abppatrika

Ramnavami: রামনবমী মানে অস্ত্র-মিছিল নয়?

 


রামনবমী মানে অস্ত্র-মিছিল নয়। রামের নামে জয়ধ্বনি রাজনৈতিক স্লোগান নয়

What Is Ramnavami Festival?

Ramnavami is a Hindu festival that celebrates the birth of Lord Rama, one of the ten avatars of Lord Vishnu. It is celebrated on the ninth day of the Hindu lunar month of Chaitra, which falls in the months of March or April according to the Gregorian calendar. Lord Rama is regarded as the epitome of righteousness and his birth is celebrated with great devotion and enthusiasm by Hindus all over the world. The festival is usually marked by special prayers, fasting, feasting, and various traditional celebrations.


রামনবমীর ওরা-আমরা:

রামনবমী মানে অস্ত্র-মিছিল নয়। রামের নামে জয়ধ্বনি রাজনৈতিক স্লোগান নয়। কেউ রামকে নিয়ে স্বার্থসিদ্ধির তাস খেললেই তিনি বাঙালির পর হয়ে যাবেন না। 

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে আর যা যা পড়ুক না কেন, তার মধ্যে রামনবমী আছে কি না, তা নিয়ে আজকাল প্রায়ই খুব তক্ক-বিতক্ক হতে শুনি। রামনবমী কি বাঙালিরা করেন? এ প্রশ্নের বদলে যদি ঘুরিয়ে প্রশ্ন করা হয়, ‘বাঙালি কী করেন না?’ তা হলেই বোধ হয় ব্যাপারটা সহজতর হয়। কারণ বাঙালি তো চিরকাল বিশ্বাস করে এসেছে, দিবে আর নিবে মেলাবে মিলিবে— এবং দিনের শেষ কেউ ফিরে যেতে পারবে না। তা হলে রামনবমী কি দোষ করল?

সমস্যা অন্যত্র। এবং সমস্যা দু’তরফেই। একটি রাজনৈতিক দলের তাসে টেক্কা হচ্ছেন রাম। রামায়ণ, বেদ, গীতা, যোগ, জ্যোতিষসুদ্ধু হিন্দুধর্ম এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের ক থেকে চাঁদফোটা পর্যন্ত সব কিছুই তাদের মনোপলি, বাপকেলে সম্পত্তি। সেই জন্যই অস্ত্র-মিছিলের গিমিক। গাধুয়া বাঙালির ঘুমন্ত বিবেকের গ্রাউন্ডে সার্কাসের বাঘ খেলানোর চেষ্টা। আর তাতেই এক শ্রেণির পণ্ডিতম্মন্য বাঙালি রামনবমীকেই ব্রাত্য করে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। হাতে ফোড়া হয়েছে? চিন্তা কী! হাত কেটে বাদ দিয়ে দাও— হাতও থাকবে না, ফোড়াও হবে না। রামনবমী আবার বাঙালির কোথায়? ও তো উত্তরের হিন্দিবলয়ের ব্যাপারস্যাপার। বাঙালি সেকুলারদের মধ্যে একটা মজার ব্যাপার আছে। তাঁরা সুবিধেমতো সেকুলার শব্দটার অর্থ দুমড়েমুচড়ে নিয়েছেন। ফলে তাঁদের মুখে ঝাল খেয়ে নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে ভেবে আত্মসুখ পাওয়া লোকজন ভাবছে সেকুলার হতে গেলে কষে হিন্দু ধর্মের নিন্দে করো আর অন্য ধর্মগুলো ‘কী ভাল কী ভাল’ বলে নাকের জলে চোখের হও। ব্যস কেল্লা ফতে!

সব কিছু সুবিধেমতো খোপে পুরে ফেলা ঠিক নয়। তারাদেবী শিবের বুকে বাঁ-পা সামনে রেখে দাঁড়ান, তার মানে তিনি বামপন্থী নন। মা কালীর প্রিয় ফুলের রং লাল, তাঁর সঙ্গে লাল সেলামের সম্পর্ক নেই। তেমনই, কোনও রাজনৈতিক দল কিছু দেবদেবী বেছে নিয়ে সঙ্কীর্ণতার স্বার্থ সিদ্ধি করতে চাইলে, নিজেদের ঐতিহ্য ভুলে যাবেন না। 

