এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তান মন্ত্রী মহসিন নাকভির হাত থেকে ট্রফি নিতে ভারতের অস্বীকার

 খেলাধুলা ও রাজনীতি: এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তান মন্ত্রী মহসিন নাকভির হাত থেকে ট্রফি নিতে ভারতের অস্বীকার, বিতর্ক তুঙ্গে।


এশিয়া কাপের ট্রফি-বিতর্ক: খেলার মঞ্চে রাজনীতির ছায়া

ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাপিয়ে সম্প্রীতি ও খেলার স্পিরিটই শেষ কথা। কিন্তু দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ ফাইনাল (Asia Cup Final) সেই ধারণাটিকেই যেন প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত যখন নবমবারের মতো এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন, ঠিক তখনই পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ঘটল এক অভূতপূর্ব ঘটনা—পাকিস্তান মন্ত্রী মহসিন নাকভির (Mohsin Naqvi) হাত থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকার করল ভারতীয় দল। এই ঘটনা খেলার দুনিয়ায় এক নতুন ও তিক্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে খেলার মাঠ এবং রাজনীতির জটিল সম্পর্ক আবারও উন্মোচিত হলো।


কেন এই অনীহা?

মহসিন নাকভি একই সাথে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB)-এর চেয়ারম্যান এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (ACC)-এর সভাপতি। তবে এর বাইরেও তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হলো তিনি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (Interior Minister)। ভারত স্পষ্টতই জানিয়ে দেয়, তারা নাকভির কাছ থেকে ট্রফি গ্রহণ করবে না। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং মহসিন নাকভির ভারত-বিরোধী কিছু বিতর্কিত মন্তব্য ও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট।

টুর্নামেন্ট জুড়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে করমর্দন এড়িয়ে যাওয়া বা প্রথাগত ফটোশুটে অংশ না নেওয়ার মতো ঘটনার মাধ্যমে উত্তেজনা আগেই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু ফাইনালের মঞ্চে ট্রফি নিতে সরাসরি অস্বীকার করাটা ছিল চূড়ান্ত বার্তা। ভারতীয় দল জানায়, তারা মঞ্চে উপস্থিত থাকা এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ড-এর ভাইস-চেয়ারম্যান খালিদ আল জারুনির মতো অন্য কোনো অফিসিয়ালের কাছ থেকে ট্রফি নিতে প্রস্তুত ছিল, কিন্তু নাকভি সেই সুযোগ দেননি।


নাটকীয় মুহূর্ত ও শেষ পরিণতি

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। ভারতীয় দল স্টেজের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেও, নাকভি মঞ্চে উপস্থিত থাকায় তারা এগিয়ে যাননি। এই সময় গ্যালারিতে থাকা ভারতীয় সমর্থকরাও নাকভির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এক নাটকীয় মুহূর্তে, চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটি মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত পুরস্কার—যেমন ম্যাচ সেরা (Player of the Match)টুর্নামেন্ট সেরা (Player of the Tournament)—প্রদান করা হলেও, এশিয়া কাপের মূল ট্রফিটি ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি।

উপস্থিত দর্শকদের কাছে এবং বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে এই দৃশ্য ছিল এক চরম অস্বস্তির। একটি চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি ছাড়াই বিজয় উদযাপন করল! পরে ভারতীয় ক্রিকেটাররা একটি কাল্পনিক ট্রফি নিয়ে নিজেদের মতো করে বিজয়োল্লাস করেন, যা ক্রিকেট ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।


ক্রিকেটের জন্য অশনি সংকেত?

এই ঘটনা কেবল একটি ক্রিকেট ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী বিতর্ক নয়। এটি খেলার আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের গুরুতর ইঙ্গিত দেয়। ভারতের এই সিদ্ধান্ত যেখানে একদল মানুষের কাছে 'জাতীয় মর্যাদা' রক্ষার প্রতীক, সেখানে অন্য অনেকের কাছে এটি খেলার স্পিরিট এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়মের প্রতি অসম্মান

পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা এই ঘটনাকে 'ক্রিকেটের প্রতি অসম্মান' বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) সচিব দেবাজিৎ সাইকিয়া নাকভির আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং ট্রফি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই বিষয়ে ভবিষ্যতে আইসিসি-এর সভায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হতে পারে।

খেলার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের যে সুযোগ এশিয়া কাপ এনেছিল, এই বিতর্ক তা অনেকটাই ম্লান করে দিল। খেলার মঞ্চে যখন বারবার রাজনৈতিক বিভাজন ফুটে ওঠে, তখন ক্রিকেটপ্রেমীরা স্বভাবতই হতাশ হন। এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলল: খেলা আর রাজনীতিকে কি সত্যিই আলাদা রাখা সম্ভব? আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে এই ধরনের তিক্ততা এড়াতে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url