Of the disembodied soul: অশরীরী আত্মার অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে, নাকি পুরোটাই মানুষের কল্পনা?

 


বিশ্বের ভয়ঙ্কর ভূতেরা:

অশরীরী আত্মার অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে, নাকি পুরোটাই মানুষের কল্পনা? লিখেছেন জয় সেনগুপ্ত।

বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে আমরা না-হয় ভূতে বিশ্বাস করা মানুষজনকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করতেই পারি, কিন্তু মানব-সভ্যতার ক্রম পরিবর্তনের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব, ভূত বিষয়টি মোটেও ঠাট্টা-তামাশার বিষয় নয়, বরং সেটা রীতিমতো গুরুগম্ভীর ব্যাপার। এ কথা সত্যি, সভ্যতার উষা লগ্ন থেকেই ভূত, অশরীরী, প্রেতাত্মায় মানুষ বিশ্বাস করে আসছে। মেসোপটেমীয় সভ্যতা থেকে মিশরীয় সভ্যতাই হোক কিংবা প্রাচীন ভারতবর্ষ, মৃত্যুতেই যে সব কিছু শেষ হয়ে যায় না, এ বিশ্বাস আবহমান কালের।

 

মনে করা হয় যে, মানুষ ও পশুর মৃত্যুর পর তাদের আত্মা যদি শান্তি না পায়, মুক্তি না পায়, তা হলে তা বারে বারে হানা দিতে পারে আমাদের এই লৌকিক জগতে। আমরা, লৌকিক জগতের মানুষেরা, যখন এই অলৌকিক জগতের কোনও প্রতিনিধিকে দেখে ফেলি, তখনই হয়ে যায় ভূত দর্শন। আমাদের বাস্তব জগৎ তখন কোনও খণ্ড মুহূর্তের জন্য হয়তো-বা খোঁজ পায় এক অধিবাস্তব প্যারানর্মাল জগতের। কিন্তু সেই সাক্ষাৎ অধিকাংশ সময়েই নাকি খুব একটা সুখের হয় না। জাগতিক জগতের বাসিন্দারা অতিজাগতিক ভূত বা আত্মার দর্শনে ভয় পেয়ে যেতে পারেন। আবার শোনা যায়, কখনও কখনও এই সব প্যারানর্মাল জগতের বাসিন্দারা দিব্যি ভর করতে পারে মানুষের উপরে। বিশ্বের ভয়ঙ্কর ভূতেদের সন্ধানে আমরা আজ যখন নেমেছি, তখন হাড় হিম করা সেই ভৌতিক অভিজ্ঞতাগুলো ভয়ে ভয়ে অনুভব করার আগে, এসো, আমরা ভূতেদের ব্যাপারে নিজেদের ফান্ডাটা একটু বাড়িয়ে নিই।

অশরীরী আত্মা কত প্রকারের হয় এবং তারা কিভাবে সৃষ্টি হয়

সাহিত্যে ভূত:

সাহিত্যের ভূতেদের কথা তো আমরা প্রায় সবাই জানি। এডগার অ্যালান পো থেকে রোলিং, ত্রৈলোক্যনাথ, রবীন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্রকুমার রায়, পরশুরাম থেকে সত্যজিৎ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়– সাহিত্যে ভূতেরা জাঁকিয়ে বসেছে বহু কাল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘নিশীথ রাক্ষসী’ যদি অসমাপ্ত না থাকত, তা হলে হয়তো সেটাই হত প্রথম সার্থক ভূতের গল্প, যার মধ্যে হরর বা আতঙ্কের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা গেছে। সার্থক অলৌিকক গল্প হিসেবে আমরা রবীন্দ্রনাথের ‘মণিহারা’, ‘নিশীথে’ এবং ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ পেয়েছি। তার পর একে একে কত জন যে ভৌতিক গল্পে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। এঁদের মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্রকে উপরের দিকে রাখব।

সত্যি ভূতের গপ্পো:

