সামনেই দোল, রঙের উৎসব। তবে নিজেকে আবিরে রাঙানোর আগে ত্বক ও চুলের প্রতি কিছু যত্ন
সামনেই দোল, রঙের উৎসব। তবে নিজেকে আবিরে রাঙানোর আগে ত্বক ও চুলের প্রতি কিছু যত্ন
খাতায়-কলমে বসন্ত উপস্থিত। আর বসন্তের বাতাসের সঙ্গেই এগিয়ে আসছে দোল। মুঠো মুঠো আবিরের মেলায় মন রাঙানোর উৎসব। ব্যস্ত জীবনের চিন্তা ভুলে নিমেষে শৈশবে ফিরে যাওয়ার মোক্ষম অবসর। সকাল সকাল শুরু হয় তার তোড়জোড়। রঙিন জলভর্তি বেলুন, পিচকিরি, আবিরের থালা সাজিয়ে আপনিও তৈরি উৎসবে মেতে উঠতে। দাঁড়ান দাঁড়ান! ত্বকের কী হবে ভেবেছেন? দোল খেলার সব উপকরণ তো মনে করে কিনেছেন, আর ত্বকের যত্নের বেলাতেই যত ফাঁকি? এরপর র্যাশ বেরলেও আবার মুখ হাঁড়ি করে থাকবেন। চিন্তা করবেন না। সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি। রঙের উৎসবে মেতে ওঠার আগে ত্বকের কী কী যত্ন নেবেন, জেনে নিন।
দোলের আগে:
দোল খেলতে যাওয়ার আগে থেকেই যদি ত্বকের জন্য একটু যত্ন নেন, সেক্ষেত্রে রং থেকে র্যাশের সমস্যা থেকে অনেকাংশেই বাঁচবেন। আপনি নিজে যতই ভাল মানের রং বা আবির ব্যবহার করুন, সবাই তা নাই করতে পারে। তাই দোল খেলার আগেই ত্বককে তৈরি করে রাখলে আপনারই উপকার। এতে ক্ষতিকারক রং থেকে ত্বকের সুরক্ষা তো হবেই, পাশাপাশি রং তুলতেও বেশি কসরত করতে হবে না। কী কী করবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক।
দোল খেলতে গেলে যতটা পারবেন ঢাকা জামা পরুন। তবে তার আগে পুরো শরীরে ভালভাবে নারকেল তেল মাসাজ করবেন। শরীরের উন্মুক্ত অংশে তো বটেই, এমনকি যে অংশ পোশাকে ঢাকা থাকবে, সেই অংশেও তেল লাগাতে ভুলবেন না। দোল খেলতে যাওয়ার অন্তত আধঘণ্টা আগে তেল মালিশ করে নিন। ঘাড়, গলা, কানের পিছন ইত্যাদি অংশেও ভালভাবে তেল মালিশ করবেন।
দোল স্বাভাবিকভাবে বাইরেই খেলা হয়। ফলে অনেকক্ষণ সূর্যের রোদ গায়ে লেগে ট্যানও পড়তে পারে। তাই তেল মালিশ করার পর, শরীরের উন্মুক্ত অংশে অবশ্যই উচ্চ এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেবেন।
ত্বক এবং চুল বাদে শরীরের যে অংশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হল নখ। সবচেয়ে বেশি সময় রঙের স্পর্শে থাকে কিন্তু নখ। এতে একদিকে তো নখে রং জমে যায়, যা তোলা খুব মুশকিল এবং এ থেকে কিউটিকলেরও ক্ষতি হতে পারে। তাই দোল খেলার আগে অবশ্যই সব নখ ছোট করে কেটে, পুরু করে নেলপলিশ লাগিয়ে নেবেন। এছাড়া তেল মালিশ করার পর খানিকটা পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে নখের চারপাশে মাসাজ করে নিতে পারলে ভাল।
অনেকক্ষেত্রে মুখের ভিতর রং চলে গেলে, দাঁতেও দাগ থেকে যেতে পারে। এর থেকে বাঁচতে অল্প একটু পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে দাঁতে ঘষে নিন।
দোল খেলতে যাওয়ার আগে মেক-আপ করার তেমন প্রয়োজন নেই। যদি একান্তই করতে চান, সেক্ষেত্রে কাজল, ব্লাশার এবং শ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটে অবশ্যই কোনও ময়শ্চারাইজ়িং লিপস্টিক ব্যবহার করবেন।
দোল খেলার পর:
এ তো হল দোল খেলার আগের যত্ন। এতে শরীরে রং জমে দাগ ফেলবে না ঠিকই, তবে এতে রংকে ত্বকের সংস্পর্শে আসা থেকে তো আটকানো সম্ভব নয়। তাই দোল খেলার আগে যতটা সাবধানতা অবলম্বন করেছেন, দোল খেলার পরও কিন্তু বেশ খানিকটা যত্ন নিতে হবে।
দোল খেলে ফিরে প্রথমেই ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। যত শীঘ্র সম্ভব রং তুলে ফেলুন। মুখের রং তোলার জন্য হোহোবা বা গ্রেপসিড অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন।
এরপর ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করুন। কোনও লিকুইড বডি ওয়াশ ব্যবহার করে স্ক্রাবার দিয়ে আলতো করে ঘষে শরীরের সব রং তুলে ফেলুন। তবে খুব জোরে ত্বক ঘষাঘষি করবেন না।
স্নান সেরে অবশ্যই ভাল ময়শ্চরাইজ়ার ব্যবহার করবেন। কারণ রং শরীরের আর্দ্রতা শুষে নিতে পারে। পুরো শরীরে ভালভাবে ময়শ্চরাইজ়ার মাসাজ করে নিলে উপকার পাবেন।
তবে সবক্ষেত্রে যে একবার স্নান করলেই সব রং উঠে যাবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। রঙের ধরন এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। রঙে থাকা কেমিকাল ত্বকের সঙ্গে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবে, তা আগে থেকে বলা মুশকিল। যদি আদে থেকে তেল মালিশ করে নেন, সেক্ষেত্রে সাধারণ রং ত্বকের গভীরে পৌঁছতে পারবে না। ফলে রং তুলতেও সমস্যা হবে না। তবে একান্তই যদি দেখেন রং উঠছে না, সেক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া স্ক্রাব এবং প্যাক ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
একবাটি টকদইতে দু’ টেবলচামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে রঙের উপর লাগান। খানিকক্ষণ রেখে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
আমন্ড অয়েল, দুধের সর বা মিল্ক ক্রিম এবং বেসন মিশিয়ে একটি পেস্ট বানান। রং লাগা অংশের উপর লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করুন। এরপর ঘষে তুলে নিন। যেহেতু এতে তেল রয়েছে, তাই সহজেই উঠে আসবে। এরপর মাইল্ড বডি ওয়াশ দিয়ে স্নান করে নিন।
পাকা পেঁপে চটকে মুখে লাগাতে পারেন। এতেও রং উঠে যাবে।
ঠোঁটে রং লেগে থাকলে কয়েকটা গোলাপফুলের পাপড়ি, সামান্য মধু এবং খানিকটা দুধের সর মিশিয়ে বেটে নিন। এই মিশ্রণ ঠোঁটে লাগান। এতে রংও উঠে যাবে এবং ঠোঁটের আর্দ্রতাও ফিরে আসবে। ঠোঁট হয়ে উঠবে কোমল এবং গোলাপি।
এখানেই কিন্তু যত্নের শেষ নয়। রং উঠে গেলেও রঙের ক্ষতিকারক কেমিকালে ত্বক শুষ্ক বা খসখসে লাগতে পারে। ত্বকে র্যাশও দেখা দিতে পারে। তাই দোলের পরবর্তী কিছুদিনও কিন্তু বিশেষ কিছু ঘরোয়া যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
যদি ত্বকে কোনওরকম র্যাশ বেরোয়, সেক্ষেত্রে খানিকটা ক্যালামাইন লোশন, অল্প মধু এবং খানিকটা গোলাপজল মিশিয়ে র্যাশের উপর লাগাতে পারেন। এতে র্যাশ কমে যাবে।
যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা দু’ টেবলচামচ মুলতানি মাটি, এক চা-চামচ গ্লিসারিন এবং সমপরিমাণে জল মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
