Nutritious foods: শীতে কোন কোন পুষ্টিকর খাবারগুলি খাওয়া অত্যন্ত জরুরী?
শীতে কোন কোন পুষ্টিকর খাবারগুলি খাওয়া অত্যন্ত জরুরী?
শুধু অহরহ কফি কিংবা হট চকোলেটে চুমুক নয়! শীত কাটুক পুষ্টিতে। কমফর্ট ফুডের সঙ্গে শরীরকে দিন প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস। শীতের ডায়েটারি প্ল্যানিংয়ে বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান।
ডিসেম্বর তো কেটেই গেল! প্রতিবছর শীতটা কিন্তু এই সময়ই জাঁকিয়ে বসে। আর পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে খিদে। শরীরের নয়, মনের খিদে। তাপমাত্রা যত নিম্নমুখী হয়, ততই মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে চা, কফি, চপ, কাটলেটের প্রতি। শরীরও কিন্তু কম সেয়ানা নয়! আপনার মনের ইচ্ছে টের পেয়ে তিনিও মেটাবলিক রেটের গতি বাড়িয়ে দেন। আর আপনিও আশকারা পেয়ে যান, আরও আরও মনের খিদে মেটানোর! একথা ঠিক, কম তাপমাত্রায় শরীরের মেটাবলিজ়ম ক্ষমতা বাড়ে, তবে আমাদের দেশে গরম আর শীতে তাপমাত্রার যেটুকু হেরফের হয়, আর আমরা তাতে যে পরিমাণে ভাজাভুজি, চা-কফি খাওয়া শুরু করি, তার অনুপাতটা মোটেও ব্যালান্সড নয়।
মানে, আমাদের দেশে ঠান্ডায় শরীরের যেটুকু ক্ষমতা বাড়ে, তার চেয়ে শরীরের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় অনেকবেশি। একটু-আধটু ক্যালরির তারতম্য শরীর সহ্য করে নিতে পারলেও, এক ধাক্কায় যদি অনেকটা ফারাক হয়ে যায়, তাহলে শরীরের পক্ষেও সেই ধকল সামলানো সম্ভব নয়। কিন্তু জিভকেই বা কীভাবে শান্ত করবেন? কেক-পেস্ট্রি-ব্রাউনি কিংবা গরম গরম তেলেভাজা দেখলে সে কি আর দুর্বল না হয়ে পারে? এর সমাধানও প্রকৃতিতেই রয়েছে। আমাদের শস্য-প্রধান দেশে ন্যাচারালি এমন অনেককিছুই পাওয়া যায়, যা শীতে জিভ আর শরীর, দু’টোকেই ব্যালান্স করে চলতে পারে। শরীরকে এই খাবারগুলো বাড়তি উষ্ণতা দেয়, সঙ্গে ডাইজেশন বা হজমশক্তিও বাড়াতে সাহায্য করে। আবার খেতেও সুস্বাদু। সব মিলিয়ে শীতের পক্ষে সত্যিই আদর্শ...
জোয়ার, বাজরা, বার্লি, ওটস বা ভুট্টা বরাবরই শরীর গরম রাখার জন্য প্রসিদ্ধ। যে কারণে উত্তর-ভারতে এই শস্যের চল খুব বেশি। সাধারণ চাপাটির পরিবর্তে এই ধরনের শস্য ব্যবহার করে প্যানকেক বা পরোটা বানিয়ে খেতেই পারেন। ডালের মধ্যে মুগ, ছোলা, সয়াবিনও সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। ইচ্ছেমতো মশলাপাতি দিয়ে বানাতে পারেন। তেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখলে কোনও সমস্যা নেই।
রোজকার খাবারে দারচিনি, আদা, হলুদ, রসুন, লবঙ্গ এবং গোলমরিচের মতো মশলা ব্যবহার করুন। এগুলো শরীর গরম রাখার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সুরক্ষাও দেবে। এই প্রতিটি উপাদানই ডিকনজেসট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি এরা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ক্ষমতাসম্পন্ন। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এদের বিকল্প নেই।
গরম সুপ, স্টু শীতে কার না খেতে মন চায়! এক বাটি পুষ্টিকর, হোলসাম সুপ শুধু শরীর ভাল রাখতেই নয়, মন ভাল রাখতেও একাই একশো! এতে পেটও ভরবে, ফলে জাঙ্কফুড ক্রেভিংস কমবে। তবে রেডি-টু-কুক সুপ এড়িয়ে চলুন। এতে ভর্তি স্টার্চ এবং প্রেজ়ারভেটিভস থাকে। বাড়িতে বানানো, টাটকা সুপ এবং স্টু নিঃসন্দেহে বেটার চয়েস!
