Ranna Puja Hindu festival: কবে পালিত হয় রান্না পুজো?


হিন্দুদের বারো মাসে তের পার্বণ। তার মধ্যে একটি ঐতিহ্যপূর্ণ পার্বণ হল অরন্ধন (Arandhan) বা রান্না পুজো (Ranna Pujo)। ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া এই নিয়মই এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য। মনসা পুজোর (Manasa Puja) অবিচ্ছেদ্য অংশ এই অরন্ধন উৎসব। হেঁশেলের একস্থানে পরিষ্কার করে ফণিমনসা কিংবা শালুক গাছের ডাল সাজিয়ে মনসার ঘট সাজিয়ে বিশেষ পুজো করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর (Vishwakarma Puja) আগের দিন প্রায় সারারাত জুড়ে চলে রান্নাবান্নার চরম ব্যস্ততা। 

বছরে দু'বার অরন্ধন উৎসব পালিত হয়। একটি, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে শিলনোড়া পুজোর দিন। আরেকটি, ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর দিন। অনেকে আবার উনুন পুজো বা গৃহ দেবতার পুজো হিসাবে মনে করেন এই উৎসবকে। এই দুই দিন বাড়িতে উনুন জ্বালানোর নিয়ম নেই। তাই আগের দিন রান্না করে সেই বাসি খাবার খাওয়ার রীতি রয়েছে অরন্ধনে।

রান্না পুজো সাধারণত বছরে দু'বার পালন করা হয়: প্রথমত, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে এবং দ্বিতীয়ত, ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর দিনে। ভাদ্রে সংক্রান্তির দিন রান্না পুজো অনুষ্ঠিত হয়, যাকে অনেকে 'বুড়ো অরন্ধন' বা 'উনুন পূজা' বলে থাকেন। এই দিন রাতে রান্না করে পরের দিন অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তিতে সেই খাবার খাওয়া হয়। 

কবে পালিত হয় রান্না পুজো? 

  • মাঘ মাসে: শীতলষষ্ঠীর দিন।
  • ভাদ্র মাসে: ভাদ্র সংক্রান্তিতে।

কীভাবে পালন করা হয়?

  • ভাদ্র সংক্রান্তির আগের রাতে উনুনে বিভিন্ন পদ রান্না করা হয়। 
  • এই খাবারগুলি পরের দিন ভাদ্র সংক্রান্তিতে অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে খাওয়া হয়। 
  • এই কারণে ওই দিন উনুন ধরা বা ছোঁয়া হয় না, অর্থাৎ রান্না করা হয় না।

ভাদ্র সংক্রান্তির আগের দিন উনুনকে পুজো করা হবে ৷ তার পর সারারাত তাতে রান্না করা হবে কচুর শাক, চালকুমড়োর ঘণ্ট, মটর ডাল এবং চালতার টক ৷ সঙ্গে ইলিশ ও চিংড়ির পদ ৷ ভাত রান্না করে সারারাত জল ঢেলে ভিজিয়ে রাখা হবে ৷ কোনও খাবারেই পেঁয়াজ রসুন দেওয়া হবে না ৷ রান্নার পর ফ্রিজেও তোলা হবে না ৷ পান্তাভাত-সহ সব রান্না খাওয়া হবে পর দিন, অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তিতে বিশ্বকর্মা পুজোতে ৷ সে দিন উনুন ধরা বা ছোঁওয়া যাবে না ৷ যেমন উনুন, পড়ে থাকবে তেমনই ৷ তার পরের দিন উনুন আবার ফিরবে চেনা ব্যস্ততায় ৷ এরই নাম রান্নাপুজো বা অরন্ধন। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিনই এটি পালিত হওয়ার নিয়ম।
ভাদ্র সংক্রান্তির আগের দিন উনুনকে পুজো করা হবে ৷ তার পর সারারাত তাতে রান্না করা হবে কচুর শাক, চালকুমড়োর ঘণ্ট, মটর ডাল এবং চালতার টক ৷ সঙ্গে ইলিশ ও চিংড়ির পদ ৷ ভাত রান্না করে সারারাত জল ঢেলে ভিজিয়ে রাখা হবে ৷ কোনও খাবারেই পেঁয়াজ রসুন দেওয়া হবে না ৷ রান্নার পর ফ্রিজেও তোলা হবে না ৷ পান্তাভাত-সহ সব রান্না খাওয়া হবে পর দিন, অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তিতে বিশ্বকর্মা পুজোতে ৷ সে দিন উনুন ধরা বা ছোঁওয়া যাবে না ৷ যেমন উনুন, পড়ে থাকবে তেমনই ৷ তার পরের দিন উনুন আবার ফিরবে চেনা ব্যস্ততায় ৷ এরই নাম রান্নাপুজো বা অরন্ধন। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিনই এটি পালিত হওয়ার নিয়ম।
রান্না পুজো বা অরন্ধন একটি ঐতিহ্যবাহী হিন্দু উৎসব, যা মূলত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হয়। এই উৎসবে পূজার আগের দিন রাতে খাবার রান্না করা হয় এবং পরদিন সেই বাসি খাবার খাওয়া হয়। এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো উনুনের পূজা করা, কারণ এই উৎসবে উনুন জ্বালানো হয় না। সাধারণত ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি বা বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন এই পুজো করা হয়। 

কখন পালিত হয়?

  • ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি বা বিশ্বকর্মা পুজোর ঠিক আগের দিন এই উৎসব পালিত হয়।
  • এছাড়াও, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতেও অরন্ধন উৎসব পালিত হয়। 

কীভাবে পালিত হয়?

