Adani Group Down: আদানিরা কী ভাবে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ তৈরি করল?

 


Adani Group Down: আদানিরা কী ভাবে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ তৈরি করল?

কেউ বলছেন, তিনি জাতির ‘দ্বিতীয় জনক’। কেউ বা বলছেন আগের জন্মে তিনিই ছিলেন বিবেকানন্দ। কেউ আবার আর এক কাঠি এগিয়ে তাঁকে মনে করছেন ‘কল্কি অবতার’, হিন্দু ধর্মকে বিনাশ থেকে বাঁচাতে ধরাধামে এসেছেন। কারও আবার মনে হয়েছে, তিনিই স্বয়ং রামচন্দ্র। রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্যই জন্মেছেন।

শাস্ত্রবাক্য তো মিথ্যা হওয়ার নয়! স্বদেশে রাজা পুজো পাবেন, এ আর নতুন কথা কী! তবে এই পুজোর মধ্যেও কেমন যেন আঁশটে গন্ধ রয়েছে। কারণ রাজাকে যাঁরা পুজো করছেন, তাঁরা তো ঠিক সাধারণ মানুষ নন। রাজার জনহিতকর বিভিন্ন কাজে উপকৃত হয়ে গোটা দেশ রাজার জয়ধ্বনি করছে, এমনটা তো দেশে ঘটছে না। যাঁরা ভোটে নির্বাচিত শাসককে দেবতা-অবতার ইত্যাদি বানিয়ে ফেলে বাণী প্রদান করছেন, তাঁদের দিকেই তাকালেই সত্যিটা বোঝা যাবে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই যে তাঁরা এই কাজ করছেন, এ ব্যাপারে কারও কোনও সংশয় নেই।  



মানুষও জানেন, এই স্তাবকতা শুধু নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়। আজ তিনি যাঁকে দেবতা বলছেন, কাল দলবদলে তিনিই তাঁকে দানব বলে উঠেতে বসতে গালি পাড়ছেন, এমন উদাহরণও নিতান্ত কম নেই। তাই তাঁদের কাছে এ সব কথার কানাকড়িও মূল্যও নেই। তবু দু’কান কাটা স্তাবকদের দমিয়ে রাখা মুশকিল। কারণ তাঁরাও জানেন, যাঁর উদ্দেশে এই সব কথা বলা হচ্ছে, তিনি এ ধরনের কথাই শুনতে চান। অন্য রকম কথা তাঁর খুব অপছন্দ। 

আর এই অপছ্ন্দের কথা যে বা যাঁরা বলে ফেলেন, তাঁদের কী করে শিক্ষা দিতে হয় তা-ও তিনি বার বারই দেখিয়ে চলেছেন। নীতিনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য যাদের বিশ্বজোড়া সুনাম, সেই বিবিসি তাদের সাম্প্রতিক তথ্যচিত্রে সেই সব ‘শিক্ষা পাওয়া’ হতভাগ্য মানুষদের সাক্ষাৎকার তুলে এনে দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের শাসকের আসল রূপটা কী রকম। স্বদেশেও রাজা কতটা পুজো পান, কী রকম ভাবে রাজ্যপাট চালান— তা বিশ্ববাসী দেখে ফেলেছে বিবিসি-র দৌলতে। বিবিসি-র ওই তথ্যচিত্র দেশের মানুষ যাতে দেখে না ফেলেন, তার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে ক্ষিপ্ত শাসকেরা। একটা তথ্যচিত্র যে দেবতা-অবতারদেরও হাড়ে কাঁপুনি ধরাতে পারে, তা দেখে সাধারণ মানুষের চোখ কপালে উঠেছে!

কুনাট্যের অবশ্য শেষ নেই। শাসকের প্রিয়তম বেওসায়ি আদানিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। তাদের অভিযোগ, কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে বিপুল সম্পদ তৈরি করেছে আদানি গোষ্ঠী। অভিযোগ উঠতেই হু হু করে পড়েছে দেশের শেয়ার বাজার। সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ে তৈরি জীবনবিমা নিগম বা স্টেট ব্যাঙ্কও আদানি কাণ্ডে বড় ধাক্কা খেয়েছে। দেশের অর্থনীতিরও টালমাটাল অবস্থা। অন্য দেশ হলে অর্থমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হত। কিন্তু সাধারণ মানুষের সর্বস্ব যায় যাক, দেবতা-অবতারদের কাছে এই প্রশ্ন তুলবে কে! যিনি এই অর্থনীতির কুফল নিয়ে বার বার শাসকের সমালোচনা করে গিয়েছেন, সেই বিশ্বখ্যাত বিদ্বান মানুষটিকে আপাতত ১৩ ডেসিমেল জমি জবরদখলের অভিযোগে দাগিয়ে দেওয়ার কাজেই আপাতত ব্যস্ত শাসকেরা। 



আদানিরা কী ভাবে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ তৈরি করল, তার তদন্তের চেয়ে অমর্ত্য সেনের বাড়ির ১৩ ডেসিমেল জমির তদন্তই তো আগে হওয়া দরকার! এর আগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা নয়ছয় নিয়ে এক সাংবাদিকের রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগেছিল শাসক দল। পরে ওই সাংবাদিক নিজের রিপোর্টটি ভুল বলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমা চাওয়া তো শাসকের ধর্ম নয়! এ বার তাই তাদের অস্ত্র ১৩ ডেসিমেল জমি। অর্থনীতি ভেঙে পড়ুক ক্ষতি নেই, আগে সাজা দিতে হবে সমালোচক অর্থনীতির শিক্ষককেই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url