Kali Puja Amavasya Time 2025 | কালী পূজা কেন পালন করা হয়? | কালী পূজা আর দীপাবলি কি এক?
Kali Puja Amavasya Time 2025 | কালী পূজা কেন পালন করা হয়? | কালী পূজা আর দীপাবলি কি এক?
কালী পূজা অমাবস্যার সময় ২০২৫
২০২৫ সালে কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে (যা কালীপুজো বা দীপাবলির দিন) কালী পূজা হবে ২০ অক্টোবর, সোমবার।
অমাবস্যা তিথি শুরু এবং শেষের সময় নিচে দেওয়া হলো (স্থানভেদে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে):
বিবরণ | তারিখ ও সময় (ভারতীয় প্রমাণ সময় অনুযায়ী) |
অমাবস্যা তিথি শুরু | ২০ অক্টোবর, সোমবার, বিকাল ৩:৪৪ মিনিট (3:44 PM) |
অমাবস্যা তিথি শেষ | ২১ অক্টোবর, মঙ্গলবার, বিকাল ৫:৫৪ মিনিট (5:54 PM) |
কালীপূজার নিশীথ কাল | ২০ অক্টোবর রাত ১১:৪১ মিনিট থেকে ২১ অক্টোবর রাত ১২:৩১ মিনিট পর্যন্ত (মোট সময় প্রায় ৫০-৫১ মিনিট) |
সাধারণত, কালীপুজো রাতে নিশীথ কালের মধ্যেই করা হয়।
(নোট: ফলহারিণী কালীপূজা জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে (২৬ মে, ২০২৫) পালিত হবে, কিন্তু কার্তিক মাসের অমাবস্যার এই তারিখটিই প্রধান শ্যামা বা কালী পূজা বা দীপাবলির দিন হিসেবে পরিচিত।)
কালী পূজা কেন পালন করা হয়?
কালী পূজা মূলত হিন্দু দেবী কালী-র আরাধনা। এই উৎসব পালনের প্রধান কারণ ও তাৎপর্যগুলি হলো:
১. অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা
পৌরাণিক কারণ: সবচেয়ে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, একবার রক্তবীজ নামের এক ভয়ঙ্কর অসুর তার রক্ত থেকে অসংখ্য নতুন অসুর সৃষ্টি করতে পারত। যখন দেবতারা তাকে বধ করতে ব্যর্থ হন, তখন দেবী দুর্গা তাঁর ক্রোধ থেকে কালী রূপে আবির্ভূত হন। মা কালী রক্তবীজের সমস্ত রক্ত পান করে এবং অসুরকে বধ করে পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনেন।
তাৎপর্য: কালীপূজা অশুভ শক্তি, ভয়, অন্ধকার ও ধ্বংসের ওপর শুভ শক্তি, সাহস ও ন্যায়ের জয়কে স্মরণ করায়। মা কালী হলেন সেই শক্তি, যিনি সমস্ত নেতিবাচকতা এবং অভ্যন্তরীণ অহংকার (Ego) বিনাশ করেন।
২. মোক্ষ ও মুক্তি লাভের জন্য
মা কালী দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবী এবং তন্ত্র মতে তাঁকে পরম ব্রহ্ম বা মহাকালী রূপে পূজা করা হয়। তিনি সময় (কাল) ও পরিবর্তন-এর প্রতীক।
ভক্তরা বিশ্বাস করেন, মা কালীর উপাসনা অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞান ও মোক্ষ (মুক্তি) প্রদান করে। তিনি তাঁর ভক্তদের জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্তি দেন এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে চালিত করেন।
৩. রক্ষাকর্ত্রী ও মাতৃরূপ
মা কালীর রূপ ভয়ংকর হলেও তিনি তাঁর ভক্তদের কাছে পরম স্নেহময়ী মাতা। তিনি ভক্তদের সব বিপদ, রোগ ও কষ্ট থেকে রক্ষা করেন।
কালীপূজা সেই মাতৃশক্তির পূজা, যিনি প্রয়োজনে কঠোর হলেও সন্তানদের প্রতি অপার করুণা ও ভালোবাসা রাখেন।
৪. দীপাবলির সঙ্গে সংযোগ
ভারতের পূর্বাঞ্চলে (বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা) কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে যখন উত্তর ভারতে দীপাবলি উপলক্ষে লক্ষ্মী পূজা হয়, তখন এই রাতেই কালী পূজা বা শ্যামা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
অমাবস্যার গভীর অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে (দীপাবলির অংশ হিসেবে) এই দেবীর পূজা করা হয়, যিনি সেই অন্ধকারকে দূর করে জ্ঞান ও শক্তির আলো দান করেন।
সংক্ষেপে, কালী পূজা হলো অশুভ শক্তির বিনাশকারী এবং ভক্তদের মুক্তি ও শক্তি প্রদানকারী মাতৃরূপা দেবীর আরাধনা। এটি সাহস, আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও কল্যাণের প্রতীক।
কালী পূজা আর দীপাবলি কি এক?
