Divorce: বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরে নিজের স্বামীর কাছ থেকে কোন কোন অধিকার গুলি বুঝে নেবেন?
বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরে নিজের স্বামীর কাছ থেকে কোন কোন অধিকার গুলি বুঝে নেবেন?
তিক্ত অভিজ্ঞতায় হোক বা দু’পক্ষের সম্মতি নিয়ে, বিয়ে ভেঙে যাওয়া সব সময়েই স্বামী-স্ত্রীর মনে ছাপ রেখে যায়। কিন্তু তার মধ্যেও দু’পক্ষের অধিকার বুঝে নেওয়ার দিকটি নিশ্চিত করে আইন। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে। সে দিক থেকে কী কী সুবিধা মেলে, সে দিকেই চোখ রাখব আজ।
দাবি অনুযায়ী ভিন্ন:
আদালতের চোখে সব মহিলার অধিকার এক নয়। কোনও মহিলা স্বামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগের ভিত্তিতে (গ্রাউন্ডে) ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছেন এবং তাঁর আর্থ-সামাজিক অবস্থান কী, অধিকার বিচার করার আগে সেটাই প্রথম দেখে আদালত। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ের উপরে তা নির্ভর করতে পারে। যেমন—
১) কোনও মহিলা চাকরি করেন না, স্বামীর উপরে নির্ভরশীল।
২) কেউ চাকরি করেন না, নির্ভরশীল এবং সন্তান আছে।
৩) কেউ অতি সাধারণ চাকরি করেন।
৪) কেউ অতি সাধারণ চাকরি করেন এবং সন্তান আছে।
৫) কেউ আবার উঁচু পদে আসীন, বেতন খুব ভাল।
৬) কোনও মহিলার হয়তো সন্তান রয়েছে, কিন্তু বাড়িতে তাকে দেখার কেউ নেই।
৭) কেউ বিয়ের কারণে কেরিয়ারের কোনও বড় সুযোগ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
৮) কেউ নির্যাতিত হয়ে শ্বশুড় বাড়ি ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
৯) কাউকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
১০) কেউ স্বেচ্ছায় বেরিয়ে এসেছেন।
১১) কোনও মহিলার সন্তান খুব ছোট।
১২) সন্তান থাকলেও ফের বিবাহিত সম্পর্কে ঢোকার সম্ভাবনা আছে।
এ ধরনের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও ডিভোর্স চাওয়ার কারণ অনুযায়ী মহিলাদের বিভিন্ন দাবির ভিত্তিতেই তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত করে আদালত। যা এক একটি ডিভোর্স মামলার ক্ষেত্রে এক এক রকম।
স্ত্রী যা পেতে পারে:
১) ফৌজদারি কার্যবিধির (ক্রিমিনাল প্রসিডিয়োর কোড) ১২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী খোরপোষ পাওয়ার অধিকারী স্ত্রী ও সন্তান।
২) মামলা দায়ের করে ডিভোর্স বা বিবাহিত জীবনে ফেরার আবেদন জানানো যায়। সেই অনুযায়ী হিন্দু বিবাহ আইনের ২৪ নম্বর ধারায় অ্যালিমনি বা মামলা চালানোর খরচ পেতে পারেন।
৩) হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারায় পার্মান্যান্ট অ্যালিমনি পেতে পারেন।
৪) হিন্দু অ্যাডপশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স আইন অনুযায়ী স্বামীর কাছ থেকে ভরনপোষণ দাবি করতে পারেন।
৫) বিশেষ বিবাহ আইন অনুযায়ী অ্যালিমনি ও পার্মান্যান্ট অ্যালিমনি দাবি জানানো যায়।
৬) যত দিন না স্ত্রী আবার বিয়ে করছেন ততদিন স্বামীর রোজগারের এক পঞ্চমাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ খোরপোষ পেতে পারেন।
৭) জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আর্থিক ভাবে স্বামীর যে অবস্থান, সেই একই অবস্থান দাবি করতে পারেন স্ত্রী।
৮) স্ত্রীধন সম্পত্তি অর্থাৎ বাপের ও শ্বশুড় বাড়ি থেকে একজন মহিলা যা যা পেয়েছিলেন, সব ফেরত পেতে পারেন।
৯) যদি স্বামীর বাড়ি থেকে সম্পত্তি আটকে দেওয়া হয়, তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা করে তা ফেরত চাইতে পারেন। যেতে পারেন পুলিশেও।
৭) মিউচুয়াল কনসেন্ট বা সমঝোতার মাধ্যমে হওয়া ডিভোর্সেও এককালীন/থোক খোরপোষ চাওয়া যায়।
৮) ভরনপোষণ দাবি করতে পারেন।
৯) হিন্দু বিবাহ আইনের ২৬ নম্বর ধারায় সন্তানের অধিকার চাইতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতই নির্ধারণ করে, বাচ্চা কোথায় থাকলে তার ঠিক পরিচর্যা হবে ও সে সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
১০) সন্তান খুব ছোট হলে এবং মায়ের সাহচর্য প্রয়োজন হলে সেটা পেতে পারেন। দেখভালের খরচ দিতে হতে পারে বাবাকে। এ ক্ষেত্রেও বাচ্চার ভাল থাকাটাই আদালতের কাছে বিচার্য বিষয়। ফলে ঘটনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আলাদা হতে পারে।
পুরুষের অধিকার:
১) ফৌজদারি কার্যবিধিতে ১২৫ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারায় বলা রয়েছে, বিবাহিত মহিলা কোনও কারণ ছাড়া শ্বশুড়বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে বা স্বেচ্ছায় স্বামীর সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করলে অথবা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে তিনি খোরপোষ পাওয়ার অধিকারী হন। তবে মহিলা খোরপোষ পাবেন কি না অথবা পুরুষ খোরপোষ দেবেন কি না বা কী পরিস্থিতিতে দেবেন, সেটা আদালতের বিচার্য বিষয়। সে ক্ষেত্রে রায় যেতে পারে পুরুষের দিকেও।
২) হিন্দু বিবাহ আইনের ২৪ নম্বর ধারায় স্ত্রীর কাছে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে অ্যালিমনি চাইতে বা মামলা চালানোর উপযুক্ত খরচ দাবি করতে পারে। উপযুক্ত কারণ মানে, রোজগার নেই বা স্ত্রীর থেকে কম।
৩) হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারায় উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে পার্মান্যান্ট অ্যালিমনি দাবি করতে পারেন।
৪) আদালত যদি মনে করে সন্তান বাবার কাছেই বেশি ভাল থাকবে, দেখভাল, পরিচর্যা, লালন-পালন বেশি ভাল হবে, তা হলে সেই অধিকার দিতে পারে।
৫) সন্তান যদি খুব ছোট হয় যেখানে মায়ের সাহচর্য জরুরি, সেখানে এটা হতে পারে যে বাচ্চা থাকবে মায়ের কাছে, খরচ দেবেন বাবা। সন্তানকে দেখার অধিকারও দাবি করতে পারেন বাবা।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url