Ranna Puja Hindu festival: কবে পালিত হয় রান্না পুজো?
বছরে দু'বার অরন্ধন উৎসব পালিত হয়। একটি, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে শিলনোড়া পুজোর দিন। আরেকটি, ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর দিন। অনেকে আবার উনুন পুজো বা গৃহ দেবতার পুজো হিসাবে মনে করেন এই উৎসবকে। এই দুই দিন বাড়িতে উনুন জ্বালানোর নিয়ম নেই। তাই আগের দিন রান্না করে সেই বাসি খাবার খাওয়ার রীতি রয়েছে অরন্ধনে।
রান্না পুজো সাধারণত বছরে দু'বার পালন করা হয়: প্রথমত, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে এবং দ্বিতীয়ত, ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর দিনে। ভাদ্রে সংক্রান্তির দিন রান্না পুজো অনুষ্ঠিত হয়, যাকে অনেকে 'বুড়ো অরন্ধন' বা 'উনুন পূজা' বলে থাকেন। এই দিন রাতে রান্না করে পরের দিন অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তিতে সেই খাবার খাওয়া হয়।
কবে পালিত হয় রান্না পুজো?
- মাঘ মাসে: শীতলষষ্ঠীর দিন।
- ভাদ্র মাসে: ভাদ্র সংক্রান্তিতে।
কীভাবে পালন করা হয়?
- ভাদ্র সংক্রান্তির আগের রাতে উনুনে বিভিন্ন পদ রান্না করা হয়।
- এই খাবারগুলি পরের দিন ভাদ্র সংক্রান্তিতে অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে খাওয়া হয়।
- এই কারণে ওই দিন উনুন ধরা বা ছোঁয়া হয় না, অর্থাৎ রান্না করা হয় না।
কখন পালিত হয়?
- ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি বা বিশ্বকর্মা পুজোর ঠিক আগের দিন এই উৎসব পালিত হয়।
- এছাড়াও, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতেও অরন্ধন উৎসব পালিত হয়।
কীভাবে পালিত হয়?
- এই উৎসবের মূল রীতি হলো "অরন্ধন", অর্থাৎ সেদিন (পূজার দিন) রান্না করা হয় না।
- তার আগের রাতে উনুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার রান্না করা হয় এবং পরের দিন সেগুলো খাওয়া হয়।
- রান্না পুজোতে গৃহদেবতা ও উনুনের পূজা করা হয়।
- এই উৎসবে আলু, কুমড়ো, বেগুন, নারকেল, পটল, ভাজা, ডাল, শাক, মাছ ইত্যাদি নানা ধরণের পদ রান্না করার রীতি আছে।
রান্না পুজো কেন করা হয়? জেনে নিন আসল কারণ
রান্না পুজোর মূল কারণ হলো সর্পদেবী মনসার আরাধনা করা। এটি মূলত একটি লৌকিক উৎসব যা পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে পালিত হয়। এটি বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন, অর্থাৎ ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়।
এখানে এই পুজোর মূল কারণগুলো দেওয়া হলো:
বর্ষাকালে সাপ এবং অন্যান্য বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং পরিবারের মঙ্গল কামনায় সর্পদেবী মনসার পূজা করা হয়। রান্নাঘর এবং উনুনকে মনসার প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়, কারণ এই জায়গাগুলো প্রায়শই পোকামাকড় বা সাপের আশ্রয়স্থল হয়ে থাকে।
এই পুজোর প্রধান রীতি হলো 'অরন্ধন'। অর্থাৎ পুজোর দিন উনুনে কোনো রান্না করা হয় না। পুজোর আগের রাতে বিভিন্ন ধরনের পদ রান্না করে রাখা হয়, এবং পুজোর দিন সেই বাসি খাবারগুলোই সবাই মিলে খায়। তাই এই উৎসবকে 'ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া' বলেও অভিহিত করা হয়।
রান্না পুজোকে অনেকে উনুন পুজো বা গৃহদেবতার পুজো হিসেবেও পালন করেন। এতে সারা বছর ধরে ব্যবহৃত উনুনকে বিশ্রাম দেওয়া হয় এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এই দিন নতুন করে উনুন পরিষ্কার করে আলপনা দেওয়া হয় এবং তা পূজা করা হয়।
সব মিলিয়ে, রান্না পুজো হলো সর্পদেবী মনসার আশীর্বাদ লাভের জন্য এবং পরিবারের মঙ্গল ও সুস্থতা কামনার জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এটি বাঙালি সংস্কৃতির এক সুন্দর অংশ, যা গ্রামীণ জীবন ও বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে।
রান্না পুজো তে কোন কোন রান্না গুলো করা হয়
রান্না পুজোয় মূলত নানা ধরনের নিরামিষ রান্না করা হয়, যা পরের দিন বাসি খাওয়া হয়। এই রান্নার পদগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে সেগুলো এক রাত বাসি থাকার পরও নষ্ট না হয়।
প্রধান রান্নার পদ
রান্না পুজোর জন্য কিছু জনপ্রিয় পদ নিচে দেওয়া হলো:
পান্তা ভাত: এটি একটি প্রধান পদ। আগের রাতে রান্না করা ভাতে জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয় এবং পরের দিন সেই বাসি পান্তা খাওয়া হয়।
নারকেলের নানা পদ: নারকেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পদ তৈরি করা হয়, যেমন - নারকেলের লুচি, নারকেলের বরফি, নারকেলের চন্দ্রপুলি, ইত্যাদি।
সবজি: বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না করা হয়, যেমন - লাউ শাক, কুমড়ো, পটলের তরকারি, আলু ভাজা, বেগুন ভাজা, ডাল ইত্যাদি।
মিষ্টি: মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন - মিষ্টি লুচি, রাবড়ি, সুজির পায়েস ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
অন্যান্য পদ: এই তালিকায় আরও আছে আলু পোস্ত, আলু সেদ্ধ, বেগুন পোড়া, এবং ডাল সেদ্ধ।
মনে রাখবেন, এই দিনে রান্না করা খাবার পরের দিন ঠান্ডা অবস্থায় খাওয়া হয়। এই প্রথাটি মূলত মা মনসার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এবং উনুনকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য পালন করা হয়।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url