সন্তানদের হাতে মোবাইল ফোন দিচ্ছেন দেখে নিন তার খারাপ লক্ষণগুলো?
সন্তানদের হাতে মোবাইল ফোন দিচ্ছেন দেখে নিন তার খারাপ লক্ষণগুলো?
শিশুকে ফোন থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত :
আপনার শিশুকে মোবাইল ফোন দেয়া উচিত নাকি যতদূর সম্ভব তাকে ফোন থেকে দূরে রাখা উচিত এ প্রশ্নের উত্তরে যেন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় উভয় সংকট মোবাইল ফোনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ।এত বেশী সংবাদ শিরোনাম হয়েছে শিশুকে ফোন থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়াটা বাবা-মায়ের জন্য খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয় কারন আপনার মনে হতে পারে যে এটা একটা প্যানডোরা বক্স অর্থাৎ যেটি খোলার সাথে সাথে দুনিয়ার সব আজেবাজে জিনিস আপনার সন্তানের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়বে স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি কে বলা হয় নোমোফোবিয়া বাঁধনহারা হয়ে পড়ার ভয়। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসা টাও বেশ কঠিন আর একারণেই বাবা-মা সব সময়ই সন্তানদের হাতে মোবাইল ফোন দেয়া নিয়ে চিন্তিত থাকেন ।
তাই কোন বয়সে শিশুর হাতে মোবাইল ফোন দেবেন:
আবার ইন্টারনেটের অনেক খারাপ দিক এর সাথে সাথে যেহেতু ভালো অনেক আছে তাই কোন বয়সে শিশুর হাতে মোবাইল ফোন দেবেন রানিয়র দুশ্চিন্তার শেষ নেই অভিভাবকদের প্রতি স্মার্টফোনে জিপিএস অ্যাপস বা সফটওয়্যার থাকে বলে শিশুদের চলাফেরা ট্র্যাক করা যায়। এর মাধ্যমে পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের 33% বাবা-মা স্মার্টফোনের মাধ্যমে সন্তানদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখেন এছাড়া সন্তানরা হারিয়ে গেলে মোবাইল ফোনের লোকেশন অ্যাপস ব্যবহার করে বাড়িতে ফিরতে পারে স্মার্টফোনের ব্যবহার শিশুদের প্রযুক্তিবান্ধব করে এবং স্কুল ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে স্মার্টফোনে এখন শুধু আনন্দ বা যোগাযোগের মাধ্যমে নয় বরং এটি এখন শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে বাসায় থেকে শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি আমরা করণা মহামারীর সময় দেখেছি এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক অ্যাপস ব্যবহার করে নতুন ভাষা আয়ত্ত করা, গণিতে দক্ষতা বাড়ানো সহ নানা ভাবে কাজে লাগে।
শিশুদের মোবাইল ব্যবহারে খারাপ দিক:
স্মার্টফোনে বাধা সৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর তথ্য অনুযায়ী অনেক বেশি স্ক্রীনসভের কারণে শিশুদের কর্টেক্স পাতলা হতে পারে যার কারণে বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা পরিপূর্ণতা পায় না শিশুদের যদি মানুষের সাথে মেলামেশার তুলনায় মোবাইল ফোনে বেশি সময় পার করে তাহলে সমস্যার সমাধান আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সমালোচনামূলক চিন্তা ভাবনার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় । শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি না থাকলে বাবা-মায়ের অজ্ঞাতে তারা আপত্তিকর কনটেন্ট পেতে পারে এছাড়া নগ্নতা সহিংসতার শিকার হতে পারে ।পরবর্তী জীবনে তাদের ওপর প্রভাব ফেলে এছাড়া সাইবার বুলিং এর মুখে পড়তে পারে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় কাটানোর কারণে অধৈর্য্যতা দেখা দিতে পারে যার থেকে পরবর্তীতে বিষন্নতা এবং দুশ্চিন্তা এবং অনেক সময় আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
শিশুদের ওপর মোবাইল ফোন কি ধরনের প্রভাব ফেলে:
আপনার সন্তানকে কখন ফোন দেবেন সে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জানা দরকার যে কোন বয়সের শিশুদের ওপর মোবাইল ফোন কি ধরনের প্রভাব ফেলে 2010 সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে চার থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুরা বাবা-মা-ভাই-বোন সমবয়সী কিম্বা লালনপালনকারী দের সাথে সরাসরি মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বয়সী শিশুরা স্মার্টফোনের পরিবর্তে খেলা ,কথা বলা বা কোন কিছু পড়ে শোনানো হলে তারা তার প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় এই বয়সের শিশুদের স্মার্ট ফোন দেয়া হলে সেটি তাদের সামাজিক দক্ষতা সৃষ্টিকে বাধাগ্রস্থ করে ।
দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের কোন ধরনের স্ক্রিনের সামনে আনা উচিত নয়:
মানুষের সাথে অল্প মেলামেশার ফলে তাদের মধ্যে সহমর্মিতা সৃষ্টি হয় তারা মানুষের মুখের অভিব্যক্তি করতে শেখে এমনকি স্মার্ট ফোনের স্ক্রিন দেখলে তার শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন কেও বাধাগ্রস্থ করে এ কারণে কানাডিয়ান পেডিয়াট্রাইক্স সোসাইটি পরামর্শ দেয় যে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের কোন ধরনের স্ক্রিনের সামনে আনা উচিত নয়।দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের দিনে এক ঘন্টার কম স্ক্রিন ব্যবহার করা সীমাবদ্ধ করতে হবে। দশ বছর বয়সীরা বাবা-মায়ের থেকে একটু দূরে থাকে বেশিরভাগ সময় পার করে স্কুলে এবং স্কুলের পর আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে এ কারণেই তারা যখন বাইরে থাকে তখন তাদের সাথে যুক্ত থাকতে অনেক সময় বাবা-মা তাদের কে ফোন দিতে বাধ্য হন এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে 40 শতাংশ শিশু 5 থেকে 11 বছর বয়সের মধ্যেই স্মার্টফোন আহার করে ।