স্বাভাবিক ত্বক হলে দু’ টেবলচামচ মুসুর ডাল, এক টেবলচামচ চালের গুঁড়ো, এক চিমটে হলুদগুঁড়ো এবং খানিকটা গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে সয়াবিনের আটা খুব ভাল অপশন। সয়াবিন গুঁড়ো করে তাতে খানিকটা দুধ, অল্প গ্লিসারিন এবং একটু সি-সল্ট মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। শুষ্ক ত্বকের জেল্লা ফেরাতে এই প্যাক খুব ভাল।
স্পেশাল টিপস:
দোল খেলার পর রং বেশিক্ষণ ত্বকে জমতে দেবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্নান সেরে নিন।
কেউ রং মাখালে চোখ বন্ধ রাখবেন বা খেয়াল রাখবেন যেন চোখে রং না লাগে। এক্ষেত্রে সানগ্লাস ব্যবহার করলে ভাল।
যাঁরা কনট্যাক্ট লেন্স পরেন, তাঁরা অবশ্যই কনট্যাক্ট লেন্স খুলে রাখবেন।
রং তুলতে ত্বক বা নখ খুব ঘষাঘষি করবেন না। মাইল্ড সোপ বা স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।
দোলের ৩-৪ আগে ও পরে অবধি থ্রেডিং, ব্লিচিং, ওয়্যাক্সিং করবেন না। দোলের পরে অন্তত এক সপ্তাহ ত্বককে একটু বিশ্রাম দিন।
রং তোলার জন্য কোনও ক্ষতিকারক কেমিকাল বা কেরোসিন তেল ভুলেও ব্যবহার করতে যাবেন না।
দোলে চুলের যত্ন:
রঙের উৎসবে মেতে ওঠার আগে চুল সুরক্ষিত রাখার উপায় জেনে নিন।
আবির, পিচকারি, রং... দোকান থেকে মনে করে সব কিনে ফেলেছেন নিশ্চয়ই? আর ভাবছেন, আপনি একদম রেডি দোল খেলার জন্য! সবই তো হল, কিন্তু চুলের যত্নের কথা ভুলে গেলে কি চলে? সারাদিন রং মেখে, দিনের শেষে চুল পড়া অবধারিত। উপরন্তু কেমিক্যাল রং চুলের নিজস্ব জৌলুস এবং আর্দ্রতাও কেড়ে নিতে পারে। অর্গ্যানিক রং ব্যবহার করলেও যে চুল একেবারে সুরক্ষিত থাকবে, তা নয়। কিছু বাড়তি সুরক্ষা পন্থা নিতেই হবে, যদি দোল খেলার পরও চুল ভাল রাখতে চান। কয়েকটা টিপস রইল সকলের জন্য। দোল খেলার আগের এবং পরের হেয়ার কেয়ার রুটিন জেনে নিন।
দোল খেলার আগে:
দোল খেলতে যাওয়ার আগে চুল আঁচড়ে নিন ভালভাবে।
চুলে তেল লাগাতে ভুলবেন না। যদি সেনসিটিভ স্ক্যাল্প হয়, সেক্ষেত্রে তেল লাগানোর আগে খানিকটা পাতিলেবুর রস লাগিয়ে নিন। রস শুকিয়ে গেলে, তারপর ভালভাবে অলিভ অয়েল কিংবা নারকেল তেল মাসাজ করে নিন। পুরো চুলে লাগাবেন।
এরপর চুল হালকা করে বেঁধে নিন। পনিটেলের বদলে খোঁপা করলে বা বিনুনি করলে ভাল। খুব টাইট করে চুল বাঁধবেন না।
যদি একান্তই চুল খুলে রাখতে চান, সেক্ষেত্রে মাথায় কোনও ব্যান্ডানা ব্যবহার করুন। এতে রং চুলে লাগলেও কোনও এক ধরনের ব্যারিয়ার থাকবে, ফলে ক্ষতি একটু হলেও কম হবে।
দোল খেলার পর:
বাড়ি ফিরে প্রথমেই চুল ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই চুলে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। চুলের সব রং একবার ধুলে নাও যেতে পারে। তাই দু’বার শ্যাম্পু করুন।
শুধু কন্ডিশনারই কিন্তু যথেষ্ট নয়, চুল ধোওয়ার পর হেয়ার সিরাম ব্যবহার করাও আবশ্যক।
চুল এয়ারড্রাই করুন। এমনিই এই সময় চুল নরম থাকবে। উপরন্তু হিটিং টুলস ব্যবহার করলে চুলের ভঙ্গুরতা আরও বাড়তে পারে।
দোলের ২-৩ দিন পরে একটা হেয়ার স্পা করাতে পারেন। অথবা কোনও নারিশিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।
যাঁদের স্প্লিট এন্ডসের সমস্যা আছে, তাঁরা দোলের পর চুল অল্প ট্রিম করে নিন।



আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url