Office make-up: টানা নয়-দশ ঘণ্টা কাজের মাঝে নিজেকে ফ্রেশ ও সুন্দর রাখতে প্রয়োজন একটু পরিচর্যার
টানা নয়-দশ ঘণ্টা কাজের মাঝে নিজেকে ফ্রেশ ও সুন্দর রাখতে প্রয়োজন একটু পরিচর্যার
কাজের মাঝে রূপচর্চা:
অফিসে কাজের চাপ সাংঘাতিক। এই টানা নয়-দশ ঘণ্টা কাজের মাঝে নিজেকে ফ্রেশ ও সুন্দর রাখতে প্রয়োজন একটু পরিচর্যার। কাজের মাঝে সামান্য সময় বের করে করে নিন সামান্য রূপচর্চা। বিশেষ পরামর্শ।
ভোর ছ'টায় ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করা। তারপর স্নান সেরে পুজো করে রান্না করা। বর ও নিজের জন্য টিফিন বানানো, কোনও রকমে ব্রেকফাস্ট করে সকাল ন'টার মধ্যে রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়া। অফিসে সারাদিনে টার্গেট মিটিং, ডেডলাইন, ফাইল দেখা— কাজের চাপে দম ফেলারও সময় নেই। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সেই রাত সাড়ে আটটা। এটাই রুকমার দৈনন্দিন রুটিন। বাড়ি ফিরেও বিশ্রাম করার সময় নেই। সেখানেও কাজের তাড়া। কোনও রকমে ফ্রেশ হয়ে আবার সংসার সামলাতে লেগে পড়া। ছেলের হোমওয়র্ক করানো, রান্না করা, হাজারও একটা কাজ। সব কিছু সেরে এতটই টায়ার্ড হয়ে পড়ে যে নিজের জন্য তেমন সময় নেই।
কিন্তু রুকমা যখনই টিভি বা ম্যাগাজ়িনে রূপচর্চা সম্পর্কে পড়ে, তখন ওর আফশোস হয়, ইস! আমিও যদি নিজের যত্ন নিতে পারতাম! একটু রূপচর্চা করার সময় পেতাম তাহলে হয়তো আমারও ত্বক ও চুলও এতটাই ভাল হত। কিন্তু যখনই মনে এই চিন্তা হয় একটাই উত্তর আসে ধুর! এই সব কী আর আমার মতো সারাদিন ছুটে বেড়ানো কোনও মহিলার পক্ষে মেনটেন করা সম্ভব! রুকমার মতো আমাদের অনেকেই একইরকম আফশোস করে থাকি, তবে একটা কথা জানেন তো, ইচ্ছে থাকলে উপায়ও আছে। হ্যাঁ, মানছি সারাদিন অফিস সংসার সমানতালে সামলাতে গিয়ে ঘড়ির পিছনে ছুটতে ছুটতে রূপচর্চার জন্য বিশেষ সময় পান না।
অফিসে যাওয়ার আগে বড়জোর সানস্ক্রিন লোশন আর রাতে শুতে যাওয়ার আগে ময়শ্চারাইজ়ার লাগানো, মাসে খুব বেশি হলে একবার সালঁতে গিয়ে ফেশিয়াল মাসাজ, পেডিকিওর, ম্যানিকিওর করানো। এটাই কিন্তু যথেষ্ট নয়। নিজেকে ভাল রাখতে গেলে অফিসেও কাজের মাঝে একটু সময় বের করে নিজের যত্ন নিতে হবে। তবেই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন। মানছি বলবেন, সময় কোথায়। দেখুন, নিজেকে ভাল রাখতে, সুন্দর রাখতে গেলে এটুকু তো আপনাকে করতেই হবে। একবার অভ্যেস করে নিলে অসুবিধে হবে না। সময়ও লাগবে না বিশেষ। কাজ করতে করতেই নিজের যত্ন নিতে পারবেন। কিছুদিন করেই দেখুন না, হলপ করে বলতে পারি উপকার পাবেনই।
অফিসে যাওয়ার আগে:
সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাল করে মুখ পরিষ্কার করুন। তবে সাবান দিয়ে মুখ ধোবেন না। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যাবে। সাবানের পরিবর্তে ক্লেনজ়িং মিল্ক বা জেল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। যাঁদের ত্বক এমনিতেই শুষ্ক প্রকৃতির, তাঁরা ক্লেনজ়িং ক্রিম ব্যবহার করুন। ক্রিম ত্বকের ময়শ্চার ব্যালান্স বজায় রাখতে সাহায্য করে। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা ক্লেনজ়িং জেল ব্যবহার করুন। এতে একদিকে যেমন ত্বক পরিষ্কার হবে, তেমনই ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতাও বজায় থাকবে। মুখ পরিষ্কার করার পর তুলোয় টোনার নিয়ে ভাল করে মুখ মুছে নিন। টোনার ত্বকে রক্তসঞ্চালন ভাল করতে সাহায্য করে। চামড়া টানটান হয়। স্নান করার পর মুখে, গলায়, ঘাড়ে, হাতে ও পায়ে ভাল করে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিন। ত্বক ভিজে থাকতে থাকতেই ময়শ্চারাইজ়ার লাগান। এতে ময়শ্চারাইজ়ার ত্বকের গভীরে ভাল করে প্রবেশ করতে পারবে। অফিসে বেরনোর অন্তত ২০ মিনিট আগে মুখে উচ্চ এসপিএফ সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। মুখের সঙ্গে সঙ্গে গলা, ঘাড়, পিঠ, হাত ও শরীরের এক্সপোসড অংশেও ভাল করে সানস্ক্রিন লাগান। কারণ, এইসব অংশের ত্বক রোদে তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর সামান্য ফেস পাউডার বা কমপ্যাক্ট লাগিয়ে নিন।
অফিসে রূপচর্চা:
দেখুন, সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় তো একটা বেসিক মেক-আপ করেনই। সেই বেস মেক-আপ সারাদিন মেন্টেন করতে চাইলে একটা কথা খেয়াল রাখবেন। বার বার মুখে হাত দেবেন না। এতে মেক-আপ স্মাজ হয়ে যাবে। আর হাতের ময়লা ও ব্যাক্টেরিয়া ত্বকে চলে যেতে পারে। সেখান থেকে কিন্তু র্যাশ ও হতে পারে। যাঁরা দিনের বেশিভাগ সময়টাই এসি-র মধ্যে কাটান তাঁদের ত্বকের উপর খুবই খারাপ প্রভাব পড়ে। এসিতে থাকলে ত্বক ক্রমশ শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলে ত্বক ক্রমশ রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে যায়। ত্বকে কোনও জেল্লা থাকে না। এসি থেকে নিজের ত্বককে রক্ষা করতে চাইলে দু'ঘণ্টা অন্তর অন্তর অবশ্যই ময়শ্চারাইজ়ার লাগন। যাঁরা সারাদিন এসিতে থাকেন তাঁরা ওয়াটার বাইন্ডিং ময়শ্চারাইজ়ার বা ক্রিমবেসড ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করুন। ত্বকের স্বাভাবিক তৈলাক্ত ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে এরা। যাঁরা দিনের অনেকটা সময় রোদে বাইরে থাকেন বা কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন, তাঁরা এসপিএফযুক্ত ময়শ্চারাইজ়ার লাগাতে পারেন।
