জিনিস (চকোলটে, পেন, পারফিউম) এগুলো নিজের জন্যই কিনুন। দেখবেন, মন ভাল হবে। মানসিক দৃঢ়তাও বাড়বে।

মোটিভেশনাল বই পড়ুন:

মোটিভেশনাল বা পজিটিভ থিঙ্কিংয়ের বই পড়লে অনেক সময় হারানো মনোবল ফিরে আসে। বিখ্যাত লোকেদের আত্মজীবনী পড়ুন। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে এধরনের বই অসম্ভব ভাল কারজ করে। মোটিভেশনাল বই আসলে টনিকের মতো। ডিপ্রেসড় লাগলে, হতাশ বোধ করলে এগুলো আবার আপনাকে আশার আলো দেখাতে পারবে। যা পড়লেন, নিজের জীবনে সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। যদি মনে হয় একান্তই মনের জোর পাচ্ছেন না, তাহলে কাউন্সেলিং করাতে পারেন। উপকার পাবেন।

বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটান:

বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা সিনেমা দেখার মতো অ্যাক্টিভিটিও কিন্তু আপনার মনের জোর বাড়াতে সাহায্য করবে। বন্ধুরা সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে কাজ করে। সামনাসমনি দেখা না হলেও নিদেনপক্ষে ফোনে কথা বলুন। নিজের সমস্যার কথা তাঁদের বলুন। প্রয়োজনে তাঁদের সাহায্য চান। এমন লোকেদের সঙ্গে মিশুন যাঁদের দেখে আপনি ইন্সপায়ার হবেন। দেখবেন, লোকেদের সঙ্গে ইন্টার‍্যাকশন করলে শুধু মন মেজাজ ভাল থাকে না, মনের জোরও বাড়বে।



নিজেকে ব্রেক দিন:

অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে একই কাজ বার বার করতে থাকলে বা কাজ করে বার বার ব্যর্থ হলে মনে ক্লান্তি অবসন্নতা আসে। এটাই স্বাভাবিক। তখন অনেক চেষ্টা করেও হারানো মনোবল ফিরে পাওয়া যায় না। আর অবসন্ন শরীর-মন নিয়ে ভাল করে কাজ করা কখনই সম্ভব নয়। এরকম অবস্থা হলে দু'-তিন দিন ছুটি নিন। নিজের পছন্দের কোনও জায়গায় বেড়িয়ে আসুন। বেড়াতে যেতে না পারলে নিজের পছন্দের কোনও কাজে ( বাগান করা, গান শোনা) ব্যস্ত থাকুন। পছন্দের বই আর এক বার পড়ুন, থিয়েটারে গিয়ে সিনেমা দেখুন বা স্পায়ে গিয়ে রিল্যাক্সিং মাসাজ নিন। দেখবেন তরতাজা লাগবে। পুরনো সব ব্যর্ততা ভুলে মনের জোর ফিরে পাবেন। কাজেও নতুন উদ্যম পাবেন।

ভাল করে ঘুমোন:

ভাল করে না ঘুমালে মন কিন্তু একেবারেই ভাল থাকে না। নিজেই ভাবুন না যেদিন রাতে ভাল করে ঘুম হয় না, তার পরদিন সকাল থেকেই কেমন ক্রান্তি লাগে। ভাল করে না ঘুমলে ব্রেন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে ঠিকমতো ঘুম না হলে সৃজনশীলতা, ক্রিটিকাল থিঙ্কিং ও প্রবলেম সলভিং ক্ষমতা সবই কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই প্রতিদিন রাতে অন্তত আটঘণ্টা করে ঘুমোন। দেখবেন, ভাল করে ঘুমালে পরেরদিন সকালে একটা পজিটিভ এনার্জি পাবেন। মনের জোর নিয়ে আবার নতুন করে কাজে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করুন।

মনের জোর বাড়াতে যোগাসন:

সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা শক্ত পরিবেশে পদ্মাসনে বসুন। ছ' সেকেন্ড ধরে জোরে নিঃশ্বাস নিন। দুই সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন। তারপর সাত সেকেন্ড ধরে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়ুন। তারপর ‘ওম' উচ্চারণ করুন। দেখবেন, মন শক্ত হবে। একটা পজিটিভ হবে। নিজের মনে মনে ভাবুন আপনিও পারবেন। নিজের উপর আস্থা রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url