রামনবমী উপলক্ষে হাওড়ার রামরাজাতলায় যে রামসীতার পুজো হয়, সেই পরম্পরা ওই রাজনৈতিক দলটির উদ্ভবের চেয়েও প্রাচীন। শুধু সেখানেই বা কেন, পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় অসংখ্য রামমন্দির ছড়িয়ে আছে। বাল্মীকির রামায়ণের মতো বাঙালিরও আছে কৃত্তিবাস ওঝার শ্রীরামপাঁচালী। উত্তরভারতীয় পেটানো চেহারার গোঁফহীন রাম নয়, বাঙালির রাম বেশ শাঁসে-জলে চেহারার এবং বেশ পাকানো গোঁফ সমন্বিত। তাঁর হাতে নেই তির-ধনুক কিংবা অন্য অস্ত্রও।

What Is Ramnavami

বাংলায় রামের পুজো বহু পুরনো। শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্যের উত্তরপুরুষ মথুরেশ গোস্বামীর আমল থেকেই রামনবমী উদ্‌যাপন শুরু হয়। পুজো হয় অনেক গোস্বামী বাড়িতেই। বড়গোস্বামী বাড়িতে এই দিনের পুজোকে বলা হয় ‘রামচন্দ্রের দোল’। দর্শনার্থীরা রঘুনাথের পায়ে আবির দিয়ে পুজো করেন। বাংলায় শালগ্রামরূপে রঘুবীর বা রঘুনাথের পুজো চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কুলদেবতা ছিলেন রঘুবীর। বাংলায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম জনপ্রিয় হওয়ার আগে বহু বাঙালি রামমন্ত্রে দীক্ষাও নিতেন। 

রানি রাসমণি ‘রঘুবীরের রথযাত্রা’-রও আয়োজন করতেন। বিষ্ণুপুর বাঁকুড়ায় রাবণকাটার নাচও তো রামের বিজয় লাভেরই উদ্‌যাপন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথাই যখন উঠল, তখন তাঁর জীবনীতেও এও পাওয়া যায়, তিনি হনুমানভাবে রামচন্দ্রের আরাধনা করতেন। দাস্য ভাবে এই সাধনা করার সময়, তিনি সীতাদেবীর দর্শনও পেয়েছিলেন। আবার বাৎসল্য ভাবের সাধনকালে, তিনি রামলালা অর্থাৎ, বালক শ্রীরামচন্দ্রের একটি ধাতব বিগ্রহ পুজো করতেন। এই মূর্তিতেই তিনি বালক শ্রীরামচন্দ্রকে জীবন্ত চাক্ষুষ করেন। একটু নিজেদের ঐতিহ্যের দিকে তাকান— ‘রামলালা’ মানেই বাবরি মসজিদ বা অযোধ্যার রাম জন্মভূমি নয়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মতো সর্বধর্ম সমন্বয়ী সাধকের প্রেম আর উদারতা মানুষ ভুলে গিয়েছে, সে কারণেই সিউডো-সেকুলারি ফলিয়ে সে বলতে পারছে, রাম-সীতা-হনুমান হিন্দিভাষীদের।

পুরাণ মতে, রাজা সুরথ তাঁর হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাসন্তী পুজো করেন এবং রাবণ বধের আগে শ্রীরামচন্দ্র করেন শারদীয়া দুর্গাপুজো, যা অকাল বোধন নামে পরিচিত। খেয়াল করলে দেখা যাবে, বাসন্তী দুর্গাপুজোর নবমীটিই, অর্থাৎ চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষীয় এই নবমীই রামের জন্মতিথি বা রামনবমী নামে পরিচিত। 

অর্থাৎ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ মাতৃসাধনার দু’টি ঋতু প্রভেদেই জড়িয়ে রয়েছেন শ্রীরাম। কেন? কোনও কোনও গবেষক বলছেন, পাল যুগে বৌদ্ধ ধর্মের যে রমরমা হয়েছিল, তা সর্বতোভাবে খর্ব করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল সেন আমলে। বৌদ্ধ ধর্মকে কোণঠাসা করার জন্যই ধর্মীয় সংযুক্তি হয়েছিল আর্যাবর্তের বৈদিক সংস্কৃতির এবং বঙ্গদেশীয় মাতৃতান্ত্রিক আরাধনার। শারদীয়া ও বাসন্তী দুর্গাপুজো একাত্ম হয়ে যায় শ্রীরামের সঙ্গে। বাঙালি কবি কৃত্তিবাসের রামায়ণে রাম কর্তৃক দেবীকে আরাধনা করার প্রসঙ্গটি সংযুক্ত হয়েছে এই কারণেই। মূল বাল্মীকির রামায়ণে তা ছিল না।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url