  • এই উৎসবের মূল রীতি হলো "অরন্ধন", অর্থাৎ সেদিন (পূজার দিন) রান্না করা হয় না।
  • তার আগের রাতে উনুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার রান্না করা হয় এবং পরের দিন সেগুলো খাওয়া হয়।
  • রান্না পুজোতে গৃহদেবতা ও উনুনের পূজা করা হয়।
  • এই উৎসবে আলু, কুমড়ো, বেগুন, নারকেল, পটল, ভাজা, ডাল, শাক, মাছ ইত্যাদি নানা ধরণের পদ রান্না করার রীতি আছে। 

রান্না পুজো কেন করা হয়? জেনে নিন আসল কারণ

রান্না পুজোর মূল কারণ হলো সর্পদেবী মনসার আরাধনা করা। এটি মূলত একটি লৌকিক উৎসব যা পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে পালিত হয়। এটি বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন, অর্থাৎ ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়।

এখানে এই পুজোর মূল কারণগুলো দেওয়া হলো:

১. মনসা দেবীর পূজা

বর্ষাকালে সাপ এবং অন্যান্য বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং পরিবারের মঙ্গল কামনায় সর্পদেবী মনসার পূজা করা হয়। রান্নাঘর এবং উনুনকে মনসার প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়, কারণ এই জায়গাগুলো প্রায়শই পোকামাকড় বা সাপের আশ্রয়স্থল হয়ে থাকে।

২. অরন্ধন উৎসব

এই পুজোর প্রধান রীতি হলো 'অরন্ধন'। অর্থাৎ পুজোর দিন উনুনে কোনো রান্না করা হয় না। পুজোর আগের রাতে বিভিন্ন ধরনের পদ রান্না করে রাখা হয়, এবং পুজোর দিন সেই বাসি খাবারগুলোই সবাই মিলে খায়। তাই এই উৎসবকে 'ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া' বলেও অভিহিত করা হয়।

৩. গৃহদেবতা ও উনুনের পূজা

রান্না পুজোকে অনেকে উনুন পুজো বা গৃহদেবতার পুজো হিসেবেও পালন করেন। এতে সারা বছর ধরে ব্যবহৃত উনুনকে বিশ্রাম দেওয়া হয় এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এই দিন নতুন করে উনুন পরিষ্কার করে আলপনা দেওয়া হয় এবং তা পূজা করা হয়।

সব মিলিয়ে, রান্না পুজো হলো সর্পদেবী মনসার আশীর্বাদ লাভের জন্য এবং পরিবারের মঙ্গল ও সুস্থতা কামনার জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এটি বাঙালি সংস্কৃতির এক সুন্দর অংশ, যা গ্রামীণ জীবন ও বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে।

রান্না পুজো তে কোন কোন রান্না গুলো করা হয়

রান্না পুজোয় মূলত নানা ধরনের নিরামিষ রান্না করা হয়, যা পরের দিন বাসি খাওয়া হয়। এই রান্নার পদগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে সেগুলো এক রাত বাসি থাকার পরও নষ্ট না হয়।

প্রধান রান্নার পদ


রান্না পুজোর জন্য কিছু জনপ্রিয় পদ নিচে দেওয়া হলো:

  • পান্তা ভাত: এটি একটি প্রধান পদ। আগের রাতে রান্না করা ভাতে জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয় এবং পরের দিন সেই বাসি পান্তা খাওয়া হয়।

  • নারকেলের নানা পদ: নারকেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পদ তৈরি করা হয়, যেমন - নারকেলের লুচি, নারকেলের বরফি, নারকেলের চন্দ্রপুলি, ইত্যাদি।

  • সবজি: বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না করা হয়, যেমন - লাউ শাক, কুমড়ো, পটলের তরকারি, আলু ভাজা, বেগুন ভাজা, ডাল ইত্যাদি।

  • মিষ্টি: মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন - মিষ্টি লুচি, রাবড়ি, সুজির পায়েস ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

  • অন্যান্য পদ: এই তালিকায় আরও আছে আলু পোস্ত, আলু সেদ্ধ, বেগুন পোড়া, এবং ডাল সেদ্ধ

মনে রাখবেন, এই দিনে রান্না করা খাবার পরের দিন ঠান্ডা অবস্থায় খাওয়া হয়। এই প্রথাটি মূলত মা মনসার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এবং উনুনকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য পালন করা হয়।

কত রকম পদ রান্না করা হয়?

ভালো রান্না করতে হবে কিন্তু এসময়ে ভালো কি পাওয়া যাবে? নদীর ইলিশ, বাড়ির চালে বর্ষার জলে ফনফনিয়ে ওথা চাল্কুমড়ো, ঝোপেঝাড়ে বনেবাদাড়ে থাকা কচুর লতি, পুকুরপাড়ে চালতাভারে ঝুলে পড়া গাছ থেকে কেটে আনা চালতার, নারকেল গাছ থেকে ঝরে পড়া নারকেল আর ঘরে থাকা খেসারির ডাল। তাই রান্নাপুহোর খাদ্যতালিকা-

১. ভাত

২মুগ আর খেসারি ডাল

৩. ইলিশ সমেত অনেকরকম ভাজা

৪. নারকেলবাটা দিয়ে কচুর মুখী

৫. নারকেল্কুড়ো দিয়ে চালকুমড়োর তরকারি

৬. ইলিশের তেল ঝাল

৭. সর্ষে-ইলিশ

৮. শেষ পাতে চালতার অম্বল।

যদিও এখন বেশিরভাগ অঞ্চলে আর না আছে বর্ষায় উনুন ভেঙে যাওয়া, না আছে বাড়ির আশেপাশে কচুর মুখী। তবুও রান্নাপুজোর সেই প্রচলন এখনো চলছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url