২৫শে ডিসেম্বর বড়দিনে সরকারি ছুটি || Christmas on December 25th

২৫শে ডিসেম্বর বড়দিনে সরকারি ছুটি || Christmas on December 25th

 ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন পালিত হয় যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনের স্মরণে। যদিও এই তারিখটি যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে, তবুও আদি খ্রিস্টানরা এই তারিখটিকে তাঁর জন্মতারিখ হিসেবে গ্রহণ করেছিল, যা সম্ভবত নয় মাস পূর্বে যিশুর মেরিতে প্রবেশ করার ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।

আদি খ্রিস্টানদের ধারণা খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে যিশু প্রবেশ করেছিলেন। এই হিসাব অনুযায়ী, ২৫শে ডিসেম্বরকে তাঁর জন্মতারিখ হিসেবে ধরা হয়। 

২৫ ডিসেম্বর কেন বড়দিন পালিত হয়?

২৫শে ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয় বলেই এই দিনটি বড়দিন বা ক্রিসমাস নামে পরিচিত। যদিও বাইবেলে যিশুর সঠিক জন্মতারিখের কোনো উল্লেখ নেই, তবুও ইতিহাস এবং প্রাচীন খ্রিস্টীয় ঐতিহ্য অনুসারে ২৫ ডিসেম্বর দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছে।

এই তারিখটি বেছে নেওয়ার পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে:

১. ধারণা ও জন্মের সময়ের হিসাব (Annunciation and Nativity Calculation):

প্রাচীন খ্রিস্টান পণ্ডিতদের একটি জনপ্রিয় মত অনুসারে, ২৫ মার্চ তারিখে কুমারী মেরীর কাছে দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুর জন্মের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন বলে মনে করা হয় (এই দিনটি 'অ্যানানসিয়েশন' নামে পরিচিত)। এই ২৫ মার্চের ঠিক নয় মাস পরে আসে ২৫ ডিসেম্বর। এই হিসাবের ভিত্তিতেই ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মতারিখ হিসেবে স্থির করা হয়। আবার অনেকে বিশ্বাস করতেন, ২৫ মার্চ তারিখেই যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল এবং প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী, একজন মহাপুরুষ তাঁর জন্ম বা গর্ভধারণের তারিখেই মারা যান।

২. পেগান উৎসবের প্রভাব (Influence of Roman Festivals):

অনেক পণ্ডিত মনে করেন, খ্রিস্টান ধর্ম প্রসারের সুবিধার জন্য রোমান সাম্রাজ্যের প্রচলিত উৎসবগুলির সাথে মিলিয়ে তারিখটি স্থির করা হয়েছিল। রোমে ২৫ ডিসেম্বর তারিখে 'ডাইস নাটালিস সোলিস ইনভিক্টি' (Dies Natalis Solis Invicti) নামে সূর্যের জন্মদিবস বা শীতকালীন সংক্রান্তির (Winter Solstice) উৎসব পালিত হতো। এই দিন থেকে দিন বড় হতে শুরু করে। খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা সম্ভবত এই প্রচলিত উৎসবের সময়টিকে যিশুকে 'জগতের আলো' রূপে তুলে ধরার জন্য বেছে নেন।

৩. ঐতিহাসিক ঘোষণা:

ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে, ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে সর্বপ্রথম ২৫ ডিসেম্বর দিনটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বড়দিন পালন শুরু হয়। এর কয়েক বছর পর, ৩৫৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান পঞ্জিকায় পোপ জুলিয়াস প্রথম (Pope Julius I) ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়।

সুতরাং, ২৫ ডিসেম্বর তারিখটি যিশু খ্রিস্টের প্রকৃত জন্মতারিখ না হলেও, এটি তাঁর জন্মকে উদ্‌যাপন করার জন্য খ্রিস্টানদের দ্বারা স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতীকী দিন।

25 শে ডিসেম্বর কি জন্য বিখ্যাত?

২৫শে ডিসেম্বর দিনটি মূলত নিম্নলিখিত কারণে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত:

১. বড়দিন বা ক্রিসমাস (Christmas):

এটি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এবং সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এই দিনে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্টের (Jesus Christ) জন্মদিন পালন করা হয়। এই কারণে দিনটিকে 'শুভ বড়দিন' বলা হয়।

২. আন্তর্জাতিক গুরুত্ব:

বিশ্বের প্রায় সকল দেশে, খ্রিস্টান ও অ-খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এই দিনটি উৎসবের মেজাজে পালিত হয়। ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, উপহার বিনিময়, আলোকসজ্জা, এবং পারিবারিক ভোজসভার মাধ্যমে এটি একটি বিশ্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

৩. ঐতিহাসিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের তাৎপর্য:

  • বাংলায় এই দিনটিকে 'বড়দিন' বলার একটি কারণ হল, এই সময়ে (শীতকালীন সংক্রান্তির পর) দিন ক্রমশ বড় হতে শুরু করে এবং রাত ছোট হতে থাকে। কিছু অভিধানেও এই দিনটিকে 'শীতকালীন সংক্রান্তি' (Winter Solstice) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

  • অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, রোমানদের প্রাচীন পেগান উৎসব 'ডাইস নাটালিস সোলিস ইনভিক্টি' (Dies Natalis Solis Invicti) বা 'অজেয় সূর্যের জন্মদিবস'-এর সঙ্গে মিল রেখে এই তারিখটি গ্রহণ করা হয়েছিল।

৪. বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের জন্ম ও মৃত্যু:

২৫ ডিসেম্বর তারিখে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জন্ম ও মৃত্যু হয়েছে, যেমন:

  • জন্ম: স্যার আইজ্যাক নিউটন (পদার্থবিদ ও গণিতজ্ঞ), পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য (ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ), মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা)।

  • মৃত্যু: চার্লি চ্যাপলিন (চলচ্চিত্র অভিনেতা), নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (বাঙালি কবি)।

৫. বিশেষ দিবস:

এছাড়াও কিছু দেশে এই দিনটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে পালিত হয়:

  • গুড গভরন্যান্স দিবস (ভারত): ভারতে এই দিনটি সুশাসন দিবস বা গুড গভরন্যান্স দিবস হিসেবে পালিত হয়।

  • কায়েদে আজম দিবস (পাকিস্তান): পাকিস্তানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মদিন উপলক্ষে এই দিনটি 'কায়েদে আজম দিবস' হিসেবে পালিত হয়।

২৫ ডিসেম্বর কে বড়দিন হিসেবে ঘোষণা করেন?

২৫ ডিসেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বড়দিন (ক্রিসমাস) হিসেবে ঘোষণার জন্য নিম্নলিখিত দুজন ব্যক্তির নাম ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়:

১. পোপ জুলিয়াস প্রথম (Pope Julius I):

  • সাধারণত মনে করা হয়, তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ৩৫৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান পঞ্জিকায় ২৫ ডিসেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ছিলেন ৩৩৭ থেকে ৩৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোমের বিশপ (পোপ)। তাঁর এই ঘোষণার পর তারিখটি পশ্চিমা খ্রিস্টানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

২. সম্রাট কনস্টানটাইন (Emperor Constantine):

  • এর আগে, ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের (প্রথম খ্রিস্টান সম্রাট) শাসনকালেই রোমে প্রথম বড়দিন উদযাপিত হয়েছিল। তাঁর সময়েই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে খ্রিস্টান উৎসব হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

সুতরাং, তারিখটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থির ও ঘোষণা করার ক্ষেত্রে পোপ জুলিয়াস প্রথমের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

তবে মনে রাখা ভালো যে, ২৫ ডিসেম্বর তারিখটি যিশুর জন্মের সঠিক তারিখ হিসেবে বাইবেলে উল্লিখিত নয়। খ্রিস্টান পণ্ডিতরা বিভিন্ন গণনা ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে এই তারিখটি নির্ধারণ করেন।

২৫ ডিসেম্বর বড়দিন কেন

২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে "বড়দিন" বলার এবং এই তারিখে ক্রিসমাস উৎসব পালনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যা ধর্মীয় বিশ্বাস, ঐতিহাসিক ঘটনা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের ধারণার সঙ্গে যুক্ত:

১. যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন (ধর্মীয় কারণ)

২৫ ডিসেম্বর তারিখটি খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। এটিই দিনটির প্রধান তাৎপর্য। তবে বাইবেলে যিশুর সঠিক জন্মতারিখের কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই।

এই তারিখটি নির্বাচনের পেছনে দুটি প্রধান তত্ত্ব রয়েছে:

  • মার্চ ২৫-এর সম্পর্ক: প্রাচীন খ্রিস্টানদের মধ্যে একটি বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে যিশু খ্রিস্ট ২৫ মার্চ তারিখে গর্ভে আসেন (ঘোষণা বা Annunciation-এর দিন)। এই তারিখ থেকে ঠিক নয় মাস পর ২৫ ডিসেম্বর আসে, তাই এই দিনটিকে তাঁর জন্মদিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

  • পোপ জুলিয়াস প্রথমের ঘোষণা: ৩৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে পোপ জুলিয়াস প্রথম (Pope Julius I) আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মোৎসব হিসেবে ঘোষণা করেন।

২. কেন "বড়দিন" বলা হয় (বাঙালি প্রেক্ষাপট)

বাংলায় এই উৎসবকে "বড়দিন" বলার পেছনে দুটি ব্যাখ্যা প্রচলিত:

  • দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি: জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, উত্তর গোলার্ধে সাধারণত ২২ বা ২৩ ডিসেম্বর শীতকালীন সংক্রান্তি (Winter Solstice) ঘটে। এর পর থেকেই দিন ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে এবং রাত ছোট হতে থাকে। ২৫ ডিসেম্বর এই দিন বড় হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার খুব কাছাকাছি একটি তারিখ, তাই এই দিনটিকে "বড় দিন" বলা হয়।

  • মর্যাদার দিক থেকে: অনেকে মনে করেন, যিশু খ্রিস্টের মর্যাদা এবং তাঁর প্রচারিত ধর্মের বিশালতার কারণে তাঁর জন্মদিনটি মর্যাদার দিক থেকে "বড় দিন" হিসেবে বিবেচিত হয়।

৩. পেগান উৎসবের প্রভাব (ঐতিহাসিক কারণ)

কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে, খ্রিস্টান ধর্ম প্রসার লাভের সময় এই তারিখটি বেছে নেওয়া হয়। প্রাচীন রোমে ২৫ ডিসেম্বর তারিখে দুটি জনপ্রিয় অ-খ্রিস্টীয় বা পেগান (Pagan) উৎসব পালিত হত:

  • স্যাটার্নালিয়া (Saturnalia): এটি ছিল এক সপ্তাহব্যাপী রোমান উৎসব, যেখানে ভোজ ও উপহার আদান-প্রদান করা হতো।

  • ডাইস নাটালিস সোলিস ইনভিক্টি (Dies Natalis Solis Invicti): এর অর্থ "অজেয় সূর্যের জন্মদিবস"। এটি ছিল শীতকালীন সংক্রান্তি উপলক্ষে সূর্যের পুনর্জন্মের উৎসব।

খ্রিস্টান নেতারা চাননি যে খ্রিস্টানরা এই পেগান উৎসবগুলোতে অংশ নিক। তাই, তাঁরা ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে "খ্রিস্টের জন্ম" (Son of God) উৎসব হিসেবে ঘোষণা করেন, যেন এটি "অজেয় সূর্যের জন্ম" (Sun) উৎসবকে প্রতিস্থাপন করতে পারে।

এই তিনটি কারণের সম্মিলিত প্রভাবেই ২৫ ডিসেম্বর দিনটি বিশ্বজুড়ে এত বড় উৎসব হিসেবে পালিত হয়।

২৫ ডিসেম্বর কার জন্মদিন?

২৫ ডিসেম্বর মূলত খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব বড়দিন (Christmas)। এই দিনটি যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়।

এছাড়াও এই দিনে জন্মগ্রহণকারী কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হলেন:

  • স্যার আইজ্যাক নিউটন: ইংরেজ পদার্থবিদ ও গণিতজ্ঞ।

  • পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য: ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ।

  • মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ: পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গভর্নর জেনারেল।

  • চার্লি চ্যাপলিন: বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ রম্য অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক (যদিও তাঁর মৃত্যুও এই দিনে)।

তবে, প্রধানত ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বের দিক থেকে ২৫ ডিসেম্বর দিনটি যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবেই বিখ্যাত।

২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে ৫টি HD স্ট্যাটাস ইমেজ







বাইবেলে ২৫ ডিসেম্বর কার জন্মদিন?

বাইবেলে (পবিত্র ধর্মগ্রন্থ) ২৫ ডিসেম্বর তারিখে কার জন্মদিন, সে সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ নেই

  • বাইবেলের গসপেল (Gospel) বা সুসমাচারগুলিতে (মথি, মার্ক, লূক, যোহন) যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থানের (বেথলেহেম) এবং জন্মের আশেপাশের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, কিন্তু নির্দিষ্টভাবে তাঁর জন্মতারিখ উল্লেখ করা নেই

  • ঐতিহাসিকরা মনে করেন, খ্রিস্টান ধর্ম প্রসার পাওয়ার অনেক পরে, চতুর্থ শতাব্দীতে (৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে) ২৫ ডিসেম্বর তারিখটি আনুষ্ঠানিকভাবে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন বা বড়দিন হিসেবে উদযাপন শুরু হয়।

এই তারিখটি নির্বাচনের পেছনে প্রধান দুটি কারণ প্রচলিত:

১. ঐতিহাসিক গণনা অনুযায়ী ২৫ মার্চ (Annunciation বা গর্ভধারণের ঘোষণা) থেকে ঠিক নয় মাস পরে ২৫ ডিসেম্বর আসে।

২. প্রাচীন রোমানদের 'সোল ইনভিক্টাস' (Sol Invictus) বা "অজেয় সূর্যের জন্মদিবস" নামক একটি জনপ্রিয় অ-খ্রিস্টীয় উৎসব ২৫ ডিসেম্বর পালিত হত। খ্রিস্টান নেতারা সেই উৎসবকে খ্রিস্টীয় উৎসব দ্বারা প্রতিস্থাপন করার জন্য এই তারিখটি বেছে নিতে পারেন।

খ্রিস্টানরা কেন বড়দিন পালন করে?

