ভাইফোঁটাতে তোমার বোনকে এই উপহারটি দাও, সে খুশি হয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরবে

ভাইফোঁটাতে তোমার বোনকে এই উপহারটি দাও, সে খুশি হয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরবে

ভাই-বোনের সম্পর্কের মধুরতা এবং ভালোবাসা উদযাপনের জন্য ভাই-দুজের উৎসব একটি বিশেষ উপলক্ষ। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং ভাইয়েরা ভালোবাসার উপহার দিয়ে তাদের মন জয় করে। যদি আপনি ভাবছেন যে এই ভাই-দুজে আপনার বোনকে কী দেবেন, তাহলে এখানে কিছু দুর্দান্ত উপহারের ধারণা দেওয়া হল যা সে কেবল ভালোবাসবে না বরং আনন্দের সাথে আপনাকে জড়িয়ে ধরবে।

ভাই দুজে (Bhai Phota) বোনকে কী উপহার দেবেন তা নিয়ে ভাবছেন? আপনার বাজেট ও বোনের পছন্দের কথা মাথায় রেখে এখানে রইল কিছু দারুণ উপহারের আইডিয়া:

১. পার্সোনালাইজড বা ব্যক্তিগত ছোঁয়া সহ উপহার:

  • ফটো ফ্রেম বা অ্যালবাম: আপনাদের একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তের ছবি দিয়ে একটি ফটো ফ্রেম বা স্ক্র্যাপবুক তৈরি করে দিতে পারেন।

  • কাস্টমাইজড মগ বা কুশন: বোনের ছবি বা আপনাদের দুজনের কোনো বিশেষ উক্তি (quote) প্রিন্ট করে কফি মগ বা কুশন দিতে পারেন।

  • নাম লেখা গয়না: বোনের নাম বা নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে পেনডেন্ট সহ নেকলেস বা ব্রেসলেট এখন খুব জনপ্রিয়।

২. ফ্যাশন এবং অ্যাকসেসরিজ:

  • গয়না: বোনের পছন্দ অনুযায়ী কানের দুল, নেকপিস, আংটি বা ব্রেসলেট দিতে পারেন। সেটা অক্সিডাইজড, সিলভার বা গোল্ড প্লেটেড হতে পারে।

  • হাতব্যাগ বা পার্স: একটা ভালো মানের স্টাইলিশ হ্যান্ডব্যাগ, স্লিং ব্যাগ বা ক্লাচ (clutch) যেকোনো মেয়েরই খুব পছন্দের।

  • ঘড়ি: একটি সুন্দর হাতঘড়ি একটি ক্লাসিক এবং খুব প্রয়োজনীয় উপহার।

  • পোশাক বা স্কার্ফ: বোনের পছন্দের ব্র্যান্ডের কোনো পোশাক (যেমন কুর্তি, টপস) বা একটি সুন্দর ডিজাইনার স্কার্ফ বা স্টোল (stole) দিতে পারেন।

৩. সৌন্দর্য এবং প্রসাধনী (Beauty & Skincare):

  • মেকআপ কিট: বোন সাজতে ভালোবাসলে তাঁর পছন্দের ব্র্যান্ডের একটি মেকআপ কিট বা লিপস্টিক সেট উপহার দিন।

  • স্কিনকেয়ার হ্যাম্পার: বিভিন্ন ভালো ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, সিরাম এবং মাস্ক দিয়ে একটি স্কিনকেয়ার হ্যাম্পার বানিয়ে দিতে পারেন।

  • পারফিউম: একটি ভালো মানের সুগন্ধি বা পারফিউম সেটও খুব ভালো উপহার।

৪. গ্যাজেট এবং ইলেকট্রনিক্স:

  • ইয়ারবাডস বা হেডফোন: গান শুনতে ভালোবাসলে ভালো মানের ওয়্যারলেস ইয়ারবাডস বা হেডফোন দিতে পারেন।

  • ফিটনেস ব্যান্ড বা স্মার্টওয়াচ: বোন যদি স্বাস্থ্যসচেতন হয়, তবে একটি ফিটনেস ট্র্যাকার বা স্মার্টওয়াচ খুব ভালো বিকল্প।

  • পাওয়ার ব্যাঙ্ক: এটি আজকাল খুব প্রয়োজনীয় একটি গ্যাজেট।

৫. অন্যান্য আকর্ষণীয় উপহার:

  • চকোলেট এবং কেক: বিভিন্ন ধরণের ডার্ক চকোলেট, কুকিজ বা ফ্লেভারড চকোলেটের একটি সুন্দর বাক্স বা তাঁর পছন্দের ফ্লেভারের একটি কেক সবসময়ের সেরা উপহার।

  • গাছ: বোনের যদি গাছপালার শখ থাকে, তাহলে সুন্দর টব সহ ইনডোর প্ল্যান্ট (যেমন মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট) বা কোনো ফুলের চারা দিতে পারেন।