মানবেতিহাসে ভূত দেখার ও ভৌতিক অভিজ্ঞতার অনেক তথ্য, নথি ও প্রমাণ আছে। এ বার আমরা জেনে নেব, এই সব তথাকথিত ‘সত্যি ভূত’-এর ইতিহাস। কোথা থেকে তারা এল? কোথায় তাদের আস্তানা? কী তাদের উদ্দেশ্য? কেন বারে বারে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়? দুঁদে গোয়েন্দা যেমন আসল খুনিকে পাকড়াও করার আগে সন্দেহভাজন সবাইকেই খুনি হিসেবে কল্পনা করেন, তার মোটিভ খুঁজে বের করতে চান, আজ আমরা তেমনই ভূত আছে ধরে নিয়েই কিছু ভৌতিক ‘সত্যি ঘটনা’র সাক্ষী হব। তবে সত্যি ভূতের খোঁজে আমাদের এই অভিযাত্রা শুরুর আগে একটু ভূত-তত্ত্বটাও ঝালিয়ে নিতে হবে। সেখানে প্রথমেই ভূতেদের শ্রেণিবিভাগটা জেনে নেওয়া জরুরি। এরও আবার প্রাচ্য-পাশ্চাত্য আছে।

পাশ্চাত্যের ভূত:

পাশ্চাত্যে ভূতকে যে সব সময় গোস্ট-ই বলা হয়, এমনটি নয়। তাকে ডেড স্পিরিট, অ্যাপারিশন-সহ নানা নামে ডাকা হয়ে থাকে। তা সে যে নামেই তুমি ডাকো, পশ্চিমের ভূতেরা মূলত পাঁচ রকমের।



পোলটারগাইস্ট বা উপদ্রবকারী ভূত:

সিনেমায়-সাহিত্যে এই জাতীয় ভূত আমরা আকছার দেখেছি। এই সব ভূত যে-বাড়িতে হানা দেবে সেই বাড়ির লোকজনদের নানা ঝামেলার মধ্যে ফেলবে। ভয়ানক উৎপাত করবে। তাদের কাজকর্ম এক সময় এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে যে, শেষ পর্যন্ত বাড়ির বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হবে। ঘরের আলো জ্বালিয়ে-নিভিয়ে, অকারণে কড়া নেড়ে, ড্রয়ার খুলে কাগজপত্র লন্ডভন্ড করে, আসবাবপত্র সরিয়ে, হাড় হিম করে দেওয়া আওয়াজ করে এরা শুধু ভয় দেখিয়েই নিরস্ত হয় না, এরা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে মানুষ খুন পর্যন্ত করতে পারে। ৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির এক খামার-বাড়িতে প্রথম কোনও পোলটারগাইস্ট-এর উল্লেখ পাওয়া যায়। সে নাকি প্রায়ই ঢিল ছুড়ত আর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিত।

ফানেল ভূত:

এদের দেখতে ঘুরন্ত ফানেলের মতো। এদেরও ফটো ওঠে। এরা আসলে আমাদের প্রিয়জন। তাই মৃত্যুর পর নিজের বাড়িতেই আশ্রয় নেওয়া পছন্দ করে। ঠাঁই না মিললে এরা চলে যায় ইতিহাস-প্রসিদ্ধ কোনও স্থানে কিংবা প্রাচীন কোনও বাড়িতে।

এক্টোপ্লাজ়ম বা ইকো-মিস্ট:

এই ভূতেরা একটু ধোঁয়াটে টাইপের। ঘুরন্ত কুয়াশার মতো দেখতে এই ভূতেরা মাটি থেকে বেশ কয়েক ফুট উপরে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে। এরাও খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে। এরা মানুষকে ভয় দেখাতে ভালবাসে। হঠাৎ করে এদের আর্বিভাবের ফলে ভয়ে যে-কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

অর্বস:

অর্বস কোনও ভূত নয়। বরং বলা যায় ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ। ইনফ্রারেড ক্যামেরায় কিংবা এমনি ক্যামেরায় যদি রাতের বেলায় কোনও ফটো তোলা হয় এবং দেখা যায় সেই ফটোয় অনেক সাদা গোলাকার ছাপ, তখন ভূত-বিশারদরা ধরে নেন, সেখানে কোনও অশরীরী রয়েছে। সেই সাদা ছাপগুলোকেই বলে অর্বস। অর্বস থাকলে ভূত থাকবেই, এমনটাই ভূত-বিশারদদের বিশ্বাস।

প্রাচ্যের ভূত:

প্রাক-ঔপনিবেশিক সময় থেকে বঙ্গদেশ ভূতে ভরভরন্ত।

পেতনি:

এদের মধ্যে পেতনিরা হল অবিবাহিত মেয়ে ভূত। যার বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল এবং সেই সব নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছে। পেতনি এসেছে সংস্কৃত শব্দ প্রেতিনী থেকে। এই সব ভূত যে-কোনও আকৃতি ধারণ করতে পারে, এমনকি পুরুষের আকারও ধারণ করতে পারে। এরা মৃত্যুর পর অভিশপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। ভয়ঙ্কর বদমেজাজি হয় এরা, এদের দু’পা পিছনের দিকে ঘোরানো। এরা মানুষকে ভয় দেখায় নানা ভাবে।

শাকচুন্নি:

শাকচুন্নিরা থাকে শেওড়া গাছে। লাল পাড় সাদা শাড়ি ও শাঁখা পরা এই বিবাহিত মেয়ে-ভূতেরা ধনী বিবাহিত মেয়েদের উপর ভর করে, যাতে তারা নিজেরা সেই মহিলার মতো জীবন যাপন করতে পারে। লোকগাথা অনুসারে এরা শেওড়া গাছে বসবাস করে।

চোরাচুন্নি:

চোরাচুন্নি ভূতের উদ্ভব চোর থেকে। চোর মারা গেলে চোরাচুন্নিতে পরিণত হয়। এরা খুব বদ প্রকৃতির ভূত। পূর্ণিমা রাতে বেরিয়ে, গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে পড়ে গন্ডগোল বাধানোই এদের কাজ। নানা উপদ্রব করে এরা নাজেহাল করে দেয় বাড়ির বাসিন্দাদের।

পেঁচাপেঁচি:

পেঁচাপেঁচি ভূতরা সব সময় দর্শন দেয় না মানুষকে। পেঁচাপেঁচি ভূত ধারণাটি পেঁচা থেকে এসেছে। একটি পুরুষ ভূত এবং স্ত্রী ভূত এ ক্ষেত্রে এক সঙ্গে থাকে এবং এক সঙ্গে শিকারও করে। বাংলার বিভিন্ন জঙ্গলে নাকি এদের বসবাস। জঙ্গলে ভ্রমণকারীদের পিছু নিয়ে, সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় থাকা ভ্রমণকারীকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে ও তার মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।

নিশি:

নিশি খুবই ভয়ঙ্কর ভূত। গভীর রাতে শিকারকে তার একান্ত জনের কণ্ঠে, তার নাম ধরে ডাকে। তার পর বাইরে বের করে নিয়ে যায় এবং প্রাণ নিয়ে নেয়।

মেছোভূত:

মেছোভূতেরা মাছ খেতে ভালবাসে। এদের প্রধান খাদ্যই মাছ। মেছোভূতেরা সাধারণত গ্রামের যে সব পুকুরপাড়ে বা জলাশয়ের ধারে, যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায়, সেখানে বসবাস করে। মাঝে মাঝে তারা বাড়ির রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে প্রথমে এরা তার পিছু নেয়, তার পর নির্জন জায়গা পেলেই তাকে প্রচণ্ড ভয় দেখায়। তার পর সব মাছ ছিনিয়ে নেয়।

আরও ভূত:

এ ছাড়াও মামদো ভূত, গেছো ভূত, আলেয়া, বেঘো ভূত-এর কথা আমরা শুনেছি। তবে ভূতেদের রাজা বলে যদি কাউকে মানতে হয়, সে হল ব্রহ্মদৈত্য। সাদা ধুতি, পৈতে পরা এই ব্রাহ্মণ ভূতেরা নাকি পবিত্র ও দয়ালু।

 

তবে যাকে দেখলে যে-কোনও মানুষ তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান হয়ে যাবে, এমনকি ভয়ে হার্ট ফেল করে তার মৃত্যুও ঘটতে পারে, সে হল মাথাবিহীন ভূত বা স্কন্ধকাটা কিংবা কন্ধকাটা অথবা কবন্ধ। এই ভূতেদের মুন্ডু নেই। এরা হল সেই সব মানুষের আত্মা, যাদের রেল দুর্ঘটনা, হত্যা, অপঘাত, বা অন্য কোনও দুর্ঘটনায় মাথা কেটে বাদ হয়ে গেছে। এ শ্রেণির ভূতেরা সব সময় তাদের হারানো মাথা খুঁজে বেড়ায় এবং অন্য মানুষকে আক্রমণ করে তাদের নিজেদের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করে, তার পর দুর্ঘটনায় হারানো মাথাটা খোঁজার কাজে তাদের নিয়োগ করে।