না, কালী পূজা এবং দীপাবলি এক নয়, তবে এগুলি একই তিথিতে এবং একে অপরের পরিপূরক উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
আসলে, দীপাবলি হলো পাঁচ দিনব্যাপী একটি বৃহত্তর উৎসব, যার প্রধান দিনটি হলো কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথি (অর্থাৎ তৃতীয় দিন)। এই অমাবস্যার রাতেই মূলত দুটি ভিন্ন পূজা করা হয়:
১. দীপাবলি (Diwali) বা লক্ষ্মী পূজা
কোথায় প্রধান: উত্তর ভারত, পশ্চিম ভারত এবং দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে এটি প্রধান।
কার পূজা: এই দিনে প্রধানত দেবী লক্ষ্মী (ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী) এবং ভগবান গণেশের (শুভ সূচনা ও বাধা দূরকারী) পূজা করা হয়।
তাৎপর্য: এটি আলোর উৎসব নামে পরিচিত। এই দিনে ভগবান রাম ১৪ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় ফিরে আসেন, আর তাঁকে স্বাগত জানাতে অযোধ্যার মানুষ ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়েছিল—এই বিশ্বাস থেকেই দীপাবলির উৎপত্তি। এটি আলোর দ্বারা অন্ধকারের ওপর জয়, জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞতার ওপর জয় এবং শুভ সূচনা-র প্রতীক।
২. কালী পূজা (Kali Puja) বা শ্যামা পূজা
কোথায় প্রধান: প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা এবং ওড়িশার কিছু অঞ্চলে এই পূজা প্রধান।
কার পূজা: এই দিনে দেবী কালী-র (দুর্গার এক উগ্র রূপ, যিনি অশুভ শক্তির বিনাশকারী) পূজা করা হয়।
তাৎপর্য: এই পূজা মা কালীর অশুভ বিনাশ এবং ভক্তদের মুক্তি ও সাহস দানের প্রতীক। এটি রাক্ষস রক্তবীজকে বধ করে পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনার পৌরাণিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। এটিও অমাবস্যার গভীর অন্ধকারে অনুষ্ঠিত হয়।
মূল পার্থক্য সংক্ষেপে:
বৈশিষ্ট্য | কালী পূজা (শ্যামা পূজা) | দীপাবলি (লক্ষ্মী পূজা) |
আরাধ্য দেবী | মা কালী (শক্তির দেবী) | দেবী লক্ষ্মী ও ভগবান গণেশ (ধন ও সমৃদ্ধির দেবী) |
প্রধান অঞ্চল | পূর্ব ভারত (পশ্চিমবঙ্গ, আসাম) | উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারত |
মূল বিশ্বাস | অশুভ শক্তির বিনাশ ও মোক্ষ লাভ। | আলো দ্বারা অন্ধকারের ওপর জয় ও সমৃদ্ধি লাভ। |
সুতরাং, অমাবস্যা তিথিটি এক, কিন্তু উৎসব ও পূজার ধরণ এবং প্রধান দেবী ভিন্ন। বাঙালিরা এই একই রাতে একদিকে যেমন কালী পূজা করেন, তেমনই ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে বা মোমবাতি দিয়ে দীপাবলির আলোকসজ্জাও করেন।
ধনতেরাস কবে 2025? | ধনতেরাস শুভ মুহুর্ত ও পূজার সময়
২০২৫ সালে ধনতেরাস (Dhanteras) বা ধনত্রয়োদশী পালিত হবে শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে।
ধনতেরাসের দিন সন্ধ্যাবেলা প্রদোষ কালে মা লক্ষ্মী, কুবের এবং ধন্বন্তরীর পূজা করা হয়।
নিচে ধনতেরাস পূজা এবং শুভ মুহূর্তের বিস্তারিত সময় দেওয়া হলো:
ধনতেরাস ২০২৫ শুভ মুহূর্ত ও পূজার সময়
বিবরণ | সময় (ভারতীয় সময়) |
ধনতেরাস তারিখ | শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ |
ত্রয়োদশী তিথি শুরু | ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, দুপুর ১২:১৮ মিনিট থেকে |
ত্রয়োদশী তিথি শেষ | ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, দুপুর ০১:৫১ মিনিট পর্যন্ত |
ধনতেরাস পূজা শুভ মুহূর্ত | সন্ধ্যা ০৭:১৬ মিনিট থেকে রাত ০৮:২০ মিনিট পর্যন্ত |
মোট সময়কাল | ১ ঘণ্টা ৪ মিনিট |
গুরুত্বপূর্ণ কাল
প্রদোষ কাল: এই সময়টি ধনতেরাস পূজার জন্য সবচেয়ে শুভ বলে বিবেচিত।
সময়: সন্ধ্যা ০৫:৪৮ মিনিট থেকে রাত ০৮:২০ মিনিট পর্যন্ত।
বৃষভ কাল (স্থির লগ্ন): লক্ষ্মী পূজার জন্য এটি একটি অত্যন্ত শুভ সময়, কারণ এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই স্থির লগ্নে পূজা করলে লক্ষ্মী ঘরে স্থায়ী হন।
সময়: সন্ধ্যা ০৭:১৬ মিনিট থেকে রাত ০৯:১১ মিনিট পর্যন্ত।
কলকাতার জন্য নির্দিষ্ট পূজার সময়
(স্থানীয় সময়ের সামান্য তারতম্য হতে পারে)
ধনতেরাস পূজা মুহূর্ত: সন্ধ্যা ০৬:৪১ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ০৭:৩৮ মিনিট পর্যন্ত।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url