খ্রিস্টানরা বড়দিন (Christmas) উদযাপন করে মূলত যিশু খ্রিস্টের জন্মকে স্মরণ এবং ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে। এই উৎসব পালনের প্রধান কারণগুলো হলো:

১. যিশুর জন্ম উদ্‌যাপন (প্রধান কারণ)

খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, যিশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের পুত্র এবং মানবজাতির ত্রাণকর্তা। তাঁর জন্ম একটি অলৌকিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা বাইবেলে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পূর্ণ করে।

  • অবতারের আগমন: খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে, ঈশ্বর স্বয়ং মানব রূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন (incarnation বা অবতার), যা ছিল মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য ঈশ্বরের মহৎ পরিকল্পনার অংশ।

  • মুক্তির বার্তা: যিশুর জন্ম পৃথিবীতে শান্তি, আশা এবং মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে। এই কারণে এই দিনটি আনন্দ এবং উল্লাসের সাথে উদযাপিত হয়।

২. ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রকাশ

বড়দিন ঈশ্বরের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে দেখা হয়। যিশুকে উপহার হিসেবে পৃথিবীতে পাঠানোর মাধ্যমেই ঈশ্বর তাঁর ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন:

  • 'আলো'র আগমন: যিশুকে প্রায়শই 'জগতের আলো' বলা হয়। ২৫ ডিসেম্বর দিনটি শীতকালীন সংক্রান্তির (Winter Solstice) কাছাকাছি, যখন দিনের দৈর্ঘ্য আবার বাড়তে শুরু করে। প্রতীকীভাবে, এই তারিখটি অন্ধকার দূর করে আলোর (যিশু খ্রিস্ট) আগমনের সূচনা করে।

  • উপহারের অর্থ: বড়দিনে উপহার আদান-প্রদান করা হয়, যা তিনটি জ্ঞানী ব্যক্তির (Magi) দ্বারা শিশু যিশুকে দেওয়া সোনার, লোবান (incense) এবং গন্ধরস (myrrh)-এর উপহারকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং দয়ার প্রতীক।

৩. আধ্যাত্মিক পুনরুজ্জীবন

বড়দিন খ্রিস্টানদের জন্য তাদের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের প্রতি নতুন করে মনোযোগ দেওয়ার একটি সময়।

  • গির্জার উপাসনা: এই দিনে বিশেষ ধর্মীয় সভা এবং মাস (Mass/Communion) অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে যিশুর জন্মকাহিনী পাঠ করা হয় এবং তাঁকে স্মরণ করে প্রার্থনা করা হয়।

সংক্ষেপে, খ্রিস্টানদের কাছে বড়দিন কেবল একটি বার্ষিক ছুটি নয়, এটি ঈশ্বরের মানবপ্রেম, আশা এবং পরিত্রাণের প্রতিশ্রুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মরণোৎসব।

25 ডিসেম্বর বড়দিনের দক্ষিণ গোলার্ধে গরম না ঠান্ডা

২৫ ডিসেম্বর তারিখে দক্ষিণ গোলার্ধে সাধারণত গরম থাকে।

এর কারণ হলো:

  • ঋতু পরিবর্তন: আমাদের পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরার সময় কিছুটা হেলে থাকে। ফলে যখন উত্তর গোলার্ধে (যেখানে ভারত, বাংলাদেশ, ইউরোপ, এবং উত্তর আমেরিকা অবস্থিত) শীতকাল চলে (ডিসেম্বর মাস), ঠিক তখনই দক্ষিণ গোলার্ধে (যেমন অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি) চলে গ্রীষ্মকাল

  • দক্ষিণ অয়নান্ত (Summer Solstice): ডিসেম্বর মাসের ২১ বা ২২ তারিখের কাছাকাছি দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সরাসরি পড়ে, যাকে দক্ষিণ অয়নান্ত বলা হয়। ২৫ ডিসেম্বর এই সময়ের খুব কাছাকাছি হওয়ায় সেখানে গ্রীষ্মের আবহাওয়া থাকে এবং তাপমাত্রা সাধারণত বেশ উচ্চ হয়।

ফলে, অস্ট্রেলিয়া বা ব্রাজিলের মতো দেশগুলোতে ক্রিসমাসের দিন মানুষ সৈকতে সাঁতার কাটে এবং গরমের মধ্যে উৎসব করে। এটি উত্তর গোলার্ধের ক্রিসমাস, যেখানে তুষারপাত ও ঠান্ডা থাকে, তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url