কানাভুলো ভূতেরা খুব ভয়ানক। এদের প্রধান কাজ, পথিককে তার গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে তাকে অচেনা স্থানে নিয়ে আসা এবং মেরে ফেলা। বেচারা পথিক বুঝতেও পারে না যে, তার জীবন বিপন্ন হতে চলেছে।


ঝেঁয়ো পেতনিরা সাধারণত ঝাউগাছে উঠে বসে থাকে। গাছের আড়ালে নিজেদের এমন ভাবে লুকিয়ে রাখে যে, কেউ তাদের দেখতে পায় না। ভর সন্ধেবেলায় পথিক যদি একা একা সেই ঝাউবন বা জঙ্গল পেরোতে যায়, তখন তাকে ধরে ঝাউয়ের মগডালে তুলে ঝুলিয়ে দেয় ঝেঁয়ো পেতনিরা।


ভূতেদের শ্রেণিবিন্যাস না-হয় জানানো গেল। কিন্তু লিখিত ইতিহাসে কি কোনও ভূতের উল্লেখ পাব? হ্যাঁ, অবশ্যই পাব। শুধু অতীত ইতিহাসেই নয়, সাম্প্রতিক অনতি-অতীতেও ভূতেদের বিশেষ উল্লেখ মেলে।

ইতিহাসে ভূত:

সুমের, ব্যাবিলন, আসিরিয়া, মেসোপটেমিয়া ইত্যাদি প্রদেশে ভূতেদের উল্লেখ আছে। সেই বিশ্বাস পরবর্তী কালের আব্রাহামিক ধর্মগুলোতেও সঞ্চারিত হয়। মিশরীয়দের কাছে পরকাল ও ভূতদের অস্তিত্ব ছিল খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। হায়ারোগ্লিফ লিপিতে, প্যাপিরাস পুঁথিতে, সমাধিস্তম্ভের চিত্রকলায় ভূত বারে বারে এসেছে। মিশরীয় ‘বুক অব দ্য ডেড’-এর কথা কে না জানে! মমির প্রতিশোধ জাতীয় যে ধরনের সিনেমা আমরা প্রায়ই দেখি, তার উৎস কিন্তু এই বই। মিশরীয়রা মনে করত মৃত্যুর পরেও সোল (soul) এবং স্পিরিট (spirit) রয়ে যায়। যাদের ক্ষমতা থাকে জীবিতদের ক্ষতি করার। এই সোল এবং স্পিরিট-এরও আবার দ্বিতীয় মৃত্যু হতে পারে।


ভারতে ভূতেদের প্রসঙ্গ বেশি করে আসতে থাকে জন্মান্তরবাদ দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর। গীতায় বলা হয়েছে যে তামসিক ব্যক্তিরা ভূত-প্রেতের উপাসনা করে। এই সব মানুষের পরকাল প্রেতলোকেই অতিবাহিত হবে।

হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসিতে ভূতেরা বার বার এলেও তারা ভয়ঙ্কর কিছু নয়, বাষ্প বা ধোঁয়ার মতো অনেকটা। পরামর্শ দিতে বা ভবিষ্যদ্বাণী করতে তাদের আবির্ভাব। আবার কখনও কখনও তারা মৃত্যুকালীন আঘাত নিয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের মধ্যে ধ্রুপদী গ্রিক ভূতদের চরিত্র বদলে গেল। তারা হয়ে উঠল ভয়ঙ্কর, প্রতিশোধপরায়ণ। তাদের শান্ত রাখার জন্য বার্ষিক অনুষ্ঠান পালন করা শুরু হল। সাহিত্যে অন্যতম প্রথম ভূতের আবির্ভাব খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর নাটক ‘ওরেস্টিয়া’-তে, যেখানে আগামেমননের স্ত্রী ক্লাইটেমেনেসট্রা-র অশরীরী আত্মার আবির্ভাব ঘটে।


