সরস্বতী পূজা ২০২৬: তারিখ, মুহুর্ত, তাৎপর্য, আচার-অনুষ্ঠান এবং উদযাপন
সরস্বতী পূজা ২০২৬: তারিখ, মুহুর্ত, তাৎপর্য, আচার-অনুষ্ঠান এবং উদযাপন
আপনার অনুরোধ অনুসারে ২০২৬ সালের সরস্বতী পূজা বা বসন্ত পঞ্চমী সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
🌼 সরস্বতী পূজা ২০২৬: তারিখ, মুহুর্ত, তাৎপর্য এবং আচার-অনুষ্ঠান
সরস্বতী পূজা, যা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত, বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীর আরাধনার একটি প্রধান উৎসব। এই দিন থেকেই বসন্ত ঋতুর আগমন শুরু হয়।
১. তারিখ ও শুভ মুহুর্ত (Date & Muhurat)
২০২৬ সালে সরস্বতী পূজা শুক্রবার, ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
| বিবরণ | তিথি ও সময় |
| সরস্বতী পূজা (বসন্ত পঞ্চমী) তারিখ | ২৩ জানুয়ারি, ২০২৬ (শুক্রবার) |
| পঞ্চমী তিথি শুরু | ২৩ জানুয়ারি, ২০২৬, ভোর ২:২৮ মিনিট থেকে |
| পঞ্চমী তিথি সমাপ্ত | ২৪ জানুয়ারি, ২০২৬, ভোর ১:৪৬ মিনিট পর্যন্ত |
| পূজার শুভ মুহুর্ত | ২৩ জানুয়ারি, ২০২৬, সকাল ৭:১৩ মিনিট থেকে দুপুর ১২:৩৩ মিনিট পর্যন্ত |
| সময়কাল | ০৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট (প্রায়) |
দ্রষ্টব্য: পূজার সঠিক সময় অঞ্চলভেদে সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। স্থানীয় পঞ্জিকা অনুসারে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উত্তম।
২. তাৎপর্য (Significance)
সরস্বতী পূজা মূলত মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পালিত হয়। এর বিশেষ তাৎপর্যগুলি হলো:
জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী: দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞান, বিদ্যা, সঙ্গীত, শিল্পকলা এবং সংস্কৃতির দেবী। এই দিনে তাঁর আরাধনা করলে বিদ্যার্থী ও শিল্পীরা জ্ঞানের আশীর্বাদ লাভ করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
বসন্ত ঋতুর আগমন: এই তিথিটি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত, যা শীতের শেষ এবং বসন্ত ঋতুর সূচনা করে। প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে ওঠে।
অব্যবহৃত মুহুর্ত (Abujha Muhurat): হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে বসন্ত পঞ্চমী একটি 'অব্যবহৃত মুহুর্ত' বা স্বয়ংসিদ্ধ মুহুর্ত। এই দিনে যেকোনো শুভ কাজ (যেমন - গৃহ প্রবেশ, নতুন ব্যবসা শুরু, বিবাহ ইত্যাদি) করার জন্য আলাদা করে কোনো শুভ সময় দেখার প্রয়োজন হয় না।
হাতেখড়ি বা বিদ্যারম্ভ: এই শুভ দিনে ছোট শিশুদের হাতেখড়ি বা বিদ্যারম্ভ করানো হয়, যা তাদের শিক্ষার জগতে প্রথম পদক্ষেপ।
৩. আচার-অনুষ্ঠান ও উদযাপন (Rituals & Celebrations)
সরস্বতী পূজার প্রধান আচার ও পালনের পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপ:
আচার-অনুষ্ঠান
স্নান ও প্রস্তুতি: পূজার দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হয়। মা সরস্বতীর প্রিয় রঙ হলুদ বা সাদা রঙের পোশাক পরা শুভ বলে মনে করা হয়।
পূজা মণ্ডপ স্থাপন: একটি পরিষ্কার স্থানে হলুদ বা সাদা বস্ত্র বিছিয়ে দেবী সরস্বতীর মূর্তি বা ছবি স্থাপন করা হয়। দেবীর সামনে বই-খাতা, পেন, বাদ্যযন্ত্র (যেমন বীণা) এবং শিল্পকলার সামগ্রী রাখা হয়।
পূজা ও অঞ্জলি: সঠিক শাস্ত্রীয় বিধান মেনে পুরোহিতের মাধ্যমে অথবা ভক্তরা নিজেরাই দেবীর পূজা করেন। এরপর দেবীর উদ্দেশ্যে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করা হয়।
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রের একটি অংশ: ওঁ জয় জয় দেবী চরাচরসারে, কুচযুগ-শোভিত মুক্তাহারে। বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে।। (ভক্তরা সাধারণত এই মন্ত্র পাঠ করে অঞ্জলি দেয়।)
কুল না খাওয়া: বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি প্রথা আছে যে, সরস্বতী পূজার আগে পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা কুল বা টক জাতীয় ফল খায় না। পূজার দিন দেবীকে কুল উৎসর্গ করার পরেই তা গ্রহণ করা হয়।
লেখা নিষিদ্ধ: অনেকে পূজার দিন কোনো কিছু লেখা বা পড়া থেকে বিরত থাকেন।
উপভোগ্য খাবার ও নৈবেদ্য
পূজার নৈবেদ্যতে সাধারণত হলুদ রঙের প্রাধান্য থাকে।
নৈবেদ্য: ফল (বিশেষত কুল, আপেল), মিষ্টি (রাজভোগ, সন্দেশ), এবং হলুদ বা কেশর যুক্ত খাবার যেমন— কেশর ভোগ বা মিষ্টি হলুদ পোলাও (কেশর ভাত) তৈরি করা হয়।
প্রসাদ: পূজা শেষে এই সমস্ত খাবার প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।
অন্যান্য উদযাপন
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ক্লাব বা মণ্ডপে এই উপলক্ষে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেমন— সঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
বিসর্জন: পূজার পরের দিন বা নির্দিষ্ট দিনে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
আমি আপনাকে সরস্বতী পূজা ২০২৬ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারলাম।

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url