Kidney problems in children: বাচ্চাদের কিডনির সমস্যা, সমাধান এবং চিকিৎসা
Kidney problems in children: বাচ্চাদের কিডনির সমস্যা, সমাধান এবং চিকিৎসা
বাচ্চাদের কিডনির সমস্যা, সমাধান এবং চিকিৎসা:
শরীরের মধ্যে ইউরিন জমা হতে থাকলে ইউরিনারি ইনফেকশন বা কনস্টিপেশন হতেই পারে।চিকিৎসাতেও অসুবিধে হয়।
আজকাল বাচ্চাদের মধ্যে প্রায়শই কিডনির নানারকম সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে ইউরিন সংক্রান্ত সমস্যা অন্যতম। বাচ্চারা, বিশেষ করে মেয়েরা অনেক সময় নানা কারণে টয়লেটে যেতে চায় না। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণাতেও এই ধরনের তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে। মাঝে মাঝে বাবা-মারাও এক্ষেত্রে কিছুটা দায়ী থাকেন। কিছু বাবা-মাকে বলতে শোনা যায় যে স্কুলের টয়লেট এত ময়লা যে সেখানে যাওয়া নাকি হাইজিনিক নয়। কেউ কেউ তো আবার বাচ্চাকে বেশি জল খেতে বারণও করে থাকেন, যাতে তাকে বারবার টয়লেটে না যেতে হয়। এভাবে আস্তে আস্তে বাচ্চার মধ্যেও ইউরিন রিটেন করার প্রবণতা বাড়ে। অথচ এভাবে শরীরের মধ্যে ইউরিন জমা হতে থাকলে কিন্তু তা থেকে ইউরিনারি ইনফেকশন বা কনস্টিপেশন হতেই পারে। এক্ষেত্রে আর একটা সমস্যার কথা বলা উচিত। যেহেতু ইউরিনারি ইনফেকশনের প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে প্রচুর জল খাওয়া, তাই শরীরে যদি আগে থেকেই বেশি ইউরিন জমে থাকে, তা হলে চিকিৎসাতেও অসুবিধে হয়।
সমস্যা:
নিয়মিত ইউরিন পাস না করলে নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যেই প্রথমেই আসে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। ইউরিনারি ট্র্যাক্টে এমনিতে কোনও ব্যাকটিরিয়া থাকে না। কোনও কারণে ব্যাকটিরিয়া ব্লাডারে ঢুকে গেলে ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হতে পারে। কিছু বাচ্চার মধ্যে ভেসিকোইউরেটেরাল রিফ্লাক্স বলে এক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে ইউরিন পাস করার সময়ে কিছুটা ইউরিন উলটোদিকে ফ্লো করে, অর্থাৎ ইউরিন ব্লাডার থেকে বেরিয়ে ইউরেটার হয়ে আবার কিডনিতে পৌঁছে যায়। এর ফলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকটেড হয়ে পড়ে। কারওর কারওর জন্মগতভাবে ইউটিআই-এর ধাত থাকে।
ইউটিআই বড়দের শরীরেও বাসা বাঁধতে পারে, তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এর তীব্রতা অনেকটাই বেশি থাকে। ৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের কিডনি খুব ভালনারেবল থাকে। তাই এই সময়ে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া উচিত। ছোটবেলাতে বারবার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হলে তা থেকে রেনাল স্কারিং হতে পারে। এই স্কারিং থেকে হাইপারটেনশনেরসৃষ্টি হয়।বাড়াবাড়ি হলে কিডনি ফেলিওর পর্যন্ত হতে পারে। ইউরিন ধরে রাখার প্রবণতা থেকে কনস্টিপেশনও হতে পারে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ইউটিআই-এর প্রধান লক্ষণ হল জ্বর ও বমি, ইউরিন পাস করতে অস্বস্তি, কিডনির জায়গায় বা তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে আর এক ধরনের সমস্যার কথা বলা উচিত, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে ব্লাডার ভয়ডিং প্রবলেম। দিনের পর দিন ইউরিনারি ব্লাডারে ইউরিন জমে থাকতে থাকতে ব্লাডারটি আকারে বড় হয়ে যায়। এরপর ইউরিন পাস করার সময়ে ব্লাডার স্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হয় না। একে বলে লেজ়ি ব্লাডার সিনড্রোম।
করণীয়:
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ইউরিন ধরে রাখার প্রবণতার কারণে বাচ্চার শরীরে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই বাবা-মায়ের উচিত আগে থেকেই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা। বাড়িতে হোক বা স্কুলে, খেয়াল রাখুন বাচ্চা যেন নিয়মিত টয়লেটে যায়। যদি টয়লেটে যেতে তার ভীতি থাকে বা অনীহা থাকে, সেটা কাটানো কিন্তু আপনারই দায়িত্ব। এটা ঠিকই যে অনেক সময় পাবলিক টয়লেট বা স্কুলের টয়লেট যথেষ্ট পরিষ্কার থাকে না, কিন্তু তা বলে কম জল খেয়ে টয়লেটে যাওয়া এড়িয়ে গেলে কিন্তু আরও গুরুতর সমস্যা বাধতে পারে। তাই টয়লেটকে এড়িয়ে না গিয়ে বরং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন। আপনার বাড়ির টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার করুন। যদি জানতে পারেন যে বাচ্চার স্কুলের টয়লেট যথেষ্ট পরিষ্কার নয়, স্কুল কতৃপক্ষকে সেই বিষয়ে জানান। টয়লেটের সময় বাচ্চাকে উপযুক্ত হাইজিন বজায় রাখতে শেখান, যেমন টয়লেট করার পরে টয়লেট এরিয়াটা এবং হাত-পা যেন ভাল করে ধোয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। অনেক সময় বাচ্চারা তাদের অসুবিধেগুলো ঠিক করে বোঝাতে পারে না। তাই বাবা-মাকেই এ বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।
চিকিৎসা:
বাচ্চার ইউটিআই নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে তিনি প্রথমে বেশ কিছু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন, যাতে ইউটিআই হওয়ার সঠিক কারণটি নির্ণয় করা যায়। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। ইউটিআই সেরে যাওয়ার পরেও নিয়মিত ফলো-আপে থাকা উচিত। কিছু ক্ষেত্রে রক্তপরীক্ষা বা রেনাল ফাংশন টেস্ট করাতে হতে পারে। বাচ্চার যদি জ্বর হয় এবং তার সঙ্গে সর্দি, পেটব্যথা গলাব্যথার মতো সাধারণ উপসর্গ না থাকে, তা হলে ইউরিন টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। ইউটিআই ধরা পড়লে আলট্রাসাউন্ড করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে বোঝা যায় অন্য কোনও সমস্যা আছে কি না। বাচ্চা ৫ বছরের কমবয়সি হলে এর সঙ্গে ডিএমএসএ স্ক্যানও করিয়ে নেওয়া হয়। ইউটিআই যেহেতু ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন তাই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই এর চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া এই সময় বাচ্চাকে বেশি করে জল খাওয়ান, খেয়াল রাখুন ও যেন নিয়মিত টয়লেটে যায় এবং সঠিক হাইজিন বজায় রাখতে শেখান।

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url