প্রাচীন রোমানরা বিশ্বাস করত, ভূতকে প্রতিশোধ নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যায়। এ জন্য তারা কোনও মাটির পাত্র বা সিসার টুকরোয় আঁচড় কেটে, অভিশাপ-বাক্য উচ্চারণ করে কবরের উপর রেখে আসত। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে প্লুটার্ক বর্ণনা করেছেন, কী ভাবে ড্যামন নামে খুন হয়ে যাওয়া এক জন মানুষের ভূত চ্যারোনিয়ার গণ-স্নানাগারগুলোয় বার বার হানা দিচ্ছে। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে প্রখ্যাত রোমান লেখক তথা রাজনীতিবিদ প্লিনি দ্য ইয়াংগার তাঁর লেখা এক চিঠিতে বৃদ্ধ এক ভূতের কথা সবিস্তার লিখেছেন। সেই লম্বা দাড়ির বৃদ্ধ ভূত শৃঙ্খলিত। প্লিনির আথেন্সের বাড়িতে সেই বৃদ্ধ ভূত নাকি প্রায়ই হানা দিত। শুধু প্লিনি নন, গ্রিক লেখক লুসিয়ান, প্লিনির বন্ধু প্লটাসও তাঁদের লেখায় বহু বার নানা ধরনের ভূতের উল্লেখ করেছেন। হিব্রু বাইবেল-এর ‘ফার্স্ট বুক অব স্যামুয়েল’ -এ-ও আমরা পাব ভৌতিক প্রসঙ্গ।

খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে ধর্মযাজক কনস্ট্যান্টিয়াস অব লিয়ন নথিবদ্ধ করেছেন কী ভাবে যথাবিহিত ভাবে সমাধিস্থ না হওয়ার ফলে অখুশি আত্মারা জীবিতদের বিরক্ত করে বেড়াত।


১৫৩৬ সাল। দেশদ্রোহিতা এবং আরও নানা অভিযোগে শিরচ্ছেদ করা হল অ্যান বোলিনের। রাজা অষ্টম হেনরির দ্বিতীয় স্ত্রী তিনি। রানি প্রথম এলিজাবেথের মা। তার পর থেকে প্রায়ই অ্যানের প্রেতাত্মাকে নাকি দেখা যায় লন্ডন টাওয়ারে। ১৮৬৪ সালে টাওয়ারের এক প্রহরীও একই দাবি করেন।


রেনেসাঁসের সময় ইউরোপে প্রেততত্ত্বের চর্চা নতুন করে হতে থাকে। রিফরমেশন ও কাউন্টার রিফরমেশন-এর পর যদিও তাতে রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। শেক্সপিয়রের সমসাময়িক নাট্যকার ক্রিস্টোফার মারলোর বিখ্যাত নাটক ‘ডক্টর ফাউস্টাস’-এর কথা তো তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছ। ফাউস্টাস ইচ্ছে মতো ভূত-প্রেত নামাতে পারতেন। কিন্তু সেটা তো নাটক। এ যুগে সত্যি ভূতের গল্প শুনিয়েছিলেন সুইস ধর্মযাজক লুডভিগ লাভাটার, তাঁর বিখ্যাত ‘অফ গোস্টস অ্যান্ড স্পিরিটিস ওয়েকিং বাই নাইট’ (১৫৬৯) বইয়ে।

প্রেতলোকের সঙ্গে যে জীবিত কোনও মিডিয়ামের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে, এই ধারণা অনেকটাই আধুনিক। এর উদ্ভব উনিশ শতকের আমেরিকায় স্পিরিচুয়ালিজ়ম আন্দোলন বিকাশের পরেই।


বিশ শতকে ভূতপন্থী ও ভূতবিরোধীদের লড়াই জমে ওঠে। এক দিকে বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে তথাকথিত ভৌতিক ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হতে থাকে। সেই সব ব্যাখ্যা মেনে নিয়েও অনেক প্রেততত্ত্ববিদ প্যারানর্মাল জগতের কথা বলে যেতে থাকেন। পেশাদার প্যারা-সাইকোলজিস্ট হ্যারি প্রাইস (বিশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে সক্রিয়) এবং পিটার আন্ডারউড (বিশ শতকের চার ও পাঁচের দশকে সক্রিয়) তাঁদের ভূত দর্শনের অভিজ্ঞতার কথা নথিবদ্ধ করেছেন একাধিক তথ্য-সমৃদ্ধ বিবরণীতে।

ভূতুড়ে বৃত্তান্ত:

এ কথা সত্যি যে, বিশ এবং একুশ শতকে এসে ভূতেরা বেশ কোণঠাসা। তবুও মাঝে মাঝেই এমন কিছু ঘটনা, খবরের কথা জানা যায়, যা সাধারণ মানুষকে ভূতকে পুরোপুরি নস্যাৎ করে দেওয়া থেকে বিরত রেখেছে। এ বার আমরা শুনব তেমনই কিছু বৃত্তান্ত।

