সন্তানও কিন্তু ডায়াবিটিসের আওতার বাইরে নয়। বাচ্চাদের ডায়াবিটিস ত্রর কারণ?
সন্তানও কিন্তু ডায়াবিটিসের আওতার বাইরে নয়। বাচ্চাদের ডায়াবিটিস ত্রর কারণ?
সন্তানদের ডায়াবেটিস আছে কিভাবে বুঝবেন?
আমাদের দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে বড়সড় চিন্তার ভাঁজ মেলেছে মধুমেহ। ডায়াবিটিসে পৃথিবীর এক নম্বর হওয়া তো খুব একটা সুখকর নয়। ভারতের বহু মানুষ ডায়াবেটিসে ভোগেন। সংখ্যাটি রোজ বাড়ছে। চিন্তার কারণ আরও বেশি, কারণ যত সময় যাচ্ছে, ডায়াবিটিস করাল হাত বাড়াচ্ছে বাচ্চা এবং তরুণদের দিকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর জন্য বর্তমান লাইফস্টাইল অনেকাংশেই দায়ী। পড়াশোনার চাপ, খেলাধুলোর জায়গার অভাব, সব মিলিয়ে ছোটদের জরুরি এক্সারসাইজ়টুকু এখন প্রায় হয় না বললেই চলে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফাস্ট ফুড খাওয়ার প্রবণতা, বাড়ছে ওবিসিটি। এর ফলে আরও বেশি করে ছোটরা পড়ছে ডায়াবিটিসের কবলে। ঠিক সময়ে ধরা পড়ে চিকিৎসা শুরু না হলে ওই সমস্যা নিয়েই বড় হতে থাকবে বাচ্চাটি। এর থেকে পরবর্তীকালে চোখ, নার্ভ, দাঁত, ত্বক, হার্ট, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ডায়াবিটিসের লক্ষণ ও প্রভেদ:
ছোটদের মধ্যে ডায়াবিটিস মূলত দু’রকম, টাইপ ১ আর টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস মেলিটাসকে আগে জুভেনাইল ডায়াবিটিস বলা হত। হঠাৎ স্বাস্থ্যের অবনতি বা ইনফেকশনের পরে অনেকসময় এই ধরনের ডায়াবিটিসের প্রভাব লক্ষ করা যায়। সাধারণত এটি অল্প বয়সে হয়। দু’বছরের বাচ্চাও টাইপ ১ ডায়াবিটিসের শিকার বতে পারে। তবে এর আগে বা পরেও হতে পারে। বাচ্চার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে, বাচ্চা ক্লান্ত বোধ করে, পেটব্যথা-বমি হয়, ওজন কমে যেতে পারে, ঘন ঘন জল তেষ্টা পায়, বারবার ইউরিন পাস করে। অনেক সময় লক্ষণ দেখে বাবা-মা বুঝতে পারেন না বাচ্চার ডায়াবিটিস হয়েছে। আজকাল বাচ্চাদের টাইপ ২ ডায়াবিটিসও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদতে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াবিটিস, যা এখন ছোটদেরও হচ্ছে। এর লক্ষণ কিন্তু অত চট করে লক্ষ করা যায় না। তবে সাধারণত এই ডায়াবিটিসের রোগীরা ওবিসিটিতে ভোগে, খিদে বেড়ে যায়, বারবার ইউরিন হয়, আলট্রাসাউন্ড করলে ফ্যাটি লিভারের প্রবণতা দেখা যায়।
এগুলি সবই ইনসুলিন রেজিসট্যান্সের লক্ষণ। পরিবারে ডায়াবেটিসের হিস্ট্রি থাকলে এই সমস্যা বেশি করে দেখা যায়। সঙ্গে আছে স্ট্রেস,bফাস্ট ফুড খাওয়া আর ব্যয়াম না করার প্রভাব। তবে এক্ষেত্রে জন্মের পর প্রথম ১০০০ দিনের ডায়েটটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবিটিসের জিনগুলো ম্যানিফেস্ট করবে কি না তা এই সময়ে ডায়েটের ওপরে অনেকটা নির্ভর করে। ওবিসিটির ছাড়াও এর সঙ্গে হাইপারলিপিডিমিয়া, ব্লাড প্রেশার, সেরিব্রোভাস্কুলার ডিজ়িজ়ও জড়িয়ে থাকে। টাইপ টু ডায়াবিটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারলেও তাকে শরীর ব্যবহার করতে পারে না।
চিকিৎসা:
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই পারেন ছোটদের ডায়াবিটিসের চিকিৎসা করতে। যেহেতু বাচ্চাটিকে বহুদিন এই অসুখের প্রভার ভোগ করতে হয়, তাই জটিলতা তৈরি হওয়ার সুযোগও বেশি থাকে। ইনসুলিন দেওয়া ছাড়া টাইপ ১ ডায়াবিটিসের সেভাবে কোনও চিকিৎসা নেই। তবে ইনসুলিন দিলেই বাচ্চা ভাল হয়ে যাবে, এমন নয়। দিনে কতবার কত পরিমাণে ইনসুলিন লাগবে তা নির্ভর করে রোগীর ওপর। বেশি বা কম ইনসুলিন দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বাচ্চার খেতে অসুবিধে হলে বা জ্বর হলেও কিন্তু ইনসুলিন চালিয়ে যেতে হবে। ইনসুলিন পেন আজকাল বাজারে যথেষ্ট সহজলভ্য। ডাক্তার মনে করলে অবশ্যই ইনসুলিন পাম্পের ব্যবস্থা করবেন।
বাড়িতে মেশিন কিনে এবং বাইরেও ব্লাড টেস্ট করিয়ে নিয়মিত গ্লুকোজ মনিটরিং-ও অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ভাবে চোখ এবং পায়ের পরীক্ষা করা দরকার। টাইপ ২ ডায়াবিটিস ঠেকাতে নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা খুব দরকার। ফাস্ট ফুড বাদ দিতে হবে, খাবারে রাখতে হবে প্রচুর ফল এবং শাকসবজি। বেশি চিনিযুক্ত খাবার একটু কম খেলেই ভাল। খেলেও এমন খাবার খেতে হবে যাতে হঠাৎ করে শুগার না বাড়ে। রোগীর পরিবার এবং রোগীকে ব্লাড শুগারের সমস্যা সংক্রান্ত সমস্ত জিনিস বুঝিয়ে দেওয়া বিশেষজ্ঞরই দায়িত্ব। নিয়ম মেনে চললে শিশুটি একটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url