Cyber ​​Cafe Business: সাইবার ক্যাফে ব্যবসা শুরু করতে চান জেনে নিন সম্পূর্ণ তথ্য

 Cyber ​​Cafe Business |  সাইবার ক্যাফে ব্যবসা শুরু করতে চান জেনে নিন সম্পূর্ণ তথ্য


সাইবার ক্যাফে ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও ব্যক্তিগত স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে এর চাহিদা কিছুটা কমেছে, তবুও সরকারি কাজ, ফর্ম ফিলাপ, গেমিং এবং প্রিন্টিং-এর জন্য এটির গুরুত্ব এখনও আছে।
আপনার সাইবার ক্যাফে ব্যবসা সফল করার জন্য নিচে একটি পরিকল্পনা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:

সাইবার ক্যাফে ব্যবসার পরিকল্পনা

১. স্থান নির্বাচন (Location)

সঠিক স্থান নির্বাচন ব্যবসার সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • কোথায় চালু করবেন: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিস বা কোর্ট-কাচারীর কাছাকাছি স্থান নির্বাচন করুন। এই স্থানগুলোতে গ্রাহকের আনাগোনা বেশি থাকে।

  • কেমন স্থান: এমন জায়গা বাছুন যেখানে সহজেই পৌঁছানো যায় এবং ভালো পরিমাণে পথচারীর যাতায়াত আছে (High Footfall)।

২. প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (Essential Equipment)

প্রাথমিক সরঞ্জাম নির্বাচনে গুণগত মান বজায় রাখতে হবে।

  • কম্পিউটার: ভালো মানের প্রসেসর, পর্যাপ্ত RAM এবং উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার (রাউটার, সুইচ) সহ কমপক্ষে ৫-১০টি কম্পিউটার দিয়ে শুরু করতে পারেন। গেমিংয়ের জন্য উন্নত গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত পিসি রাখতে পারেন।

  • প্রিন্টার ও স্ক্যানার: মাল্টি-ফাংশনাল (প্রিন্ট, স্ক্যান, ফটোকপি) কালার এবং সাদা-কালো প্রিন্টার/ফটোকপি মেশিন রাখুন।

  • অন্যান্য: ইউপিএস (UPS) বা জেনারেটর (বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য), আরামদায়ক চেয়ার ও টেবিল, এয়ার কন্ডিশনার (যদি প্রয়োজন হয়) এবং সিসিটিভি ক্যামেরা।

  • সফটওয়্যার: বৈধ লাইসেন্সযুক্ত অপারেটিং সিস্টেম (যেমন Windows) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার (যেমন Microsoft Office, Photoshop) ব্যবহার করুন।

৩. লাইসেন্স ও আইনি সম্মতি (Legal Compliance)

আইনিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা আবশ্যক। ভারতে সাইবার ক্যাফে পরিচালনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুসরণ করতে হয়।

  • ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন: আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম রাজ্য সরকারের কাছে নথিভুক্ত করুন।

  • লাইসেন্স: ট্রেড লাইসেন্স স্থানীয় পৌর সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের থেকে নিতে হবে।

  • ইউজার আইডি এবং লগ রেজিস্টার: প্রতিটি গ্রাহকের পরিচয়পত্র (যেমন আধার কার্ড, ভোটার আইডি) যাচাই করা এবং লগ রেজিস্টার (নাম, ঠিকানা, আইডি, লগইন-লগআউট সময়, কোন পিসি ব্যবহার হচ্ছে) সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা বাধ্যতামূলক।

  • সাইবার সিকিউরিটি: অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করতে কন্টেন্ট ফিল্টারিং সফটওয়্যার ব্যবহার এবং সিস্টেম সেটিংস পরিবর্তন করার ক্ষমতা গ্রাহকদের থেকে সীমিত রাখুন।

  • অন্যান্য: জিএসটি রেজিস্ট্রেশন (যদি প্রযোজ্য হয়), এবং স্থানীয় ফায়ার সেফটি (দমকল) ও বিল্ডিং পারমিট সংক্রান্ত নিয়মাবলী মেনে চলুন।

৪. পরিষেবা এবং আয়ের উৎস (Services & Revenue Streams)

শুধু ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, আয়ের উৎস বাড়ান।

  • মূল পরিষেবা: ইন্টারনেট ব্রাউজিং, প্রিন্টিং (কালার ও সাদা-কালো), ফটোকপি, স্ক্যানিং, ল্যামিনেশন, স্পাইরাল বাইন্ডিং।

  • অনলাইন পরিষেবা: সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ফর্ম ফিলাপ, ই-টিকিট বুকিং, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, প্যান কার্ড, আধার কার্ড সংক্রান্ত কাজ, অনলাইন ট্যাক্স পেমেন্ট, অনলাইন মানি ট্রান্সফার।

  • অতিরিক্ত পরিষেবা: কম্পিউটার গেমিং, ছোটখাটো কম্পিউটার রিপেয়ারিং বা সফটওয়্যার ইনস্টলেশন, শিক্ষামূলক কোর্স বা ওয়ার্কশপ।

  • খাবার ও পানীয়: ছোট স্ন্যাকস, চা, কফি বা বোতলজাত পানীয় বিক্রি করতে পারেন।


সফলতার টিপস:

  • দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উচ্চ গতির এবং স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ। গ্রাহকরা ধীর গতির ইন্টারনেট একেবারেই পছন্দ করবে না।

  • কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ: কম্পিউটারগুলি নিয়মিত আপডেট ও মেরামত করুন এবং ভাইরাসমুক্ত রাখুন। দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য ভালো টেকনিক্যাল জ্ঞান বা টেকনিশিয়ানের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: ক্যাফের পরিবেশ যেন আরামদায়ক এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়। ভালো আলো এবং ergonomic (আরামদায়ক) আসবাবপত্র ব্যবহার করুন।

  • মার্কেটিং: স্থানীয়ভাবে প্রচার করুন। আশেপাশে স্কুল/কলেজের ছাত্র-ছাত্রী বা ছোট ব্যবসার জন্য বিশেষ ছাড় দিন। অনলাইনে আপনার ব্যবসার নাম এবং পরিষেবাগুলি তালিকাভুক্ত করুন।

  • গ্রাহক সম্পর্ক: গ্রাহকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পেশাদার সম্পর্ক বজায় রাখুন। প্রয়োজনে তাদের সহায়তা করুন।

এই পরিকল্পনাগুলো ধাপে ধাপে অনুসরণ করলে সাইবার ক্যাফে ব্যবসা থেকে আপনি ভালো আয় করতে পারবেন।

সাইবার ক্যাফে ব্যবসা শুরু করতে কত টাকার প্রয়োজন হয়

সাইবার ক্যাফে ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ নির্ভর করে আপনি কত বড় আকারে ব্যবসাটি শুরু করতে চান এবং কোথায় শুরু করতে চান তার ওপর। স্থান, সরঞ্জামের গুণগত মান এবং পরিষেবার ধরনের ওপর খরচ কম-বেশি হতে পারে।

একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার জন্য নিচে বিভিন্ন খাতে খরচের একটি আনুমানিক তালিকা দেওয়া হলো:

১. প্রাথমিক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তিগত খরচ (Initial Equipment & Tech Cost)

খরচের খাতআনুমানিক খরচ (কমপক্ষে)নোট
কম্পিউটার (৫টি)₹ ১,৫০,০০০ - ₹ ২,৫০,০০০+(প্রতিটি সাধারণ মানের পিসি ₹ ৩০,০০০ - ₹ ৫০,০০০, গেমিং পিসি হলে আরও বেশি)
প্রিন্টার, স্ক্যানার, ফটোকপি মেশিন₹ ২৫,০০০ - ₹ ৫০,০০০(কালার ও সাদা-কালো মাল্টি-ফাংশনাল)
ইউপিএস (UPS)₹ ১০,০০০ - ₹ ২০,০০০(বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাকআপের জন্য)
নেটওয়ার্কিং (রাউটার, সুইচ, কেবল)₹ ৫,০০০ - ₹ ১০,০০০(উচ্চ গতির ইন্টারনেটের জন্য)
ফার্নিচার (টেবিল, চেয়ার, পার্টিশন)₹ ৩০,০০০ - ₹ ৫০,০০০(৫টি পিসির জন্য)
মোট সরঞ্জাম খরচ₹ ২,২০,০০০ - ₹ ৩,৮০,০০০+

২. পরিচালন ও আইনি খরচ (Operational & Legal Cost)

খরচের খাতআনুমানিক খরচনোট
স্থান ভাড়া/লিজ₹ ২০,০০০ - ₹ ১,০০,০০০+(অ্যাডভান্স/সিকিউরিটি ডিপোজিট, যা সাধারণত ২-৩ মাসের ভাড়া)
স্থান সাজসজ্জা/সংস্কার (Interior)₹ ২০,০০০ - ₹ ৫০,০০০+(প্রয়োজন অনুসারে)
লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি₹ ৫,০০০ - ₹ ১৫,০০০(ট্রেড লাইসেন্স, GST রেজিস্ট্রেশন, ইত্যাদি)
প্রাথমিক ওয়্যার্কিং ক্যাপিটাল₹ ২৫,০০০ - ₹ ৫০,০০০(প্রথম মাসের ভাড়া, বিল, ইন্টারনেট বিল, কনজিউমেবলস ইত্যাদি)
মোট অন্যান্য খরচ₹ ৭০,০০০ - ₹ ১,৬৫,০০০+

মোট প্রাথমিক বিনিয়োগের একটি রেঞ্জ

মোটের ওপর, একটি ছোট সাইবার ক্যাফে (৫ থেকে ৭টি পিসি সহ) শুরু করতে আপনার কমপক্ষে ₹ ৩,০০,০০০ থেকে ₹ ৫,০০,০০০ (তিন লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা) বা তার বেশি প্রয়োজন হতে পারে।

খরচ কমানোর উপায়:

  • পুরোনো পিসি: আপনি যদি কম দামে পুরনো বা রিকন্ডিশনড (Refurbished) কম্পিউটার কিনতে পারেন, তবে হার্ডওয়্যার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

  • ছোট পরিসরে শুরু: কম পিসি এবং কম অতিরিক্ত পরিষেবা দিয়ে শুরু করলে প্রাথমিক পুঁজি অনেক কম লাগবে। কিছু ভিডিওতে ₹ ৪০,০০০ থেকে ₹ ৫০,০০০ এর মতো কম খরচে ছোট আকারের সাইবার ক্যাফে বা পরিষেবা কেন্দ্র শুরু করার কথাও বলা হয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে পিসির সংখ্যা ও মানের ক্ষেত্রে আপস করতে হতে পারে।

আপনার ব্যবসার ধরন ও লক্ষ্য কী, তার ওপর ভিত্তি করে আপনি আপনার বাজেট পরিকল্পনা করতে পারেন।

