Dol Purnima festival: দোল পূর্ণিমা কি? নবদ্বীপের দোল পূর্ণিমা উৎসব কিভাবে পালন হয়
দোল পূর্ণিমা কি? নবদ্বীপের দোল পূর্ণিমা উৎসব কিভাবে পালন হয়
দোলে জাগছে চৈতন্যধাম:
তিনটে বসন্ত রংহীন পার করার পর নবদ্বীপের দোল একটু বেশিই রঙিন এ বার। শহর নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকার পথ এখন গতি হারাচ্ছে পরিক্রমার ভিড়ে। রং-বেরঙের রেশমি নিশানে আকাশের গায়ে বসন্তের কোলাজ। ওঁরা চলেছেন শহরের ঘিঞ্জি জনপথ দিয়ে। কখনও পায়ে পায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছেন মেঠো আলপথ। পার হয়ে যাচ্ছেন গঙ্গা, জলঙ্গি কিংবা মজা নদীর সোঁতা। সংকীর্তনের সুরে লাগছে না বেসুরো কণ্ঠ। তবু গলা ছাড়তে কুণ্ঠাহীন ওঁরা। অপার খুশিতে ডগমগ। বেরিয়ে পড়তে পারার অনাবিল আনন্দ চোখেমুখে। পায়ে পায়ে ওঁরা ছুঁয়ে চলেছেন চৈতন্যধামের আনাচ-কানাচ। ঠিক সেই আগের মতো। যেমনটা দেখা যেত অতিমারির আগের পৃথিবীতে। আবিরের রঙিন গুঁড়োয় আবার ভরে উঠেছে নবদ্বীপের আকাশ-বাতাস।
আর তাতেই সাতসকালে পাকানো টোটো, বাইক, সাইকেলের বেমক্কা জট ছাড়াতে কালঘাম ছুটছে ট্র্যাফিকের। তবু বিরক্ত নয় নবদ্বীপ। বরং ভিড়ের বহর মেপে খুশি হচ্ছে। মেলাতে চাইছে অতিমারির আগের সঙ্গে পরের ফারাক কতটা। তিন বছর পর দোলের নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা এখন মধ্যপথে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইস্কনের পরিক্রমা প্রথম পথে নেমেছিল। তাতে উপচে পড়া ভিড় দেখে আশ্বস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী মহল। এর পর গত ২ মার্চ ইস্কনের পরিক্রমা সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন নবদ্বীপের পথে প্রতি দিন ছোট-বড় মিলিয়ে অসংখ্য পরিক্রমা। নবদ্বীপের গৌর-গোপীনাথ মন্দির, রাধা মদন গোপাল, কেশবজি গৌড়ীয় মঠ, সারস্বত গৌড়ীয়, দেবাবন্দ গৌড়ীয় মঠ, জন্মস্থান আশ্রম, সুদর্শন মন্দির-সহ প্রধান মন্দিরগুলিতে উপচে পড়ছে ভিড়। মন্দির প্রধানেরা জানাচ্ছেন, এবারে পরিক্রমা বড় হচ্ছে।
২০২০ সালে দোলের মুখে করোনার আবির্ভাব। নিয়মরক্ষার পরিক্রমায় প্রথা রক্ষা পেলেও ব্যবসা-নির্ভর নবদ্বীপের স্থানীয় অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়েছিল। ২১ সালে দোলের সময় করোনার দাপটে সব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০২২ সালে বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ উঠে যায়নি। নবদ্বীপ বা মায়াপুরে কম-বেশি তিন সপ্তাহ ধরে চলা দোল পরিক্রমা চোখে পড়ার মতো ছোট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার সব আগের মতোই হতে চলেছে। বরং জনসমাগম তার চেয়ে অনেক বেশি হবে বলেই মনে করছেন সকলে।
নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, “করোনা সংক্রমণে দুটো বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এ বার ছবিটা বদলে যাবে। পরিক্রমা হবে এবং সব ধরনের ব্যবসায়ীদের কিছু না কিছু ব্যবসা হবে। প্রচুর মানুষ আসছেন দোলে।”