জাঞ্জিবার এবং তানজানিয়ার পেম্বা ভূত:

ভারত মহাসাগরে ভাসমান এই দ্বীপে এক অশুভ আত্মার বড়ই উপদ্রব। বাদুড় থেকে মানুষ– যে-কোনও রকম রূপ ধারণ করতে পারে এই আত্মা। সোয়াহিলি ভাষায় একে ডাকা হয় ‘পোপোবাওয়া’ (‘বাদুড়ের ডানা’) বলে। নারী-পুরুষ-শিশু– শিকারের ক্ষেত্রে কোনও বাছবিচার করে না পোপোবাওয়ারা। তবে জানা গেছে, ছেলেদের উপর এদের আক্রোশ একটু বেশিই। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হল, এরা কিন্তু কোনও সাবেকি ভূত নয়। ‘পোপোবাওয়া’-র উপদ্রব পেম্বায় শুরু হয়েছে একেবারে হাল আমলে ১৯৬৫ সালে, সে দেশে বিপ্লবের পর পর। আর ১৯৯৫ সালে পেম্বা থেকে উঙ্গুজা (জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জের মূল দ্বীপ)পর্যন্ত এক গণ-হিস্টিরিয়া দেখা দেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বিবিসি নিউজ়ের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, পেম্বা দ্বীপের পুরুষরা বাড়ির বাইরে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে, পালা করে ঘুমোচ্ছে কেউ কেউ। অনেকে আবার শূকরের তেল গায়ে মেখে নিয়েছে এই ভেবে যে, এতে আক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে।

 

আধুনিক জাপানি স্কুলগুলোয় নাকি লুকিয়ে রাখা আছে এক ডার্ক সিক্রেট! হ্যানাকো-স্যান নামে একটি বাচ্চা মেয়ের প্রেতাত্মা নাকি লুকিয়ে আছে চার তলায়, টয়লেটে। সেখানে ঢুকে, তৃতীয় খুপরিতে ঠক ঠক করতে হবে তিন বার, জিজ্ঞেস করতে হবে হ্যানাকো-স্যান সেখানে আছে কি না। এই ভাবে তিন বার ডাকলেই বব ছাঁট চুল, লাল স্কার্ট পরা মেয়েটি বেরিয়ে আসবে। দর্শনার্থীর সঙ্গে খেলতে শুরু করবে, যেমন বন্ধুরা খেলে নিজেদের মধ্যে। কিন্তু আগন্তুককে যদি তার অপছন্দ হয়, তা হলে হ্যানাকো-স্যান নয়, বেরিয়ে আসবে তার রক্তাক্ত হাত। আর সেই হাত আগন্তুককে টেনে নিয়ে যাবে নরকে! অথবা তিন মাথাওয়ালা এক গিরগিটি তাকে চিবিয়ে খাবে হ্যানাকোকে বিরক্ত করার জন্য।