  • বই: আপনার বোন বই পড়তে ভালোবাসলে তাঁর পছন্দের লেখকের নতুন কোনো বই বা কোনো ক্লাসিক কালেকশন উপহার দিন।

  • গিফট ভাউচার: বোন কী পছন্দ করবে তা নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকলে, তাঁর পছন্দের কোনো দোকান, অনলাইন শপিং সাইট বা পার্লারের একটি গিফট ভাউচার দেওয়াই সেরা উপায়। এতে সে নিজের পছন্দমতো জিনিস কিনে নিতে পারবে।


সবচেয়ে বড় উপহার হলো আপনার ভালোবাসা ও সময়। উপহার যাই হোক না কেন, মন থেকে দিলেই তা বোনের কাছে স্পেশাল হয়ে উঠবে।

ভাইফোঁটা পালনের নিয়ম

ভাইফোঁটা হলো ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্কের এক মঙ্গল অনুষ্ঠান। এটি কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপুজোর দুদিন পর) পালিত হয়। এই অনুষ্ঠানে বোনেরা ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাদের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে।

ভাইফোঁটা পালনের মূল নিয়মাবলী ও পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:

ফোঁটার সময় ও প্রস্তুতি

১. স্নান ও উপবাস: ফোঁটা দেওয়ার আগে পর্যন্ত বোনেরা সাধারণত উপবাস রাখেন। ভাই ও বোন উভয়কেই স্নান সেরে পরিষ্কার বা নতুন পোশাক পরতে হয়। এই দিন কালো রঙের পোশাক এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।

২. আসন: ভাই বা দাদাকে বসার জন্য একটি আসন বা কাঠের পিঁড়ি (জলচৌকি) পেতে দিতে হয়। বোনকেও একটি আসনে বসে ফোঁটা দিতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে, ভাই যেন পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে বসে।

ভাইফোঁটার প্রয়োজনীয় উপকরণ

একটি কাঁসার বা পিতলের থালায় নিম্নলিখিত সামগ্রীগুলি সাজিয়ে নিতে হয়:

  • চন্দন বাটা

  • দই

  • কাজল

  • ধান (ধান্য)

  • দূর্বা ঘাস

  • জল (গঙ্গাজল হলে ভালো)

  • একটি প্রদীপ

  • ধূপ বা ধূপকাঠি

  • শঙ্খ

  • পান পাতা ও সুপারি

  • মিষ্টি (পাঁচ বা সাত রকমের) ও জল

  • ভাইয়ের জন্য উপহার (ঐচ্ছিক)

ফোঁটা দেওয়ার নিয়ম ও মন্ত্র

১. প্রদীপ জ্বালানো: প্রথমে প্রদীপ ও ধূপকাঠি জ্বালিয়ে থালাটি গুছিয়ে নিতে হয়।

২. ফোঁটা দান: বোন তার বাঁ হাতের কড়ে আঙুল (কনিষ্ঠা) বা অনামিকা (রিং ফিঙ্গার) দিয়ে প্রথমে চন্দন, তারপর দই এবং সবশেষে কাজলের ফোঁটা ভাইয়ের কপালে পরিয়ে দেয়।

৩. মন্ত্র পাঠ: ফোঁটা দেওয়ার সময় বোনকে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে হয়:

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।

(কিছু অঞ্চলে এর সাথে "যম যেমন পান অমরত্ব, আমার ভাইও যেন পায় অমরত্ব" বা "ভাই যেন হয় লোহার ভাঁটা" ইত্যাদি লাইনও যোগ করা হয়।)

৪. আশীর্বাদ: ফোঁটা দেওয়ার পর, ধান ও দূর্বা ভাইয়ের মাথায় ছুঁইয়ে তাকে আশীর্বাদ করতে হয়। এই সময় শঙ্খ বাজানো হয় এবং উলুধ্বনি দেওয়া হয়।

৫. মিষ্টিমুখ: এরপর বোন ভাইকে মিষ্টি ও জল খেতে দেয়।

৬. উপহার: বোন ভাইকে এবং ভাই বোনকে উপহার দেয়।

অন্যান্য নিয়মাবলী

  • ভাইয়ের উপবাস: কিছু পরিবারে ভাইকেও ফোঁটা নেওয়ার আগে পর্যন্ত উপবাস রাখার নিয়ম আছে।

  • ভোজ: ফোঁটা পর্ব শেষ হলে বোনেরা তাদের উপবাস ভাঙে। এরপর ভাইয়ের পছন্দের নানা পদ রান্না করে দুপুরে এক জমকালো ভোজের আয়োজন করা হয়।

ভাইফোঁটা দেওয়ার সময় কোন মন্ত্র বলতে হয়

ভাইফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে এই মন্ত্রটি বলেন:

"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,

যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,

আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥"