নবদ্বীপের ধামেশ্বের মহাপ্রভু মন্দিরের পরিচালন সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “পরিক্রমার ভিড়ে হাঁস-ফাঁস করা দশা। এবারে সব উৎসবেই মানুষের ভিড় যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। দোলেও তার ব্যতিক্রম হবে না। এত মানুষ করোনার আগেও আসেননি।”
নবদ্বীপের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমে পরিক্রমা শুরু হয়েছে গত রবিবার থেকে। আশ্রম-প্রধান অদ্বৈত দাস মহারাজ বলেন, “বিগত কয়েক বছরের সঙ্গে এ বারের অবস্থার কোনও তুলনাই হয় না। মহাপ্রভুর দোল এবার স্ব-মহিমায়।”
ভিড়ের সুফল টোটোচালক থেকে হোটেল ব্যবসায়ী— সকলেই পাচ্ছেন, পেতে শুরু করেছেন। নবদ্বীপ মায়াপুরের হোটেল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দোলের বুকিং আর নেওয়া হচ্ছে না। আনন্দ বসন্ত সমাগমে চৈতন্যধামে মাথা গোঁজার ঠাঁই এখন সব চেয়ে দামি!
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন জায়গায় দোল উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয় (Dol Utsav is officially celebrated in Kolkata and some places in West Bengal):
দোল উৎসবের দিনে সুন্দর একটি রেসিপি বাড়িতে রান্না করে খেতে পারেন:
কই মাছের মেঘনা যমুনা:
উপকরণ: কইমাছ ৪টে, সাদা সরষে ১ টেবলচামচ, কালো সরষে ১/২ টেবলচামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা-চামচ, লঙ্কা গুঁড়ো ১/২ চা-চামচ, কাঁচালঙ্কা ২টো, তেঁতুল গোলা ১/২ কাপ, সরষের তেল ৪ টেবলচামচ। ফোড়নের জন্য: কালো জিরে ১/৪ চা-চামচ, কালো সরষে ১/৪ চা-চামচ, শুকনোলঙ্কা ১টা, নুন স্বাদ অনুযায়ী।
প্রণালী: কইমাছে নুন-হলুদ মাখিয়ে হালকা করে ভেজে নিন। দু’রকম সরষে, নুন, হলুদ, কাঁচালঙ্কা একসঙ্গে বেটে নিন। জল দিয়ে, পাতলা করে গুলে রাখুন। তেঁতুল গোলা জলে নুন, চিনি আর লঙ্কা গুঁড়ো মিশিয়ে রাখুন। কড়াইয়ে কালো জিরে ফোড়ন দিয়ে, সরষে বাটার মিশ্রণটা দিয়ে দিন। একটু ফুটে উঠতেই কইমাছগুলোর এক পিঠ ডোবে, এমনভাবে ছেড়ে দিন। অন্য একটা পাত্রে কালো সরষে আর শুকনোলঙ্কা ফোড়ন দিয়ে, তেঁতুল গোলা জলটা দিয়ে দিন। সরষের গ্রেভি শুকিয়ে এলে, মাছগুলো তুলে নিন। অন্য পিঠটা তেঁতুলের গ্রেভিতে ছেড়ে দিন। মাছ রান্না হয়ে, মাখা-মাখা হয়ে গেলে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
নারকেল পাবদা:
উপকরণ: পাবদা মাছ ৬টা, পেঁয়াজ বাটা ১/২ কাপ, রসুন বাটা ১/২ চা-চামচ, শুকনোলঙ্কা গুঁড়ো ২ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা-চামচ, জিরে গুঁড়ো ১/২ চা-চামচ, নারকেল বাটা ১/৪ কাপ, কাঁচালঙ্কা ৪টে, সরষের তেল ১/৪ কাপ, নুন স্বাদ অনুযায়ী, নারকেলের দুধ ১/৪ কাপ।
প্রণালী: মাছ পরিষ্কার করে অল্প নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখুন। প্যানে তেল গরম করে মাছ হালকা ভেজে তুলে নিন। আর-একটা প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ বাটা আর রসুন বাটা দিয়ে লাল করে ভাজুন। নারকেল বাটা, লঙ্কা আর হলুদ গুঁড়ো দিন। ভাল করে কষিয়ে নিন। এবার নারকেলের দুধ আর নুন মেশান। মাছ দিন তারপর। ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। ঝোল শুকিয়ে ঘন হয়ে এলে কাঁচালঙ্কা দিন। তেল ভেসে উঠলে নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে দারুণ লাগবে!