সাইবার ক্যাফে ব্যবসা শুরু করতে কোন কোন মেটেরিয়াল গুলি কিনতে হয়

সাইবার ক্যাফে ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বা মেটেরিয়ালগুলিকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

১. কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্কিং (Computer Hardware & Networking)

ব্যবসার মূল উপাদান হল কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগের পরিকাঠামো।

  • কম্পিউটার/ওয়ার্কস্টেশন (Client PCs):

    • ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ (শুরুর জন্য কমপক্ষে ৫-১০টি)।

    • ভালো প্রসেসর, পর্যাপ্ত RAM (৮ জিবি বা তার বেশি), এবং SSD/HDD স্টোরেজ।

    • গেমিংয়ের জন্য হলে, অবশ্যই উচ্চমানের গ্রাফিক্স কার্ড।

  • মনিটর: ১৮.৫ ইঞ্চি বা তার বেশি আকারের LCD/LED মনিটর।

  • কিবোর্ড এবং মাউস: প্রতিটি পিসির জন্য আরামদায়ক ও টেকসই কিবোর্ড ও মাউস।

  • হেডফোন/মাইক্রোফোন: VoIP কল বা গেমিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয়।

  • সার্ভার পিসি (ঐচ্ছিক): একাধিক পিসি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি প্রধান কম্পিউটার।

  • নেটওয়ার্কিং সরঞ্জাম:

    • রাউটার/মডেম: উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের জন্য।

    • নেটওয়ার্ক সুইচ: সব পিসিকে একসাথে যুক্ত করার জন্য।

    • ইথারনেট কেবল (CAT 5e/CAT 6): নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের জন্য।

  • ওয়েবক্যাম: যদি ভিডিও কলিং বা অনলাইন ইন্টারভিউ-এর মতো পরিষেবা দেন।

২. প্রিন্টিং, স্ক্যানিং এবং আনুষঙ্গিক (Printing & Peripherals)

সাইবার ক্যাফের আয়ের বড় একটি অংশ আসে এই পরিষেবাগুলো থেকে।

  • মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার (MFP):

    • কালার প্রিন্টার: ফটো বা রঙিন প্রিন্টের জন্য (বিশেষ করে ইঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রিন্টার, যা সাশ্রয়ী)।

    • সাদা-কালো লেজার প্রিন্টার: দ্রুত এবং বেশি পরিমাণে সাদা-কালো প্রিন্টের জন্য।

  • ফটোকপি মেশিন: ফটোকপির পরিষেবা দেওয়ার জন্য।

  • স্ক্যানার: ডকুমেন্ট স্ক্যান করার জন্য (MFP-তে বিল্ট-ইন থাকলে আলাদা করে না কিনলেও চলে)।

  • ল্যামিনেশন মেশিন: ডকুমেন্ট ল্যামিনেট করার জন্য।

  • স্পাইরাল বাইন্ডিং মেশিন: বাইন্ডিংয়ের পরিষেবা দেওয়ার জন্য।

৩. বিদ্যুৎ সরবরাহ ও নিরাপত্তা (Power & Security)

  • ইউপিএস (UPS): প্রতিটি পিসির জন্য বা একটি কেন্দ্রীয় বড় ইউপিএস (বিদ্যুৎ চলে গেলে ডেটা সেভ করার জন্য ও সার্ভার চালু রাখার জন্য)।

  • জেনেটর বা ইনভার্টার (ঐচ্ছিক): দীর্ঘ সময়ের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য।

  • পাওয়ার স্ট্রিপ/এক্সটেনশন বক্স: অতিরিক্ত সকেট এবং সুরক্ষার জন্য।

  • সিসিটিভি ক্যামেরা: নিরাপত্তা এবং গ্রাহক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য।

৪. আসবাবপত্র এবং পরিকাঠামো (Furniture & Infrastructure)

  • কম্পিউটার টেবিল/ওয়ার্কস্টেশন: পিসি সেটআপের জন্য উপযুক্ত আকারের মজবুত টেবিল।

  • চেয়ার: আরামদায়ক ও ergonomic চেয়ার (দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার জন্য)।

  • পার্টিশন/কিউবিকেল: প্রতিটি পিসির জন্য কিছুটা ব্যক্তিগত স্থান তৈরি করার জন্য (সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পার্টিশনের উচ্চতা ৪.৫ ফুটের বেশি হওয়া উচিত নয়)।

  • এসি বা ফ্যান: পরিবেশ আরামদায়ক রাখার জন্য।

  • ক্যাশ কাউন্টার: বিলিং ও গ্রাহক পরিষেবা প্রদানের জন্য।

৫. সফটওয়্যার এবং লাইসেন্সিং (Software & Licensing)

  • অপারেটিং সিস্টেম (OS): Windows বা Linux (লাইসেন্সড OS ব্যবহার করা উচিত)।

  • অফিস স্যুট: Microsoft Office (Word, Excel) বা বিনামূল্যে পাওয়া যায় এমন LibreOffice।

  • অন্যান্য সফটওয়্যার: Antivirus, PDF রিডার, এবং ফটো এডিটিং সফটওয়্যার (যেমন Photoshop)।

  • সাইবার ক্যাফে ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার: সময় ট্র্যাক করা এবং বিলিং পরিচালনার জন্য (যেমন Cyber Cafe Pro)।

  • আইনি ডকুমেন্ট: ট্রেড লাইসেন্স, GST রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আইনি কাগজপত্রের ফাইল।

