'নরক' ছোট গল্প
'নরক' ছোট গল্প
● গল্পের নাম: 'নরক'
● লেখকের নাম: ঝিমলি নন্দী
বাঘা হা-হা করে হাসল। পাখি হি-হি করে হাসল। গ্যাসে মাংস রান্না হচ্ছে। ঘরটা গন্ধে মাতোয়ারা। টেরা-বাঁকা এনামেলের গামলায় আটা ঠাসছে পাখি। দশটা রুটির কমে বাঘার পেট ভরে না। হাট্টাকাট্টা চেহারা বাঘার। ডান পা-টা বাঁ পায়ের চেয়ে সামান্য ছোট বলে একটু দুলে দুলে হাঁটে। কিন্তু দৌড়লে চিতা। ছোট ছোট আঙুলে চওড়া হাতের পাঞ্জা, থাবার মতো। গায়ের রং আলকাতরা-মাখা। গুলি খায়, না, মদ খায় কে জানে— কুতকুতে চোখ দুটো দিনে-রাতে লাল। ভুরুর বালাই নেই। নাকটা বোঝা যায় কেবল গর্ত দুটো আছে বলে। নীচেই পুরুষ্টু গোঁফের ফাঁকে মোটা ঠোঁট। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মাথার চুলে কদমছাঁট।
সারা শরীরে কোথাও কোমলতার লেশমাত্র নেই। এক বিচিত্র ভোঁতা নিষ্ঠুরতা কেউ যেন দেগে দিয়েছে চেহারাখানায়। বাঘাদের জীবন আগাগোড়া অমসৃণ। ওরা নরকের কীট। আঁস্তাকুড়ে জন্মায়, আগাছার মতো বেড়ে ওঠে। লায়েক হলে বহাল হয়ে যায় নরকের পাহারাদারিতে। কিছু পেতে হলে আদায় করে নেয়। এটাই ওদের আদত। পুলিশের খাতায় বাঘার নাম আছে। পেটো, চাকু সব কিছুতে এলেম আছে তার। পিস্তলের নিশানাও পাক্কা। বাঘার টার্গেট ফসকায় না। তাই বেশি দিন তাকে জেলে ধরে রাখা যায় না। তাতে বাঘার নয়, রাঘব বোয়ালদের অসুবিধে। রাতে ঘরে আসার ফুরসত বাঘা পায় না বড় একটা।
বড় খেপের পর দু’-চার মাসও গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হয়। বাঘাকে সুপারি কিলাররা ভাড়া করে। তাদের যারা সুপারি দেয়, তারা উঁচুতলার। বাঘারা তাদের চেনে না। বাঘ সিংহরও গুহা থাকে। বাঘার সেই গুহাটি হল পাখি। হ্যাঁ। পাখিই হল বাঘার আস্তানা। নাটাকে টসকাবার পর পাখি আপনি তার দাঁড়ে এসে বসেছিল। ধরে আনতে হয়নি। এলাকার সঙ্গে জেনানা মুফতে পেয়েছিল বাঘা। আজ একটা মোটা দাঁও মেরে এসেছে। তারই উদ্যাপন চলছিল হাসিতে। আনন্দে পাশেই গড়াগড়ি খাচ্ছে একটা খালি বোতল। আর-একটার ছিপি খোলা। পাখি এখন পিঁড়ি পেতে বসে রুটি সেঁকছে। আগুনে পড়ে ফুলেফেঁপে উঠছে গরম রুটি।
বাঘার খিদে সহ্য হয় না। তারও। মেয়েমানুষেরও নোলা থাকে— খাওয়ার, বাঁচার। বাঘা যখন থাকে না তার ঘরে খদ্দের থাকে। পাখিদের সতীপনা নেই। বাঘারা জানে। নেই বলেই অনেক খপর পাখিরা ঘরে বসেই পেয়ে যায়। সময়মতো বাঘাদের সতর্ক করতে পারে। চরম খপর থাকলে নিজেরাও সতর্ক হয়ে যায়। বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা! নাটার বেলা পাখি টের পেয়েছিল। এবারেও। বাঘার বগলের তলায় বসে পাখি তাই আজ খুব হেসেছে। খুউব! হাসতে হাসতে চোখে জল চলে এসেছে। সূক্ষ্ম ফারাকটা বাঘা ধরতে পারেনি। পাখি জানে এ এলাকায় এবার হুলোর খেল শুরু হবে। এক মস্তানকে বেশি দিন ওরা জিন্দা রাখে না। ঘুঁটি পাল্টায়। একটা বোড়ে আর-একটার ওপর চড়াও হয়। রাজা-মন্ত্রী আড়ালে থাকে। এখনই রুটি সেঁকার গন্ধ, কষা মাংসের স্বাদু গন্ধে মিশে যাবে রক্তের আঁশটে ঘ্রাণ! পাখি ডানা ঝাপটায়। এবার হুলোর দাঁড়ে বসবে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url