দোল উৎসবের কিছু সুন্দর সুন্দর কবিতা:
রঙের বাহারে সে-ই মাতিয়ে তোলে বসন্ত। আবার শুধু রং নয়, সাজসজ্জা থেকে শুরু করে ভেষজ গুণ, পলাশের জুড়ি মেলা ভার। এমনই এক ফুলের গল্প নিয়েই রাঙা হোক আমাদের প্রত্যেকের বসন্ত উৎসব।
দোল উৎসবের রং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাচ্চাদের কিভাবে দূরে রাখবেন
বাড়ির খুদেটিকে তো আর আটকাতে পারবেন না রং খেলা থেকে। তাই তার জন্য ব্যবহার করতে পারেন হার্বাল রং। তবে বাজারচলতি হার্বাল রং কেনার আগে তা যাচাই করে নিন। বাড়িতে রং আগে থেকেই বানিয়ে রাখতে পারেন আপনার খুদেটির জন্য। তবে এ রকম যেন না হয় যে, আপনার সন্তান ভেষজ রং ও বাকিরা রাসায়নিক রং নিয়ে দোল খেলছে। তা হলে লাভ কিছুই হবে না। বরং খুদের সঙ্গীরাও যাতে হার্বাল রং নিয়েই দোল খেলে, তা নিশ্চিত করুন আগে।
n রং খেলার সময়ে বাচ্চাকে বড় সানগ্লাস, টুপি, মুখের মাস্ক পরাতে পারেন। এতে চোখ, চুল, মুখের অংশ ঢাকা পড়ে যাবে।
n রং খেলার পরে কচি কচি হাত, পা, মুখ থেকে তা ঘষে তোলার সমস্যাও অনেক। তাই রং খেলার আগেই সারা শরীরে ও চুলে ভাল করে তেল মাখিয়ে দিন।
n রং খেলার সময়ে তাদের পছন্দসই ছোট ছোট গেম খেলতে পারেন। তা হলে রঙের দিক থেকে তাদের মন অন্য দিকে সরে যাবে।
n রং খেলার সময়েও অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাড়ির ছোট খুদেটি রং গোলার বড় টাবে পড়ে যেতে পারে। বা জল দিয়ে রং খেলা হয় বলে পা পিছলে পড়েও অঘটন ঘটা কিছু অসম্ভব নয়। তাই ছোটরা রং খেললেও তা যেন বড়দের সামনেই হয়, তা সুনিশ্চিত করুন।
n খেয়াল রাখবেন আপনার শিশু যেন অন্য কোনও বাচ্চার চোখে, মুখে রং না দেয়। তা আপনাকেই শেখাতে হবে। একই সঙ্গে কুকুর, বেড়ালের গায়েও রং দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, পশুদের লোমে রং লেগে গেলে তা সহজে তোলা যায় না।
n দোল খেলার সময়ে বাচ্চাদের সাবধান করে দেবেন রঙের বিষয়ে। তারা যদি নিজেরা সচেতন থাকে, তা হলে বিপদ এড়ানো সহজ হবে।
n কোনও ভাবে চোখে রং চলে গেলে বেশি ঘষাঘষি করবেন না। এক বাটি দুধ চোখের সামনে ধরে চোখ খোলা-বন্ধ করবেন। চোখের রং দুধই টেনে বার করে নেবে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url