এই সমস্ত মেটেরিয়াল বা সরঞ্জাম আপনার ব্যবসার প্রাথমিক সেটআপের জন্য প্রয়োজন হবে।

একটি সাইবার ক্যাফেতে কোন কোন কাজ গুলি হয়ে থাকে

একটি আধুনিক সাইবার ক্যাফেতে শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছাড়াও আরও বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে। মূলত, এটি একটি বহু-উদ্দেশ্যমূলক কেন্দ্র, যেখানে কম্পিউটিং এবং ডকুমেন্ট-সংক্রান্ত সব ধরনের পরিষেবা পাওয়া যায়।

একটি সাইবার ক্যাফেতে সাধারণত যে কাজগুলি সম্পন্ন হয়, সেগুলির একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

১. ইন্টারনেট এবং কম্পিউটিং সংক্রান্ত কাজ

  • ইন্টারনেট ব্রাউজিং: উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়েবসাইট দেখা, তথ্য অনুসন্ধান এবং অনলাইন গবেষণা করা।

  • ইমেল পরিষেবা: ইমেল অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, চেক করা এবং অফিসিয়াল বা ব্যক্তিগত যোগাযোগ করা।

  • ভিডিও স্ট্রিমিং: ইউটিউব, নেটফ্লিক্স বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ভিডিও দেখা।

  • অনলাইন ডেটা স্টোরেজ: ক্লাউড স্টোরেজে ফাইল আপলোড বা ডাউনলোড করা।

  • অফিসিয়াল কাজ: জরুরি ডকুমেন্ট তৈরি বা এডিট করার জন্য MS Word, Excel, PowerPoint-এর মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করা।

২. গেমিং এবং বিনোদন

  • অনলাইন গেমিং: বিশেষ করে গেমিং নির্ভর সাইবার ক্যাফেগুলিতে মাল্টিপ্লেয়ার গেম (যেমন PUBG, Valorant, Free Fire ইত্যাদি) খেলার জন্য উচ্চমানের কম্পিউটার ব্যবহার করা।

  • সফটওয়্যার বা গেম ডাউনলোড: প্রয়োজন অনুযায়ী সফটওয়্যার বা গেম ডাউনলোড করার সুবিধা।

৩. ডকুমেন্ট এবং ফাইল পরিষেবা

  • প্রিন্টিং:

    • সাদা-কালো এবং রঙিন প্রিন্ট আউট।

    • বিভিন্ন ধরনের কাগজে (যেমন সাধারণ A4, গ্লসি পেপার) প্রিন্ট করার সুবিধা।

  • ফটোকপি (জেরক্স): বিভিন্ন ডকুমেন্ট, বই বা কাগজের দ্রুত ফটোকপি করা।

  • স্ক্যানিং: যেকোনো ছবি বা লিখিত ডকুমেন্ট স্ক্যান করে ডিজিটাল ফাইলে (PDF বা JPEG) রূপান্তর করা।

  • ল্যামিনেশন: ডকুমেন্ট নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে সেগুলিকে প্লাস্টিকের কভার দিয়ে মুড়ে দেওয়া।

  • বাইন্ডিং: রিপোর্ট, প্রজেক্ট বা অন্যান্য ডকুমেন্ট স্পাইরাল বা অন্যান্য পদ্ধতিতে বাঁধাই করা।

  • ফ্যাক্স পরিষেবা: ফ্যাক্স আদান-প্রদান করা (যদিও এখন এর ব্যবহার কমে গেছে)।

৪. অনলাইন আবেদন এবং সরকারি কাজ

  • চাকরি/পরীক্ষার আবেদন: সরকারি বা বেসরকারি চাকরির জন্য অনলাইন ফর্ম পূরণ করা, ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করা।

  • সরকারি পোর্টালের কাজ: আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড সংক্রান্ত যেকোনো সংশোধন বা নতুন আবেদনের কাজ।

  • টিকিট বুকিং: ট্রেন, বাস বা বিমানের টিকিট অনলাইনে বুক করা।

  • শিক্ষা সংক্রান্ত: স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড, রেজাল্ট দেখা বা ফি জমা দেওয়া।

  • বিল পরিশোধ: বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, জলের বিল বা অন্যান্য অনলাইন পেমেন্ট করা।

৫. ডেটা ট্রান্সফার ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট

  • ডেটা ট্রান্সফার: মোবাইল ফোন, মেমরি কার্ড বা পেনড্রাইভ থেকে কম্পিউটারে ফাইল কপি করা বা ডেটা ট্রান্সফার করা।

  • সিডি/ডিভিডি রাইটিং: ফাইল বা ডেটা সিডি বা ডিভিডি-তে বার্ন (Burn) করা।

  • সফটওয়্যার ইনস্টলেশন: গ্রাহকের অনুরোধে কিছু নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ইনস্টলেশনে সহায়তা করা।

সাইবার ক্যাফেতে কাজ করার জন্য কোন কোন পোর্টাল গুলি নিতে হয়

সাইবার ক্যাফেতে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন কাজ করার জন্য আপনাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পোর্টাল (Portal) বা এজেন্টের আইডি (Agent ID) নিতে হবে। এই পোর্টালগুলি আপনার আয়ের প্রধান উৎস হতে পারে।

পোর্টালগুলি মূলত আপনি কোন ধরনের পরিষেবা গ্রাহকদের দেবেন, তার ওপর নির্ভর করে। প্রধান কয়েকটি প্রয়োজনীয় পোর্টাল নিচে উল্লেখ করা হলো:


সাইবার ক্যাফেতে প্রয়োজনীয় মূল পোর্টালসমূহ

১. সরকারি ফর্ম ফিলাপ ও পরিষেবা পোর্টাল (Government Service Portals)

