আরো গরম বাড়তে পারে | পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতাতে গরম হাওয়া প্রবাহের সম্ভাবনা
আরো গরম বাড়তে পারে | পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতাতে গরম হাওয়া প্রবাহের সম্ভাবনা
স্বাভাবিক বর্ষণবার্তা:
কলকাতা ও নয়াদিল্লি: দারুণ অগ্নিবাণের দুঃসহ জ্বলন কবে কমবে, সেই পরিত্রাহি আর্তির মধ্যে এ বার স্বাভাবিক বর্ষার বার্তা দিল দিল্লির মৌসম ভবন। বর্ষার প্রথম পূর্বাভাসে মঙ্গলবার তারা জানিয়েছে, দেশে এ বার স্বাভাবিক বর্ষণই হবে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, বর্ষা স্বাভাবিক হবে, সে তো দূরের ব্যাপার। আপাতত এই দহনজ্বালায় শান্তিজল পড়বে কবে? পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ শনিবারের আগে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
খাতায়-কলমে তাপপ্রবাহ না-থাক, চৈত্রশেষের তাপে পুড়ছে গাঙ্গেয় বঙ্গ! বর্ধমানে এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। খুব বেশি পিছিয়ে নেই অন্যান্য এবং খাস কলকাতাও। আজ, বুধবার তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলে আবহবিদদের আশঙ্কা। প্রবল তাপ থেকে বাঁচতে বার বার সতর্ক করছে হাওয়া অফিস। তারা জানিয়েছে, বৈশাখেও যে কবে ঝড়বৃষ্টি আসবে, তার কোনও নিশ্চিত খবর নেই। এই পরিস্থিতিতে ছোটদের স্কুল সকালে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। দক্ষিণবঙ্গের মতো ভাজাপোড়া হতে হচ্ছে না ঠিকই, তবে উত্তরবঙ্গেও রোদের তাপ কম নেই। দার্জিলিং, কালিম্পঙেও গরম বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্ব) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অঙ্কের বিচারে তাপপ্রবাহ বলা যাচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু যা গরম পড়েছে, তাতে এটাকে তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি বলা যেতেই পারে। আগামী কয়েক দিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।”
গ্রীষ্মের ঝড়বৃষ্টি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও বর্ষার প্রথম পূর্বাভাসে সারা দেশে ৯৬ শতাংশ বর্ষণের (মোটের উপরে স্বাভাবিক বর্ষা) আশ্বাস দিয়েছে মৌসম ভবন। যদিও আলাদা ভাবে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা কেমন হবে, এ দিন সেটা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি। আবহাওয়া অফিসের বক্তব্য, প্রথম পূর্বাভাসে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি জানানো হয়। এত আগে কোনও রাজ্যের পরিস্থিতি আঁচ করা সম্ভব নয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফের এক দফা পূর্বাভাস দেবে মৌসম ভবন।
মৌসম ভবনের এ দিনের পূর্বাভাস দেখে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও কৃষি মন্ত্রক বলছে, চাষ-আবাদ এবং গ্রামের অর্থনীতি, দুইয়ের পক্ষেই এটি ভাল খবর। স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে গ্রামের অর্থ ব্যবস্থায় কেনাকাটার চাহিদা বাড়তে পারে। সে-ক্ষেত্রে গোটা অর্থ ব্যবস্থাই ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ এমনিতেই মার্চ-এপ্রিলে অকালবৃষ্টির ফলে অনেক রাজ্যে ফসল, বিশেষত গম নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে দাম বাড়ার আশঙ্কাও। তার মধ্যে সোমবার একটি বেসরকারি সংস্থা স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ায় অর্থ ও কৃষি মন্ত্রক উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল।
গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষা আসতে মাস দুয়েক বাকি। তার আগে দহনজ্বালা কী ভাবে জুড়োবে, তা নিয়ে চিন্তিত আমজনতা। এ দিন দক্ষিণবঙ্গে সব থেকে বেশি তাপমাত্রা উঠেছে বর্ধমানে, ৪০ ডিগ্রি। কলকাতা এবং দমদমে যথাক্রমে ৩৮.৬ এবং ৩৯.২ ডিগ্রি। ব্যারাকপুরে ৩৯.৬। দমদম ও ব্যারাকপুর এ দিন পুরুলিয়াকে (৩৮.৭ ডিগ্রি) ছাড়িয়ে গিয়েছে। বীরভূমের শ্রীনিকেতনে এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৪ ডিগ্রি। মালদহে ৩৮.৩।
দহন-দাপট এমনই যে, বিভিন্ন জেলায় বেলা ১১টা বাজতেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। প্রথম পর্বের মূল্যায়ন থাকায় স্কুলপড়ুয়ারা পড়েছে ভীষণ সমস্যায়। অনেকেই স্কুলে পেটব্যথা, বমির মতো উপসর্গের কথা বলছে। নিতান্ত রুটিরুজির দায়ে পথে বেরোনো মানুষজনও অসহনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
উত্তরবঙ্গে কড়া রোদে চা পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ক্ষুদ্র চা-চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “তাপমাত্রা যে-ভাবে অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে চলছে, তাতে উৎপাদন আরও কমছে।” গরমের প্রভাব পড়ছে চাষে। আনাজ, বোরো ধান চাষে জলের অভাব প্রকট। শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন চাষিরা।

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url