জাপানি স্কুলগুলোয় যদি হ্যানাকো-স্যান থাকে, ইউরোপ, আমেরিকার স্কুলগুলোর বাথরুমে লুকিয়ে আছে ব্লাডি মেরি, যার নাম শুনলে ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে যে-কোনও প্রবল ভূত-অবিশ্বাসীরও। নিজের সন্তানদের নাকি খুন করেছিল এই মেরি। স্কুলের বাথরুমের আয়নার দিকে তাকিয়ে পর পর তিন বার ব্লাডি মেরি বললেই দেখা দেয় এই ভূত। আজও তার রক্ত-পিপাসা মেটেনি। কেউ কেউ ব্লাডি মেরিকে রাজা অষ্টম হেনরি আর ক্যাথরিন অফ আরাগঁর মেয়ে প্রথম মেরি হিসেবেই দেখে। তাঁকেও ‘ব্লাডি মেরি’ বলেই ডাকা হত, যেহেতু নিজের রাজত্বকালে তিনশো জন প্রোটেস্ট্যান্টকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছিলেন তিনি। আবার কেউ কেউ বলে, এই ব্লাডি মেরি হল সপ্তদশ শতকের হাঙ্গেরিয়ান কাউন্টেস এলিজ়াবেথ ব্যাথোরির প্রেতাত্মা। ভ্যাম্পায়ার হিসেবে জীবৎকালেই প্রবল কুখ্যাতি ছিল তাঁর। প্রায় সাড়ে ছশো নারী ও শিশু-কন্যাকে নির্যাতন করে খুন করেছিলেন তিনি, তার পর নাকি স্নান করেছিলেন তাদের রক্তে! হলুদ নখ। লাল চোখ। সবুজ ঠোঁট। লম্বা, রোগা লিকলিকে এক বৃদ্ধা ভূত। চামড়া খসে খসে পড়ছে। ঠোঁটের কোণে খেলা করছে ধূর্ত এক হাসি। পর্তুগিজ় ভাষায় একে ডাকা হয় লা পিজাদেরা নামে। ব্রাজ়িলের বিভিন্ন বাড়ির ছাদের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে পিজাদেরা। শিকারের সন্ধানে। সুযোগের অপেক্ষায়। না, এখনও সময় হয়নি। রাতের খাওয়া শেষ হোক সকলের। খেয়াল রাখতে হবে, ভরপেট খাওয়ার পর কখন কেউ একা একা নিজের শোয়ার ঘরে ঘুমোতে যায়। অমনি সে ছাদ থেকে নেমে এসে সবার অজান্তে ঢুকে পড়বে সেই ঘরে। যিনি ঘুমোচ্ছেন, তাঁর নিদ্রা খানিক ঘন হলেই পিজাদেরা সটান উঠে পড়বে তাঁর বুকে। ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইবে শুয়ে থাকা মানুষটির চোখ, হাঁ করে একটু শ্বাস নিতে চাইবেন তিনি। কিন্তু না, লা পিজাদেরা কোনও সুযোগই দেবে না। সেই মানুষটির বুকের উপর চেপে বসে থাকবে সে, যত ক্ষণ না দম আটকে মারা যান তিনি।

কলকাতার ভূতুড়ে বাড়ি:

আমাদের কলকাতার শহরেই এমন অনেক বাড়ি আছে যেখানে নাকি অশরীরী আত্মাদের উপস্থিতির কথা শোনা যায়। হ্যাঁ, আমরা গোরস্থানগুলোর প্রসঙ্গ ইচ্ছে করেই বাদ দিচ্ছি। গোরস্থান, শ্মশান কিংবা তন্ত্র-সাধনার কেন্দ্রে ভূত থাকা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু চোখের সামনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে খুবই পরিচিত কিছু বিখ্যাত অট্টালিকা, যেখানে হয়তো তুমি-আমিও গিয়েছি, অতৃপ্ত আত্মারা ঘোরাফেরা করছে সেখানেও– ভাবলেই গা ছমছম করে ওঠে। তবে এই সব আত্মা ততটা ভয়ঙ্কর না হলেও এদের দর্শনে মানুষের শিরদাঁড়া দিয়ে বরফ-স্রোত বয়ে যাওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়।


এদের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় আলিপুরে হেস্টিংস হাউসের কথা। ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস-এর প্রধান প্রশাসনিক ভবন (১৭৭৫-১৭৮৫) ছিল এটি। বর্তমানে এটি একটি কলেজ। সেই কলেজেরই চত্বরে রাতের অন্ধকারে এক রহস্যময় মানুষকে ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। কে ইনি? স্বয়ং হেস্টিংস? অনেকে আবার সাবেকি জুড়িগাড়ি করে এক জন সাহেবকে গভীর রাতে এখানে নামতে দেখেছে। ১৭৮৭ সালে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হন হেস্টিংস। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ জীবৎকালে পেশ করতে পারেননি, তাই নাকি মৃত্যুর পর আজও তিনি ঘুরে বেড়ান এই বাড়ির আনাচকানাচে।

আলিপুরের সুরম্য বেলডেভার হাউস বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার। মির জ়াফরের কাছ থেকে হেস্টিংস উপহার পান এই বাড়িটি। এখানে পড়াশোনা করতে আসেন যাঁরা, তাঁদের অনেকেই ঘাড়ের উপর অনুভব করেন অদৃশ্য কারও ভারী নিঃশ্বাস। যেখানে একদা বল ডান্স ফ্লোর ছিল, সেখান থেকে কোনও কোনও রাতে নাকি ভেসে আসে কনসার্টের সুর। শুনশান দুপুরে শুনতে পাওয়া পদচারণার শব্দ। লর্ড মেটকাফের স্ত্রী-র আত্মাই নাকি আজও ঘুরে বেড়ান লাইব্রেরির ভিতরে বাইরে। হাড়হিম করে দেওয়া এই সব ঘটনা এখনও ঘটে এখানে।