কম বয়সীদের কাছে কম ফিচার রয়েছে এমন ফোন দিতে হবে:
শিশুরা বাবা-মায়ের অজ্ঞাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার শুরু করতে পারে এই বয়সে এটা ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এই বয়সের শিশুদের সমালোচনামূলক চিন্তা করার দক্ষতা গঠিত হয় না এ কারণে তারা বোঝে না আজ যে সামাজিক মাধ্যমে কি পোস্ট করা উচিত না উচিত নয় এবং নেতিবাচক কোন কিছু কিভাবে সামাল দিতে হবে। শিশুরা সাইবার বুলিং এর শিকার হয় সমবয়সীদের সমর্থন বা পিয়ার ভ্যালিডেশন এর প্রতি বেশিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় তাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় মিডিয়া এবং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা মার্কিন প্রতিষ্ঠান কমনসেন্স মিডিয়া এমন অবস্থায় কিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয় তাদের মতে কম বয়সীদের কাছে কম ফিচার রয়েছে এমন ফোন দিতে হবে ইন্টারনেট একসেস সীমিত করতে হবে এবং বাবা-মাকে সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে।
আপনার সন্তানকে ফোন দেয়ার আগে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর:
12 থেকে 14 বছর বয়সী শিশুরা মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয় এবং অনেকেই স্মার্টফোনের আবদার করে এই বয়সে দের বেশিরভাগই গুরুত্বপূর্ণ কিছু দক্ষতা যেমন সমস্যার সমাধান আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সমালোচনামূলক চিন্তা ভাবনা করতে শেখে তবে সব শিশুর মধ্যে এই পরিপক্কতা সমান হারে হয়না । রিসার্চ সেন্টারের 2020 সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের 73 শতাংশ শিশু 12 বছর বয়সের মধ্যে নিজস্ব স্মার্টফোন ব্যবহার করতে শুরু করে তবে যেহেতু সবার পরিপক্কতা সমান নয় তাই আপনার সন্তানকে ফোন দেয়ার আগে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে এগুলো হচ্ছে আপনার সন্তানকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ফোন চাইছে নাকি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে মুখ্য উদ্দেশ্য অ্যাপ ডাউনলোড, কথা বলা সীমিত রাখতে পারবে তো আপনার সন্তানকে ফটো ভিডিও এবং টেক্সট সচেতন ভাবে ব্যবহার করতে পারবে।
যথেষ্ট বয়স না হওয়া পর্যন্ত শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন:
ক্লাস বা পড়াশোনার সময় কি অপ্রয়োজনীয় বার্তা আদান প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারবে মোবাইল প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠাতা ও যথেষ্ট বয়স না হওয়া পর্যন্ত শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেয়াকে নিরুৎসাহিত করে যেমন অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস আইপ্যাড বাজারে আসার পর নিজের সন্তানদের সেটি ব্যবহার করতে দেননি কারণ তারা বয়সে ছোট ছিল আপনি এখানে চাইলে স্টিভ জবসকে অনুসরণ করতে পারেন 14 থেকে 18 বছর বয়সে মানুষের মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স পুরোপুরি বিকাশ লাভ করে যার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয় এবং ভাষাগত সক্ষমতা পূর্ণ রূপ লাভ করে এ বয়সে জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া যৌক্তিকতা আবেগ দমন পরিকল্পনা এবং সংগঠিত করার দক্ষতা অর্জন করে এ বয়সে এদের বেশিরভাগেই যৌক্তিকভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারে প্রস্তুত হয় ।
14 বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেননি:
টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস নিজের সন্তানদের 14 বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেননি তবে কমনসেন্স মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জেমস স্টেয়ার নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে 14 থেকে 18 বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত শিশুদের স্মার্ট ফোন দেওয়াটা ক্ষতিকর হতে পারে তার মধ্যে এ বয়সীদের অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট একসেস দেয়া হলে সেটা তাদের ও বন্ধুদের জন্য হুমকি হতে পারে তাই তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারে সচেতন করা বাবা মায়ের দায়িত্ব কিছু ক্ষেত্রে যেমন খাওয়া এবং ঘুমের সময় স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে যাতে তারা পর্যাপ্ত ঘুমানোর সুযোগ পায় ।
পরিবারের নিয়ম-নীতি মেনে চলা আপনি যে বয়সে শিশুকে মোবাইল ফোন দেন না কেন উপরের চারটি বিষয় মেনে চলাটা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে পরিবারের কিছু নিয়ম তৈরি করুন এবং সেগুলো মানার বাধ্যবাধকতা তৈরি করুন নিয়মগুলো একেবারে স্পষ্ট হতে হবে যেমন কখন কোথায় কিসের জন্য স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা যাবে মোবাইল ফোন কতটুকু সময় ধরে ব্যবহার করা যাবে তাদের নিজেদের ও মোবাইল ফোন ব্যবহারের দায়িত্বশীল হতে হবে সন্তানরা যাতে তাদের অনুসরণ করতে পারে তার জন্য নিজেদেরকেই মডেল হিসেবে দাড় করাতে হবে ।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url