যদিও এই পোর্টালগুলো সাধারণত সরাসরি ব্যবহার করা যায়, তবে অনেক সময় বিশেষ সুবিধা বা দ্রুত পরিষেবা দেওয়ার জন্য কিছু লাইসেন্সড এজেন্সির মাধ্যমে কাজ করতে হয়।

  • জাতীয় পরিষেবা পোর্টালসমূহ:

    • প্যান কার্ড (PAN Card): NSDL এবং UTIITSL-এর মতো এজেন্সির মাধ্যমে নতুন প্যান কার্ড বা সংশোধনের জন্য এজেন্টের আইডি নিতে পারেন। এতে ফর্ম পূরণের কাজ সহজ হয়।

    • আধার পরিষেবা: UIDAI-এর নিয়ম অনুযায়ী আধার তালিকাভুক্তি এবং সংশোধনের কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট লাইসেন্স এবং সরকারি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

    • ভোটার কার্ড: নতুন আবেদন বা সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ECI) অফিসিয়াল পোর্টাল ব্যবহার করা হয়।

  • চাকরি ও শিক্ষা পোর্টাল: বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পরীক্ষার অনলাইন আবেদন পোর্টাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজের ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন পোর্টাল

২. অনলাইন মানি ট্রান্সফার ও বিল পেমেন্ট পোর্টাল (Financial & Utility Portals)

মানি ট্রান্সফার এবং বিল পেমেন্টের জন্য কিছু মাল্টি-সার্ভিস পোর্টাল সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কাজের। এই পোর্টালগুলোর জন্য আপনাকে ডিস্ট্রিবিউটর বা মাস্টার ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে এজেন্টের আইডি নিতে হবে।

  • AEPS (Aadhaar Enabled Payment System) পোর্টাল: এই পোর্টালগুলির মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের আধার কার্ড এবং আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা, ব্যালেন্স চেক এবং মানি ট্রান্সফারের সুবিধা দিতে পারবেন। জনপ্রিয় কয়েকটি পোর্টাল:

    • Spice Money

    • Paytm Payments Bank BC

    • Fino Payments Bank BC

    • PayNearby

  • বিল পেমেন্ট (BBPS): বিদ্যুৎ বিল, জল বিল, গ্যাস বিল, মোবাইল রিচার্জ, DTH রিচার্জ ইত্যাদি পেমেন্টের জন্য এই একই পোর্টালে (যেমন Spice Money বা PayNearby) BBPS (Bharat Bill Payment System) পরিষেবা যুক্ত থাকে।

৩. ট্রাভেল ও টিকিট বুকিং পোর্টাল (Travel & Booking Portals)

  • IRCTC এজেন্ট আইডি: ট্রেন বা রেলের টিকিট বুক করার জন্য IRCTC-এর অনুমোদিত এজেন্ট আইডি নেওয়া লাভজনক। এর জন্য নির্দিষ্ট ফি লাগে, তবে প্রতিটি টিকিট বুকিংয়ে কমিশন পাওয়া যায়।

  • ফ্লাইট/বাস বুকিং: বাস বা বিমান টিকিট বুকিংয়ের জন্য MakeMyTrip, RedBus, EaseMyTrip ইত্যাদির মতো পোর্টালগুলোর এজেন্ট আইডি নিতে পারেন।

৪. ইনস্যুরেন্স এবং অন্যান্য (Insurance & Others)

  • ইনস্যুরেন্স পোর্টাল: জীবন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা বা মোটর গাড়ির বীমার প্রিমিয়াম সংগ্রহের জন্য বা নতুন পলিসি বিক্রি করার জন্য কিছু ইনস্যুরেন্স সংস্থার (যেমন LIC, HDFC Life) এজেন্ট আইডি নিতে পারেন।


কিছু অতিরিক্ত টিপস

  • একাধিক পোর্টাল: ব্যবসা শুরুর সময় ২-৩টি ভালো AEPS/BBPS পোর্টাল-এর আইডি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ অনেক সময় একটি পোর্টাল কাজ না করলে অন্যটি ব্যবহার করা যায়।

  • পোর্টাল যাচাই: এজেন্ট আইডি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নেওয়ার আগে কোম্পানির বৈধতা, কমিশনের হার এবং গ্রাহক পরিষেবা অবশ্যই ভালোভাবে যাচাই করে নিন।

  • নিরাপত্তা: সমস্ত আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সাইবার সুরক্ষা (Cyber Security) এবং সরকারি নিয়মাবলী কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

আপনি যদি কম বিনিয়োগে শুরু করতে চান, তবে প্রথমে শুধুমাত্র একটি নির্ভরযোগ্য মাল্টি-সার্ভিস পোর্টাল (যেমন Spice Money) এবং প্যান কার্ড এজেন্টের আইডি নিয়ে শুরু করতে পারেন।

সাইবার ক্যাফে ব্যবসায় লাভের পরিমাণ কত

সাইবার ক্যাফে ব্যবসার লাভের পরিমাণ অনেকগুলি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, তাই এর কোনো নির্দিষ্ট অঙ্ক বলা সম্ভব নয়। তবে, সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিচালনার মাধ্যমে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।

লাভের পরিমাণ প্রধানত নির্ভর করে চারটি মূল বিষয়ের ওপর:


১. আয়ের প্রধান উৎস (Sources of Revenue)

আধুনিক সাইবার ক্যাফেতে এখন আর শুধু ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর ওপর নির্ভর করলে চলে না। লাভ বাড়াতে হলে আপনাকে বহুবিধ পরিষেবা দিতে হবে।

