সত্যজিৎ রায়ের লেখা বিখ্যাত সিনেমা পথের পাঁচালী তে অপু নামের বাচ্চাটি কে ছিলেন

 সত্যজিৎ রায়ের লেখা বিখ্যাত সিনেমা পথের পাঁচালী তে অপু নামের বাচ্চাটি কে ছিলেন




 পথের পাঁচালীর প্রি-প্রোডাকশনের সময়ে সত্যজিৎ রায়ের অপুর চরিত্রের জন্য পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী ছেলেদের চেয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন বেশকিছু ছেলে অডিশনের জন্য এসেছিল কিন্তু তাদের কেউ পরিচালকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি অবশেষে সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়ীদের অ্যাপার্টমেন্টের পাশের একটি বিল্ডিং এর ছাদে ছোট্ট একটি ছেলেকে খেলতে দেখেন অনেক সময় ধরে খুব ভালো করে লক্ষ্য করেন এবং তারপর বাড়ির চাকরকে দিয়ে ছেলেটাকে ডেকে পাঠান তাকে দেখে এবং একটি দু'টি প্রশ্ন করে তৎক্ষণাৎ মানিকবাবু মনে মনে স্থির করেন এই ছেলেটি হবে অপু .



সেই ছেলে আর কেউ নয় সুবীর ব্যানার্জি যাকে আমরা শেষ পর্যন্ত ছবিতে অপুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখতে পাই সুবীর বাবুদের বাড়ি ছিল লেকটাউনে সত্যজিৎ রায় সুবির বাবুর মায়ের কাছে অনুমতি চান ছেলেকে অভিনয় করতে দেওয়ার জন্য কিন্তু পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে বাবা কিছুটা নিমরাজি ছিলেন কিন্তু সত্যজিৎ রায় তাকে বলেন টুডে নবান্ন ইউ এন্ড মি. ফিল্ম চেঞ্জ বেঙ্গলি সিনেমা অল অফ বেঙ্গল উইল নত 5 অর্থাৎ আজ হয়তো আমাকে এবং আপনার ছেলেকে কেউ চেনে না কিন্তু আমি এমন একটি সিনেমা বানাতে চলেছি যেটা পুরো বাংলা সিনেমা কি পরিবর্তন করে দেবে তখন গোটা বাংলা আমাদের চিনবে যদিও সত্যজিৎ রায়ের তখন এতটা নাম ছিল না তথাপি পারিবারিক দিক থেকে সম্মান কোন অংশে কম ছিলনা তাই মানিকবাবু অর্থাৎ সত্যজিৎ রায়ের অনুরোধ এবং এই কথার পর আর না বলতে পারলেন না সুবির বাবুর বাবা মা তারপরে 952 থেকে 1954 সাল পর্যন্ত শুটিং চলতে থাকে .


 এর মধ্যে টাকা পয়সার অভাবে শুটিং বন্ধ ছিল প্রায় একবছর অ্যান্ড্রিউ রবিনসন তার সত্যজিৎ রায় তারাই বইতে বর্ণনা করেছেন যে হাজার 952 সালে পথের পাঁচালী শুটিং এর শুরুতে সুবীর ব্যানার্জির কোনরকম অভিনয় অভিজ্ঞতা ছিল না কাজেই একদম আনকোরা ছোট্ট শিশুকে দিয়ে অভিনয় করাটা অনেকটা বুদ্ধি খাটাতে হয়েছিল সত্যজিৎ রায় এবং তার দিন যেমন ধরুন শুট করা প্রথম দৃশ্য দেখছিল অপু এবং তার বড় বোন দুর্গাকে নিয়ে একটি দৃশ্য যেখানে একজন রুণ অভিনেত্রী ওমা দাশগুপ্ত অপুর দিদির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কাশবনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং দূর থেকে একটি ট্রেনের আভাস পাচ্ছেন 230 জন্য বুকে থেমে থেমে হাঁটতে হবে এবং তার দিদিকে খুঁজতে হবে যাই হোক সুবিরবাবু কোন অভিনয় অভিজ্ঞতা ছাড়া থেমে থেমে হাঁটার ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না  .


তাই তার পথে ছোট ছোট বাধা রাখা হয়েছিল যাতে হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে থামতে হয় অপুকে এছাড়াও কিছু সদস্য কাশবনের বিভিন্ন অংশের লুকিয়ে ছিলেন এবং সুবির বাবু কে নির্দিষ্ট সময় ডাক দিয়েছিলেন যাতে সুবিরবাবু মাঝে মাঝে সেই দিকে দেখেন এবং যার ফলে হাঁটতে হাঁটতে থামা এবং এদিকে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজছেন এই দৃশ্যটি দর্শকদের সামনে যেন পরিস্ফুট হয় এবং হয়েছিল তাই অর্থের সমস্যার কারণে ছবিটির শুটিং শিডিউল বাধাগ্রস্ত হয়েছিল দীর্ঘ আট মাসেও বেশি সময় ধরে শুটিং বন্ধ ছিল শুটিং বন্ধের জন্য সত্যজিৎ রায় অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় পড়ে যান শহীদ বাবুকে নিয়ে কারণ শুটিং শুরু করতে বেশি দিন দেরি হলে অসুবিধা শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেবে তার গলার স্বর.


পরিবর্তন ঘটবে যেটা ছবির ধারাবাহিকতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে কিন্তু সৌভাগ্যবশত তার কিছুই হয়নি পথের পাঁচালীর পর ছবির ব্যানার্জি কি আর কোন ছবিতে দেখা যায়নি বহুবছর আলী তিনি উধাও ইন্ডিয়া টুডের একটি ম্যাগাজিন তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে এবং হাজার 980 সালের মার্চ মাসে পথের পাঁচালী এন্ড সিডি ভিসিডি নামে একটি নিবন্ধে তার বিবরণ প্রকাশ করে সেই সময় তিনি কলকাতার শহরতলীতে একটি কারখানায় মেইল হ্যান্ড হিসেবে কাজ করতেন এনডিটিভির একটি প্রতিবেদন অনুসারে সুবীর ব্যানার্জি কেন্দ্রীয় সরকারের একটি অফিসে কেরানীর চাকরী করছিলেন এবং পরে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেছিলেন কয়েক বছর আগে ইটিভি বাংলা একটি প্রোগ্রামে শেষবার দেখা গিয়েছিল সুবীর ব্যানার্জিকে এছাড়া আরও বিশেষ তেমন কিছু তথ্য সুবির ব্যানার্জি সম্পর্কে নেট মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি 2012 সালের ডিসেম্বর মাসের একটি তথ্য অনুযায়ী সুবির বাবুর বয়স 69 বছর সেই হিসাবে 2022 সালে তিনি বর্তমানে 79 বছরের এক বৃদ্ধ .

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url