Be it marriage or cohabitation: বিয়ে হোক বা একত্রবাস, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত

বিয়ে হোক বা একত্রবাস, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত


বিয়ে ও একত্রবাস, উদ্দেশ্য একই:

বিয়ে হোক বা একত্রবাস, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তে যদি আমরা সহযোগিতা না করতে পারি, অন্তত নির্লিপ্ত থাকার অভ্যাসটি অন্তত থাকা দরকার!

বিয়ে না একত্রবাস (লিভ-ইন), তর্কে বহুদূর।— তর্কটাই ভিত্তিহীন। বস্তুত, দু’টি বিষয়েরই উদ্দেশ্য, এক সঙ্গে জীবন শুরু করা। দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পারস্পরিক সম্মতিতে বিয়ে করবেন না একত্রবাস, সেটা তাঁদের সিদ্ধান্ত। কোনও সিদ্ধান্তই অকাট্য নয়। তবে লড়াই একটা আছে, তা সমাজের স্বস্তিবৃত্তের বাইরে কোনও পদক্ষেপ দেখলে যাঁরা রে রে করে তেড়ে আসেন, তাঁদের বিরুদ্ধে। দু’টির উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষিত যে প্রায় এক এবং দু’টির সামাজিক অবস্থাটি কী, আমরা সেটাই একটু নেড়েচেড়ে দেখতে পারি।

তবে তার আগে, এটা আমাদের মনে হতে পারে, সময়ের সঙ্গে সামাজিক পরিবর্তনগুলি কতটা খোলা মনে গ্রহণ করতে পারছি, সে দিকে নজর দেওয়া দরকার। মনে পড়তে পারে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কর্তার কীর্তি’ গল্পটি। তাতে তিনের দশকের কর্তা মানতে পারে না, ছেলে কেন উনিশ বছরের আইএ পাশ করা ধেড়ে মেয়ে বিয়ে করবে। তেমনই, যুবকের ঠিক মতো চাকরি না থাকার কারণে প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যায় সম্পন্ন ঘরে, পাঁচের দশকে ‘এই, আমি রেণু’ উপন্যাসে এই আখ্যান লেখেন সমরেশ মজুমদার। মোদ্দা ব্যাপার, দু’টি মানুষ ভালবেসে এক সঙ্গে থাকবে। এ নিয়ে কেন সমাজের চোখরাঙানি?

এ প্রসঙ্গ উঠলেই সমাজ, একত্রবাস ও বিয়ে, এই তিনটির মধ্যে স্থানিক সমীকরণটি নিয়েও আগ্রহ জন্মায়। সরকারি ছাপ মারা কাগজকে সঙ্গী করে, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলকে জানিয়ে যৌথ-জীবন শুরু হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ সমাজের অনুমোদন নিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন জীবন। পাশাপাশি, একত্রবাসে বিশ্বাসীরা ভাবছেন, ভালবেসে জীবন শুরু করছি। এখানে সমাজের শিলমোহরের দরকার নেই। বিবাহ-বিশ্বাসীদের যুক্তি, সকলকে সঙ্গে করে জীবন গুছিয়ে নিতে চাই। দু’পক্ষের যুক্তিতেই সমস্যা নেই। 

সমস্যাটা সমাজকে নিয়েই। বাংলা একটি ওয়েব সিরিজ়ের প্রসঙ্গ চর্চায় আসতে পারে। মফস্‌সলের মেয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দীর্ঘ দিনের সঙ্গীর সঙ্গে একটা বছর একত্রবাস করতে চাইছে। উত্তরে শুনছে, ও সব এখানে হয় না। এই যে ‘ও সব’ বলে দাগিয়ে দেওয়া, এর নেপথ্যে সমাজ নিয়ন্ত্রিত ভাবনার একটি জায়গা রয়েছে। আর সে ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে যৌনতার ধারণা। বস্তুত, সমাজের বড় অংশেরই ধারণা, একত্রবাস আদতে অবাধ, যথেচ্ছ, দায়িত্বহীন, উদ্দাম যৌনতার ছাড়পত্র। তবে উল্টো দিকে, এ-ও যে সত্যি, এই ছাড়পত্র বিয়ের ফলে মিলছে, তবে তা হচ্ছে সমাজ-স্বীকৃত।

সমাজের পাশাপাশি যে কোনও সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে নিরাপত্তা কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে। সমাজে বিয়ে একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে জড়িয়ে সামাজিক, আইনি নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। তুলনায় একত্র বাস একটি নতুন ধারণা। ফলে, এ নিয়ে আশঙ্কা, দ্বিধা থাকবেই। কিন্তু সে দ্বিধা কখনও অপপ্রচারের রূপ নেয়। এই অপপ্রচার থেকেই হয়তো আরও বেশি করে একত্রবাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া মেয়েটি সব থেকে বেশি প্রশ্নের মুখে পড়ে। প্রতি পদে তাকে বোঝানো হয়, ‘তুমি মেয়ে, তোমার নিরাপত্তার প্রয়োজন। লোকে খারাপ ভাবছে।’

অথচ, আইনি নিরাপত্তার কথা বললে, একত্রবাসেও রয়েছে রক্ষাকবচ। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ (এ) অর্থাৎ বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার এবং অনুচ্ছেদ ২১ তথা জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের আওতায় পড়ে একত্রবাস। ২০১৩-এ ‘প্রোটেকশন অব উইমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট, ২০০৫’-ও লাগু হয় একত্রবাসের ক্ষেত্রে। পরে যুক্ত হয় বিচ্ছেদের পরে খোরপোশের বিষয়টিও। এমনকি, ২০২২-এর জুনে সুপ্রিম কোর্ট এ-ও নির্দেশ দেয়, দীর্ঘদিনের একত্রবাসের ফলে হওয়া সন্তান আইনি ভাবে বৈধ। বাবার সম্পত্তিতেও তার অধিকার রয়েছে।

এ দিকে, যদি গার্হস্থ্য হিংসার কথা ধরা যায়, তা হলেও, বিয়ে ও একত্রবাসের মধ্যে বোধহয় খুব একটা ফারাক নেই! দিল্লিবাসী আফতাব যেমন একত্রবাসের সঙ্গিনীকে ৩৫ টুকরো করতে পারে, তেমনই শিলিগুড়ির আনসারুল তার ছ’বছরের বিবাহিত স্ত্রীকে দু’টুকরো করে খালের জলে ফেলে দিতে পারে। পাশাপাশি, একটি ‘নৈতিকতা’র প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে একত্রবাসকে বহুগামিতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। অথচ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয়। 

বরং এটা বলা চলে, যদি এক সঙ্গে থেকে দেখা যায় দু’জনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তবে অনেকটা সহজেই বেরিয়ে আসা যায় একত্রবাস থেকে। উল্টো দিকে, বিবাহ বিচ্ছেদ এখনও যন্ত্রণাময়। তাই এক আকাশ পরিমাণ জটিলতা নিয়েও কত দম্পতি এক ছাদের নীচে বাস করতে বাধ্য হয় এখনও।

অবেশেষে, ওই শুরুর কথাতেই ফিরে আসা যায়। বিয়ে হোক বা একত্রবাস, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তে যদি আমরা সহযোগিতা না করতে পারি, অন্তত নির্লিপ্ত থাকার অভ্যাসটি অন্তত থাকা দরকার! আর চাইতে পারি, যা-ই হোক না কেন, ভাল থাক সবাই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url