আয়ের উৎসলাভের মার্জিন (আনুমানিক)
ডকুমেন্ট পরিষেবা (প্রিন্ট, ফটোকপি, স্ক্যান)৩০% - ৬০% (সবচেয়ে লাভজনক বিভাগ)
অনলাইন ফর্ম ফিলাপ ও সরকারি কাজ৫০% - ৯০% (প্রতিটি কাজের নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জ)
কম্পিউটার/ইন্টারনেট ব্যবহার (ঘণ্টা প্রতি)২০% - ৪০% (খরচ (বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট) বাদ দিয়ে)
অন্যান্য পরিষেবা (ল্যামিনেশন, বাইন্ডিং, টিকিট বুকিং)৪০% - ৮০%
মানি ট্রান্সফার ও বিল পেমেন্ট১% - ২% (লেনদেনের পরিমাণের ওপর কমিশন)

২. মাসিক আয়ের একটি আনুমানিক ধারণা

যদি আপনি একটি মাঝারি আকারের সাইবার ক্যাফে (৫-৭টি পিসি) পরিচালনা করেন এবং উপরে উল্লিখিত সব ধরনের পরিষেবা দেন, তবে মাসিক আয়ের একটি ধারণা নিম্নরূপ হতে পারে:

খরচের খাতমাসিক আয় (আনুমানিক)
নিম্নতম আয় (কম গ্রাহক বা ছোট এলাকা)₹ ১৫,০০০ থেকে ₹ ২৫,০০০
মাঝারি আয় (ভালো লোকেশন, সব পরিষেবা)₹ ৩০,০০০ থেকে ₹ ৪৫,০০০+
উচ্চ আয় (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে, গেমিং সুবিধা সহ)₹ ৫০,০০০ থেকে ₹ ১,০০,০০০+

মনে রাখবেন, এটি মোট আয় নয়, বরং আয়ের সম্ভাবনা। এর থেকে আপনার মাসিক খরচ বাদ দেওয়ার পরই প্রকৃত লাভ বের হবে।


৩. লাভ নির্ধারণকারী মূল ফ্যাক্টরসমূহ

লাভের পরিমাণ কমানো বা বাড়ানোর পেছনে এই কারণগুলো সরাসরি জড়িত:

ক. লোকেশন (Location)

  • কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি: ফর্ম ফিলাপ, প্রোজেক্ট প্রিন্ট, অ্যাসাইনমেন্টের কাজ বেশি হয়।

  • সরকারি অফিস বা আদালতের কাছে: ফটোকপি, হলফনামা বা অন্যান্য সরকারি কাজের জন্য গ্রাহক বেশি আসে।

  • মার্কেট বা জনবহুল এলাকা: গ্রাহকের আনাগোনা বেশি থাকলে লাভ দ্রুত বাড়ে।

খ. মাসিক খরচ (Monthly Expenses)

আপনার লাভের পরিমাণ সরাসরি এই খরচগুলির ওপর নির্ভর করে। এই খরচগুলি যত কমাতে পারবেন, লাভ তত বাড়বে:

  • দোকান ভাড়া: (সবচেয়ে বড় খরচ)

  • বিদ্যুৎ বিল: (কম্পিউটার ও এসি/ফ্যানের জন্য একটি বড় খরচ)

  • ইন্টারনেট বিল: (হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ডের খরচ)

  • কর্মচারীর বেতন: (যদি কর্মী রাখেন)

  • সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ: (কম্পিউটার বা প্রিন্টার মেরামত)

গ. বহুমুখী পরিষেবা (Diversified Services)

যেসব সাইবার ক্যাফে শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নির্ভর না করে অনলাইন ফর্ম ফিলাপ, প্যান/আধার সংক্রান্ত কাজ, টিকিট বুকিং, ফটোকপি এবং দ্রুত প্রিন্টিং পরিষেবা দেয়, তাদের লাভের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। কারণ প্রিন্টিং এবং ফর্ম ফিলাপে লাভের মার্জিন (Profit Margin) খুব বেশি থাকে।

সংক্ষেপে, সাইবার ক্যাফে ব্যবসা এখনও লাভজনক হতে পারে, তবে তা নির্ভর করবে আপনার দোকানের অবস্থান, পরিষেবার বৈচিত্র্য এবং আপনার দক্ষতার ওপর। শুধুমাত্র ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে এখন লাভ করা কঠিন, তাই অনলাইন সরকারি এবং ডকুমেন্ট পরিষেবাগুলিতে বেশি মনোযোগ দিন।

সাইবার ক্যাফে ব্যবসায় কিভাবে প্রতিদিন ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করা যাবে

সাইবার ক্যাফে ব্যবসা থেকে প্রতিদিন ভালো পরিমাণ টাকা আয় করার জন্য শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নির্ভর না করে পরিষেবার বহুমুখীকরণ (Diversification) এবং দক্ষতার (Efficiency) ওপর জোর দিতে হবে।

আপনার দৈনিক আয় বাড়ানোর জন্য নিচে কিছু কৌশল এবং পরিষেবা উল্লেখ করা হলো:


১. লাভজনক পরিষেবাগুলিতে মনোনিবেশ করুন (Focus on High-Margin Services)

ইন্টারনেট ব্যবহারের চেয়ে প্রিন্টিং, ফটোকপি এবং ফর্ম পূরণের মতো কাজগুলিতে লাভের মার্জিন অনেক বেশি থাকে।