স্ন্যাক্স খেতে ইচ্ছে হলে আনসল্টেড বাদাম, ড্রাইফ্রুটস যেমন আমন্ড, কাজু, কিশমিশ, আখরোট বা খোবানি খেতে পারেন। এগুলো পুষ্টিকর তো বটেই, পাশাপাশি চটজলদি পেট ভরানোর জন্য আদর্শ! কয়েকটা মুখে পুরলেই ঘণ্টাখানেকের জন্য নিশ্চিন্ত। তাই দিনে ৬-৮টার বেশি এই জাতীয় বাদাম বা ড্রাইফ্রুটস না খাওয়াই ভাল।
সাধারণ রান্নার পরিবর্তে গ্রিলড বা রোস্টেড খাবার খেতে পারেন এই ক’মাস। এগুলোও শরীরকে স্টিমুলেট করে, অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করে। টোস্ট বা ডিপ-ফ্রাই করা খাবারের খুব ভাল বিকল্প এই ধরনের পদ।
শাক-সবজিকেও একেবারে নেগলেক্ট করলে চলবে না। মরশুমি ফল, সবজি যেমন গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, গাজর, কুমড়ো, আমলকি ইত্যাদি আয়রন, ফোলেট, ভিটামিন-এ, বি-কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন-সি-এর অন্যতম উৎস। ইমিউনিটি বাড়ানোর পক্ষেও ভাল, আর ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যও আদর্শ।
চা-কফির প্রতি মন যতই ব্যাকুল হোক, এই সময় ক্যাফেনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে মুশকিল। শরীরে যত বেশি ক্যাফেন ঢুকবে, ততই জলের পরিমাণ কমবে এবং শরীর সহজেই ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়বে।
শীতে জল খাওয়ার সমস্যা কমবেশি সকলেরই হয়। ঘন ঘন তেষ্টা পায় না, ফলে বেশিরভাগ সময়ই শরীরে জলের ঘাটতি থেকে যায়। যেটুকু জল খাওয়া হয়, তা ঘরের তাপমাত্রার চেয়ে কম হয় বলে শরীরের বিশেষ কাজে লাগে না। তাই এই ক’মাস জলের পরিমাণ বাড়ালে ভাল। ঘন ঘন জল, জুস, গ্রিন টি বা কাহওয়া খেতে পারেন। ঈষদুষ্ণ পানীয় (চিনি ছাড়া) খেলে আরও ভাল। শরীর গরমও থাকবে, আর্দ্রও থাকবে।
অ্যালকোহলের চেয়ে শরীর গরম রাখার সহজ উপায় কমই আছে। তাই বলে এই সময় নিজেকে অ্যালকোহলে ডুবিয়ে দেবেন না যেন! অ্যালকোহলে শরীর পুষ্টি তো পায়ই না, শুধু ক্যালরির পরিমাণটাই বাড়ে। তাছাড়া অ্যালকোহল খেলে সঙ্গে সাইড ডিশ বা স্ন্যাক্স হিসেবেও উলটোপালটা খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। পুরোটাই কিন্তু বৃথা। শরীরের উপকার করতে চাইলে অ্যালকোহলের দিকে না তাকানোই ভাল।
নিয়মিত একটা করে কাঁচাহলুদ এবং একটা আমলকি একসঙ্গে বেটে তার রস খেতে পারেন। এটা ইনফেকশন প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
শুধু তো শরীরের পুষ্টি নয়, সঠিক খাওয়াদাওয়া না করলে, তার প্রভাব পড়বে ত্বক এবং চুলেও। জানেনই, এই সময় রুক্ষতা কী হারে বাড়ে! তাই ত্বক আর চুলের পুষ্টির জন্যও শরীরকে বাড়তি কিছু পুষ্টি দিন।
ভাল থাকুক ত্বক:
শীতের রুক্ষ এবং ঠান্ডা আবহাওয়া ত্বকের আর্দ্রতা এবং প্রাকৃতিক তেল শুষে তা আরওই শুষ্ক, খসখসে করে দেয়। তবে নিয়মিত যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান, সেক্ষেত্রে এর থেকে অনেকটাই বাঁচবেন। সঙ্গে ডায়েটে রাখুন ভিটামিন-ই এবং ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ খাবার, যেমন বাদাম, ফিশ অয়েল, আলসি সিড ইত্যাদি। ত্বককে বাইরে থেকে আর্দ্রতা দেওয়ার জন্য যেমন ময়শ্চারাইজ়ার এবং তেল ব্যবহার করেন, তেমনই এই খাবারগুলো শরীরকে ভিতর থেকে আর্দ্রতা দেবে।
চুলেরও যত্ন নিন:
তৈলাক্ত চুল নিয়ে যাঁদের চিন্তার অন্ত নেই, তাঁদের জন্য এই মরশুম যতটা সুখের, শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে ততটাই কষ্টের। চুল ভাল রাখতে এই ক’মাস ভিটামিন সাপ্লিমেন্টস নিতে পারেন। বাইরের যত্নের সঙ্গে সঙ্গে ভিতর থেকে পুষ্টি পেলে চুল ভালই থাকবে।

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url