১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর কেঁপে উঠেছিল রাইটার্স বিল্ডিং। বিনয়, বাদল, দীনেশের সেই ঐতিহাসিক অভিযান। ইনস্পেক্টর জেনারেল অফ প্রিজ়নস কর্নেল সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন বিপ্লবীরা। রাত্রিবেলা যখন পুরো শহর নিস্তব্ধ, তখন সেই ফাঁকা রাইটার্স বিল্ডিংয়ে নাকি শুনতে পাওয়া যায় ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকা পায়ের শব্দ। কখনও কখনও কান্নার আওয়াজ। সিম্পসন খুন হয়েছিলেন পঞ্চম ব্লকে। সন্ধের পর সাহেবের বিদেহী আত্মা সেখানেই নাকি হানা দেয় বার বার। সন্ধের পর তাই পঞ্চম ব্লকে কাজ করতে আজও অনেকেরই বুক কাঁপে।

সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য বিপ্লবীদের কি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সিম্পসন?

রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অদূরে ডালহৌসি স্কোয়ারের কাছে হেয়ার স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে আসা একটা ছোট গলি গার্স্টিন প্লেস। এখানেই ১৯২৭ সালে শুরু হয় ‘ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি’, যা পরে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো’ এবং ‘আকাশবাণী’ নামে পরিচিত হয় (১৯৫৮ সালে ওই বাড়ি থেকে আকাশবাণী কেন্দ্র ইডেন গার্ডেনসের কাছে তার বর্তমান ভবনে উঠে আসে)। গার্স্টিন প্লেস জায়গাটি আদিতে ছিল সাহেবদের সমাধিস্থল। বেতার কেন্দ্রের প্রথম সাহেব-ডিরেক্টর পিওয়ালিক থেকে শুরু করে অনেক কর্মী নাকি কখনও না-কখনও ওখােন ভূতের দেখা পেয়েছেন। ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ অনুষ্ঠানের প্রখ্যাত শিল্পীরাও নাকি ভোরবেলা লাইভ অনুষ্ঠান করতে এসে টের পেয়েছেন অশরীরীর অস্তিত্বের।

উত্তর কলকাতায় আহিরীটোলার ১৭ নম্বর হরচন্দ্র মল্লিক লেনে কখনও গিয়েছ? এটাই কলকাতার পুতুল বাড়ি। শতক-প্রাচীন এই বাড়ির তৎকালীন বাবুরা নাকি এখানে নানা রকম নির্যাতন চালাতেন মানুষের উপর। অনেক গুপ্ত হত্যাও সংঘটিত হয়েছিল এখানে। বাড়িটার দোতলা এবং ছাদ জুড়ে আছে অদ্ভুত সব পুতুলের মূর্তি। কোনওটার মাথা অর্ধেক, কোনওটার আবার হাত-কান-ভাঙা। প্রবেশ নিষেধ এই বাড়িতে। যখন প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল না, তখন কান পাতলেই নাকি ভেসে আসত হাসির সুর, চুড়ির শব্দ, নূপুরের রুনুক ঝুনুক। অত্যাচারিত, নির্যাতিত, নিহত মানুষের অতৃপ্ত আত্মাগুলো এ ভাবেই নাকি শতাব্দী পার করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যেতে চায়।

সত্যিই কি ভূতের অস্তিত্ব আছে? নাকি সবটাই মনের ভুল? বাস্তব আর কল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনাগোনা অশরীরী আত্মাদের। প্রশ্ন জাগে, যত মানুষ ভূত দেখেছেন বলে দাবি করেছেন, তাঁরা কি সকলেই ভুল দেখেছেন বা মিথ্যে বলেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব শক্ত। 

বর্তমানে শহরাঞ্চলে কংক্রিটের জঙ্গল যত বাড়ছে, ততই কমে যাচ্ছে অশরীরীদের আনাগোনা। তাদের থাকার জায়গাই তো আর নেই। কোথায় সেই গাছপালা ঘেরা অরণ্য, গাছগাছালি, খাল-বিল-পুকুর? ভূতেরা থাকবে কোথায়? তাই জনাকীর্ণ শহরে এখন আর তেনাদের তেমন দেখা যায় না। তবে ভূতেদের একটু-আধটু গা ছমছমে উপস্থিতি না-থাকলে জীবনটা কী রকম যেন পানসে হয়ে যাবে, তাই না?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url