  • ডকুমেন্ট পরিষেবা: এটি সাইবার ক্যাফের আয়ের প্রধান উৎস।

    • দ্রুত ও মানসম্পন্ন প্রিন্ট: সাদা-কালো (Black & White), রঙিন (Color) এবং উচ্চ-মানের ফটো প্রিন্টারের মাধ্যমে ভালো মূল্য নিন।

    • ল্যামিনেশন ও বাইন্ডিং: রিপোর্ট, প্রোজেক্ট বা সরকারি ডকুমেন্ট ল্যামিনেট ও স্পাইরাল বাইন্ডিং-এর জন্য চার্জ নিন।

    • ফটোকপি ও স্ক্যানিং: দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ফটোকপি ও স্ক্যানিং পরিষেবা দিন।

  • অনলাইন আবেদন ও ফর্ম ফিলাপ: এটি এখন সাইবার ক্যাফের সবচেয়ে লাভজনক কাজ।

    • চাকরির ফর্ম: সরকারি ও বেসরকারি চাকরির অনলাইন আবেদন।

    • সরকারি পরিষেবা: প্যান কার্ড (নতুন আবেদন ও সংশোধন), ভোটার কার্ড (সংশোধন), আধার (যদিও এর জন্য বিশেষ লাইসেন্স লাগে, তবুও অন্যান্য সম্পর্কিত কাজ), ট্রেনের টিকিট বুকিং (IRCTC এজেন্টের আইডি নিয়ে)।

    • শিক্ষা সংক্রান্ত: কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন এবং পরীক্ষার ফর্ম পূরণের কাজগুলি দক্ষতার সাথে করুন। প্রতিটি কাজের জন্য পরিষেবা ফি (Service Charge) নিন।

২. গেমিং এবং বিনোদন (Gaming & Entertainment)

যদি আপনার ক্যাফেটি যুবকদের কাছাকাছি বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে হয়, তবে গেমিং একটি বড় আয়ের উৎস হতে পারে।

  • গেমিং জোন: ২/৩টি উচ্চ-ক্ষমতার (High-End) গেমিং পিসি সেটআপ করুন। সাধারণ ব্রাউজিং চার্জের চেয়ে গেমিং-এর জন্য প্রতি ঘণ্টায় বেশি চার্জ করুন।

  • টুর্নামেন্ট আয়োজন: মাঝে মাঝে স্থানীয় স্তরে গেমিং টুর্নামেন্টের আয়োজন করুন। এতে প্রচার বাড়বে এবং খেলোয়াড়দের ভিড় বাড়বে।

৩. অতিরিক্ত এবং আনুষঙ্গিক পরিষেবা (Ancillary Services)

ছোট ছোট এই পরিষেবাগুলি দৈনিক আয় বাড়াতে সাহায্য করে।

  • মানি ট্রান্সফার ও বিল পেমেন্ট: AEPS/BBPS পোর্টাল-এর মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জ, ডিটিএইচ রিচার্জ, বিদ্যুৎ বিল ও জলের বিল পেমেন্ট এবং মানি ট্রান্সফারের সুবিধা দিন। এতে প্রতিটি লেনদেনে কমিশন পাওয়া যায়।

  • স্টেশনারি বিক্রি: প্রিন্টিং পেপার, পেন, ফোল্ডার, ফাইলের মতো স্টেশনারি জিনিসপত্র বিক্রি করুন।

  • সফটওয়্যার সাপোর্ট: গ্রাহকদের মোবাইলের ডেটা ট্রান্সফার, সফটওয়্যার ইনস্টলেশন বা ভাইরাস সরানোর মতো ছোটখাটো প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য অতিরিক্ত চার্জ নিন।


৪. দক্ষতা এবং গ্রাহক পরিষেবা (Efficiency & Customer Service)

দৈনিক আয় স্থিতিশীল রাখতে গ্রাহক ধরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

  • দ্রুততা: যত দ্রুত আপনি গ্রাহকের কাজ শেষ করবেন, তত বেশি গ্রাহককে পরিষেবা দিতে পারবেন। ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং নির্ভুল করার চেষ্টা করুন।

  • সময় ব্যবস্থাপনা: আপনার ব্যস্ততম সময়গুলি (Peak Hours) চিহ্নিত করুন এবং সেই সময়গুলিতে দ্রুত গ্রাহকদের পরিষেবা দিন।

  • মাসিক পাস/প্যাকেজ: যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার বা গেমিং করেন, তাদের জন্য মাসিক বা সাপ্তাহিক প্যাকেজ চালু করুন। এতে নিয়মিত আয়ের একটি নিশ্চয়তা তৈরি হবে।

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: ক্যাফের পরিবেশ আরামদায়ক ও পরিচ্ছন্ন রাখুন। এতে গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন এবং বারবার আসবেন।

৫. খরচ নিয়ন্ত্রণ (Cost Control)

লাভ বাড়ানোর জন্য আয় বাড়ানোর পাশাপাশি খরচ কমানোও জরুরি।

  • বিদ্যুৎ সাশ্রয়: অব্যবহৃত পিসি বন্ধ রাখুন। উচ্চ বিদ্যুত সাশ্রয়ী মনিটর এবং এলইডি আলো ব্যবহার করুন।

  • গুণগত মান: কম দামে নিম্নমানের কালি বা প্রিন্টিং পেপার ব্যবহার করবেন না। এতে প্রিন্টারের ক্ষতি হতে পারে এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়ে যেতে পারে। ভালো মানের সরঞ্জাম ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদে খরচ কম রাখা যায়।