কিছু কিছু অঞ্চলে এই মন্ত্রের সাথে আরও কিছু লাইন যোগ করা হয়, যেমন:

"যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর,

আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥"

পরিবার ও অঞ্চলভেদে এই ছড়া বা মন্ত্রের সামান্য পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু মূল ভাবনাটি একই থাকে—বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে যমের (মৃত্যুর দেবতা) দুয়ারে কাঁটা বা বাধা স্থাপন করে।

ভাইফোঁটা স্ট্যাটাস এবং কবিতা

ভাইফোঁটা উপলক্ষে এখানে কিছু সুন্দর স্ট্যাটাস এবং কবিতা দেওয়া হলো। আপনি আপনার পছন্দ মতো বেছে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে (যেমন WhatsApp, Facebook, Instagram) শেয়ার করতে পারেন বা আপনার ভাই/বোনকে পাঠাতে পারেন।

ভাইফোঁটা স্ট্যাটাস (Bhai Phota Status)

১. ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥

শুভ ভাইফোঁটা। ❤️

২. ছোটবেলার খুনসুটি থেকে বড়বেলার ভরসা... ভাই-বোনের এই মিষ্টি সম্পর্ক অটুট থাকুক সারাজীবন। শুভ ভ্রাতৃদ্বিতীয়া।

৩. তুই আমার ভাই, আমার বন্ধু, আমার সবথেকে বড় সাপোর্টার। তোর জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। শুভ ভাইফোঁটা।

(বোনেরা ভাইদের জন্য)

৪. তোর কপাল জুড়ে থাক আমার মঙ্গলকামনা, তোর জীবন আলোয় ভরে উঠুক। অনেক বড় হ, অনেক সুখী হ।

শুভ ভাইফোঁটা, ভাই।

৫. আমার জীবনের সবথেকে বড় আশীর্বাদ হলো তোর মতো একজন বোন পাওয়া। তোর ফোঁটা আমার বর্ম। শুভ ভাইফোঁটা।

(ভাইয়েরা বোনেদের জন্য)

৬. চন্দন, ধান, দূর্বা আর অনেক অনেক মিষ্টি... ভাই-বোনের ভালোবাসার এই উৎসব সকলের খুব ভালো কাটুক। শুভ ভাইফোঁটা।

৭. সম্পর্কটা ঝগড়ার, সম্পর্কটা আদরের, সম্পর্কটা ভালোবাসার। ভাই-বোনের এই পবিত্র বন্ধন চিরকাল অটুট থাকুক।

৮. দূরে থাকলেও মন পড়ে আছে তোর কাছে। আমার আশীর্বাদ আর ভালোবাসা সবসময় তোর সাথে আছে। শুভ ভাইফোঁটা।


ভাইফোঁটা কবিতা (Bhai Phota Poems)

কবিতা ১: ফোঁটা

চন্দনের ফোঁটা, আর ভায়ের কপাল,

আদর দিলাম ঢেলে আজ এই সকাল।

ধান-দূর্বা মাথায় দিয়ে করি আশীর্বাদ,

তোর জীবন হোক দীর্ঘ, না আসুক অবসাদ।

যমের দুয়ারে কাঁটা দিয়ে, তোকে রাখব ঘিরে,

ফিরে আসিস আমার কাছে, যতই থাকিস দূরে।

শুভ ভাইফোঁটা, ভাই।

কবিতা ২: ভাই-বোনের দিন

সারা বছর যতই চলুক ঝগড়া আর মারামারি,

আজকের দিনে তোর সাথে একটুও আড়ি নয়।

মিষ্টিমুখ, উপহার, আর অনেক ভালোবাসা,

তোর কপালে ফোঁটা দিয়ে, জানাই মনের আশা।

সুখী থাকিস, ভালো থাকিস, এইটুকুই শুধু চাই,

দুনিয়ার সব আনন্দ যেন, একাই তুই পাস, ভাই।

কবিতা ৩: অটুট বাঁধন

ধান, দূর্বা, চন্দনে

সাজিয়ে দিলাম ডালা,

আজ ভাইয়ের কপালে ফোঁটা

পরিয়ে বোনের মালা।

এই বাঁধন ছিঁড়বে না কভু,

থাকবে চিরকাল,

শুভ হোক ভাইফোঁটা

আজ এবং কাল।

কবিতা ৪: বোনের ফোঁটা (ভাইয়ের তরফে)

সকাল থেকে উপোস করে, প্রদীপ জ্বেলে ঘরে,

বোন আমার ফোঁটা দেবে চন্দনের আদরে।

তোর ফোঁটা আমার কপালে বর্ম হয়ে থাকে,

বিপদ যতই আসুক আমায়, নেয় সে আগলে রাখে।

বোন রে আমার, তুই যে আমার ছোট্ট একটা মা,

সারাজীবন এভাবেই দিস স্নেহের একটু ছায়া।

শুভ ভাইফোঁটা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url