মেয়েদের অধিকার: বাবার সম্পত্তি, স্বামীর সম্পত্তি, বিবাহিত জীবন

 মেয়েদের অধিকার: বাবার সম্পত্তি, স্বামীর সম্পত্তি, বিবাহিত জীবন




মেয়েদের অধিকার:

আইনের হাত ধরে আমাদের সমাজে বেশ কিছু অধিকার পান মহিলারাও। জানাচ্ছেন জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
অনেক সময়েই মেয়েদের বাবার বা স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা আমাদের চোখে পড়ে। আইন জানা না-থাকায় ঠিকমতো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারেন না বহু মহিলাই। শুধু বাবাই কেন, বিয়ের আগে এবং পরে, এমনকি স্বামী মারা গেলেই বা সম্পত্তির দিক দিয়ে কতটা প্রাপ্য, সে জন্য কী করণীয় তা অনেকেই জানেন না। আজ সেই সব বিষয়েই আমাদের আলোচনা।

বাবার সম্পত্তিতে:

বিয়ের আগে হোক বা পরে, দু’ক্ষেত্রেই মেয়েরা বাবার সম্পত্তির সমান অধিকার পান। এ ক্ষেত্রে মেয়ের প্রাপ্য অধিকারগুলি হল—

• জন্মের মুহূর্ত থেকেই থাকতে পারেন বাবার বাড়িতে।
• বাবা আয় ও অবলম্বনহীন অবিবাহিতা মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলে বঞ্চনার অভিযোগে আদালতে যাওয়া যায়।
• বাবার সম্পত্তির হকদার। টাকা-পয়সা, জমি-বাড়ি, শেয়ার অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাই থাকুক না কেন, একক সন্তান হলে এবং মায়ের অবর্তমানে পুরোটারই দাবিদার মেয়ে।
• ভাই, বোন থাকলে আইন অনুসারে সম্পত্তি সকলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। সমান অংশ পাবেন মা-ও।
• বাবা মারা যাওয়ার আগেই দানপত্র বা পারিবারিক ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে গেলে তিনি মেয়েকে যতটা দেবেন, ততটাই পাবেন। না-দিলে পাবেন না।
• বাবা উইল করে মেয়েকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে আপত্তি জানানো যায়। উইলের প্রবেট নিতে যেতে হয় নির্দিষ্ট এলাকা বা ‘জুরিসডিকশন’-এর আদালতে। এ জন্য সমস্ত ভাই-বোন বা বাকি সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীদের আইনি নোটিস পাঠানো বাধ্যতামূলক। সেই সময়ে বঞ্চিত মেয়ে ওই নির্দিষ্ট আদালতে আপত্তি জানাতে পারেন।
• যত দিন না মেয়ের বিয়ে হচ্ছে, সাধারণত তত দিন মেয়েরা বাবার থেকে খোরপোষ পাওয়ার অধিকারী।
• বিয়ের পরেও বাবার বাড়ি ও সম্পত্তির উপর বিবাহিতা মেয়ের সমান অধিকার থাকে। তখনও সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে মা, ভাই, বোনেদের মতোই অধিকার পাবেন তিনি। উইলে আপত্তি জানাতে পারেন। তবে দানপত্র করলে যতটা তাঁকে দেওয়া হচ্ছে, ততটাই পাবেন। এ ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হলে কিছুই পাবেন না।
• শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আসা, বিবাহবিচ্ছিন্না ও বিধবা হলে বাবার সম্পত্তিতে অধিকার তো থাকেই। সেই সঙ্গে তিনি যদি বাপের বাড়িতে ফিরতে চান, তা হলে আইনি সহায়তা মেলে।

স্বামীর সম্পত্তিতে:

বিয়ের পরে স্বামীর সম্পত্তিতেও মহিলাদের বেশ কিছু অধিকার জন্মায়। তা জানা না-থাকার কারণে সমস্যায় পড়া মেয়েদের সংখ্যাও কম নয়। ফলে এ বার চোখ রাখব সেখানে।

বিবাহিত জীবনে:

ম্যারেজ রেজিস্টারে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সিলমোহর পড়ার মুহূর্তেই পাকা হয়ে যায় পত্নী হিসেবে মেয়েটির আর্থিক অধিকারগুলি। সেগুলি হল—
• বিয়ের পর স্বামীর পূর্ণ দায়িত্ব তাঁর স্ত্রীর ভরণপোষণের।
• শ্বশুড় বাড়ি থেকে বেআইনি ভাবে স্ত্রীকে কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না।
• স্বামীর সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তির উপর সমান অধিকার থাকবে স্ত্রীর। স্ত্রীর নিজের রোজগার থাকলেও স্বামী তাঁর ভরণপোষণ বা খোরপোষ সংক্রান্ত দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
• যে সব মহিলা লিভ ইন রিলেশনশিপে আছেন, সঙ্গীর থেকে গার্হস্থ হিংসা প্রতিরোধ আইন-এর অধীনে থেকে ‘আর্থিক সুবিধা’ পেতে পারেন তাঁরাও।

বিয়ে ভাঙলে:

এ ক্ষেত্রে একজন মহিলা স্বামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগের ভিত্তিতে (গ্রাউন্ডে) ডিভোর্স চাইছেন এবং তাঁর সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান কী, অধিকারের প্রশ্নে সেটা আদালতের কাছে অন্যতম বিচার্য বিষয়। তবে সাধারণ ভাবে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত বা বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রী যে-সব অধিকার পেতে পারেন, সেগুলি হল—

• বাপের বাড়িতে থাকলেও তাঁর ও সন্তানের ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন।
• পেতে পারেন খোরপোষ।
• ডিভোর্স বা বিবাহিত জীবনে ফিরে যাওয়ার মামলা ঝুলে থাকলে, সেই অনুযায়ী অ্যালিমনি চেয়ে মামলা করতে পারেন। এতে ভরণপোষণ ও মামলা চালানোর খরচও চাওয়া যায়।
• হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারায় পার্মানেন্ট অ্যালিমনি পেতে পারেন।
• বিশেষ বিবাহ আইন অনুযায়ী অ্যালিমনি ও পার্মানেন্ট অ্যালিমনি দাবি করা যায়।
• যত দিন না আবার বিয়ে করছেন ততদিন স্বামীর রোজগার অনুযায়ী খোরপোষ পেতে পারেন।
• জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আর্থিক ভাবে স্বামীর যে অবস্থান, সেই একই অবস্থান দাবি করতে পারেন।
• স্ত্রী-ধন অর্থাৎ বাপেরবাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি থেকে যা যা পেয়েছিলেন, সব ফেরত পেতে পারেন।
• স্বামীর বাড়ি থেকে সম্পত্তি আটকে দিলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা করে তা ফেরত চাইতে পারেন। যেতে পারেন পুলিশে।
• গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধ আইন, ২০০৫-এর আওতায় আর্থিক সুবিধা (মানিটারি রিলিফ) ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এই আইনের অধীনে থেকে একজন মহিলা তাঁর শুরবাড়িতে থেকেই মামলা করতে পারেন এবং এই ব্যাপারে তাঁর সুরক্ষার ব্যবস্থা করাও বাধ্যতামূলক।
• মিউচুয়াল কনসেন্ট বা সমঝোতার মাধ্যমে হওয়া ডিভোর্সেও এককালীন/থোক খোরপোষ চাওয়া যায়। দাবি করা যায় ভরণপোষণ।
• হিন্দু বিবাহ আইনের ২৬ নম্বর ধারায় সন্তানের অধিকার চাইতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত সন্তান কোথায় থাকবে, তা আদালতই ঠিক করে।
• সন্তান খুব ছোট এবং মায়ের সাহচর্য প্রয়োজন হলে, সেটা পেতে পারেন। দেখভালের খরচ দিতে হতে পারে বাবাকে।

স্বামী মারা গেলে :

বিধবা মেয়ের বাপের বাড়িতেও যেমন অধিকার থাকে, তেমনই তাঁর প্রাপ্য অধিকার অস্বীকার করতে পারে না শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও। এ ক্ষেত্রে—
• বিধবাকে মহিলাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বার করে দেওয়া বেআইনি।
• হিন্দু অ্যাডপশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স আইন অনুযায়ী, বিধবারা শ্বশুরবাড়ি থেকে ভরণপোষণ পেতে পারেন।
• মৃত স্বামীর স্ত্রী-সহ সমস্ত আইনি উত্তরাধিকারী, যাঁরা জীবিত আছেন তাঁরা সকলেই ওই ব্যক্তির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দাবিদার। অর্থাৎ বিধবা স্ত্রী পাবেন একটা সমান ভাগ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url