সঠিক লোকেশনে উপরে উল্লিখিত একাধিক পরিষেবা চালু করতে পারলে এবং গ্রাহক পরিষেবা ভালো হলে আপনি সাইবার ক্যাফে ব্যবসা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ₹ ১,০০০ থেকে ₹ ২,০০০ বা তার বেশি আয় করতে পারবেন।

সাইবার ক্যাফে তে কোন কাজের জন্য কত টাকা পাওয়া যায়

সাইবার ক্যাফেতে প্রতিটি কাজের জন্য আয়ের পরিমাণ স্থান (Location), ব্যবসার ধরন (সার্ভিস নাকি গেমিং) এবং প্রতিযোগিতার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। শহরের কেন্দ্র, কলেজ ক্যাম্পাস বা সরকারি অফিসের কাছাকাছি থাকা ক্যাফেগুলিতে সাধারণত বেশি চার্জ নেওয়া হয়।

নীচে সাইবার ক্যাফেতে প্রধান কাজগুলির জন্য একটি আনুমানিক রেট চার্ট দেওয়া হলো:


১. কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহার

পরিষেবার ধরনআনুমানিক চার্জ (প্রতি ঘণ্টা)নোট
সাধারণ ব্রাউজিং₹ ২০ - ₹ ৪০(শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সাধারণ কাজ)
গেমিং (হাই-এন্ড পিসি)₹ ৪০ - ₹ ৭০(উচ্চ গ্রাফিক্সের গেম খেলার জন্য বেশি চার্জ)
অল্প সময়ের ব্যবহার (১৫-৩০ মিনিট)₹ ১০ - ₹ ২০(সাধারণত ন্যূনতম চার্জ হিসাবে নেওয়া হয়)

২. প্রিন্টিং, স্ক্যানিং এবং ফটোকপি

প্রিন্টিং হলো সাইবার ক্যাফের সবচেয়ে লাভজনক পরিষেবাগুলির মধ্যে অন্যতম।

পরিষেবার ধরনআনুমানিক চার্জ (প্রতি পেজ)লাভের মার্জিন (আনুমানিক)
সাদা-কালো প্রিন্ট (Black & White Print)₹ ৫ - ₹ ১০(পিডিএফ থেকে প্রিন্ট, প্রথম পাতা সাধারণত বেশি)
রঙিন প্রিন্ট (Color Print)₹ ১০ - ₹ ৩০(ছবির গুণগত মান ও কাগজের ওপর নির্ভর করে)
ফটোকপি (জেরক্স) - B&W₹ ২ - ₹ ৫(পেজের সংখ্যা বাড়লে চার্জ কম হয়)
স্ক্যানিং (Scanning)₹ ৫ - ₹ ১০(ডকুমেন্ট স্ক্যান করে ইমেল বা পেনড্রাইভে দেওয়া)
পাসপোর্ট সাইজ ছবি₹ ২০ - ₹ ৫০(৪-৮ কপি ছবির জন্য)

৩. ডকুমেন্ট ফিনিশিং এবং অন্যান্য পরিষেবা

পরিষেবার ধরনআনুমানিক চার্জ (প্রতি আইটেম)নোট
ল্যামিনেশন (কার্ড সাইজ)₹ ১০ - ₹ ২০(প্যান বা আধার কার্ড ল্যামিনেশন)
ল্যামিনেশন (A4 সাইজ)₹ ৩০ - ₹ ৫০
স্পাইরাল বাইন্ডিং₹ ৩০ - ₹ ১০০+(পাতার সংখ্যার ওপর নির্ভর করে)
CD/DVD রাইটিং₹ ২০ - ₹ ৫০

৪. অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ও সরকারি কাজ (সার্ভিস চার্জ)

এই কাজগুলিতে দক্ষতার কারণে একটি অতিরিক্ত "সার্ভিস চার্জ" নেওয়া হয়। লাভের পরিমাণ এখানে সবচেয়ে বেশি।

কাজের ধরনআনুমানিক সার্ভিস চার্জ (ফি বাদে)
চাকরির ফর্ম/পরীক্ষার আবেদন₹ ১০০ - ₹ ৩০০+
প্যান কার্ড আবেদন (নতুন/সংশোধন)₹ ১৫০ - ₹ ২৫০
আধার কার্ড ডাউনলোড ও প্রিন্ট₹ ২০ - ₹ ৫০
ভোটার কার্ড/রেশন কার্ড সংশোধন₹ ১০০ - ₹ ২০০
ট্রেনের টিকিট বুকিং₹ ৩০ - ₹ ৬০ (প্রতি টিকিট)
মোবাইল/DTH রিচার্জলেনদেনের ১% - ২% কমিশন
মানি ট্রান্সফারলেনদেনের ১% - ১.৫% কমিশন

লাভ বাড়ানোর কৌশল:

  • প্যাকেজ অফার: ফর্ম ফিলাপের সাথে প্রিন্ট, স্ক্যান এবং ফটো এডিটিং-এর খরচগুলিকে এক প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নির্দিষ্ট মূল্য নিন। যেমন, "সম্পূর্ণ ফর্ম ফিলাপ প্যাকেজ: ₹ ২৫০"।

  • নিয়মিত গ্রাহকদের ছাড়: যারা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের জন্য মাসিক বা সাপ্তাহিক সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান দিন।

  • বিক্রয় (Upselling): কেউ ফটোকপি করতে এলে তাকে ল্যামিনেশন বা বাইন্ডিং-এর অফার দিন।

মনে রাখবেন, আপনাকে সর্বদা আপনার স্থানীয় বাজারের প্রতিযোগিতামূলক মূল্যগুলির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url