মনে হতে পারে অফিসের ভিতরে সানস্ক্রিনের আবার কিসের প্রয়োজন! প্রয়োজন আছে, কারণ কম্পিউটারের সামনে বসে বেশিক্ষণ কাজ করলেও ত্বক ট্যান হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সানস্ক্রিনযুক্ত ময়শ্চারাইজ়ার ইউভি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে যে ক্ষতি হয়, তার থেকে রক্ষা করবে। শুধু তাই নয়, ত্বকের স্বাভাবিক ময়শ্চারাইজ়ার ব্যালান্সও বজায় রাখবে। তবে শুধু মুখের যত্ন নিলেই কিন্তু হবে না। এসিতে দীর্ঘক্ষণ থাকলে হাত ও পায়ের ত্বক ক্রমশ রুক্ষ ও খসখসে হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রতিবার হাত ধোওয়ার পর অবশ্যই হ্যান্ড লোশন লাগাবেন। এতে হাতের ত্বকের ময়শ্চার ব্যালান্স বজায় থাকবে। প্রয়োজনে লোশন ব্যাগে ক্যারি করুন। দু'ঘণ্টা অন্তর অন্তর হাতে ভাল করে লাগিয়ে নিন। লাগাবার পর কবজি থেকে কনুইয়ের দিকে সার্কুলার মুভমেন্টে মাসাজ করুন। হাতের চেটোতেও ক্রিম লাগাবেন। লাঞ্চের পর বা বাইরে কোথাও থেকে অফিসে ফিরে একবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালভাবে ধুয়ে নিন। তারপর সানস্ক্রিনযুক্ত ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নেবেন। তারপর কমপ্যাক্ট লাগিয়ে নিন।
অফিসে কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যেই (বিশেষ করে যাঁদের দীর্ঘক্ষণ এসিতে বসে কাজ করতে হয়। কারণ, দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকলে ত্বকের সঙ্গে ঠোঁটও শুষ্ক হয়ে যায়। ঘন ঘন ঠোঁট ফাটে) এসপিএফযুক্ত লিপবাম বা ময়শ্চারাইজ়িং গ্লস লাগিয়ে নিন। ঠোঁট ফাটবে না। আর প্রতিবার খাবার খেয়ে মুখ ধোওয়ার পরও কিন্তু ঠোঁটে ময়শ্চারাইজ়ার বা লিপবাম লাগাতে ভুলবেন না। লিপবাম লাগানোর পর ঠোঁট দু'টো ১৫-২০ সেকেন্ড সামান্য চেপে ধরুন। এতে ঠোঁটের ভিতরে ভাল করে ময়শ্চারাইজ়ার যাবে, ঠোঁট কোমল, মসৃণ ও মোলায়েম হবে।
অফিস থেকে বাড়ি ফিরে:
অফিস থেকে বাড়ি ফিরে যতই ক্লান্ত হয়ে যান না কেন, ভাল করে করে মুখ পরিষ্কার করবেন। মেক-আপ ভাল করে রিমুভ করে নেবেন। তারপর ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে নাইট ক্রিম লাগিয়ে হালকা হাতে মাসাজ করুন।
মনে রাখুন:
অফিস ব্যাগে অথবা ড্রায়ারে এক সেট ফেসওয়াশ, ময়শ্চারাইজ়ার, সানস্ক্রিন লোশন, ছোট সাইজ়ের আয়না, কাজল পেনসিল রেখে দিন। আর হ্যাঁ, কমপ্যাক্ট অবশ্যই রাখবেন। প্রয়োজন পড়লে একটু পাফ করে নেবেন। ইনস্ট্যান্ট ফ্রেশ লুক পেয়ে যাবেন।
আর হ্যাঁ, একটা বেসিক রঙের লিপস্টিক অবশ্যই রাখবেন।
রোদে অফিস যাওয়ার সময় অবশ্যই ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
কাজ করতে করতে চুলে বেশি হাত দেবেন না। বার বার চুলে হাত দিলে চুলের বাউন্সিভার নষ্ট হয়ে যায় এবং চুল চিটচিটে হয়ে যায়। লাঞ্চ ব্রেকে টয়লেটে গিয়ে একবার ভাল করে চুল আঁচড়িয়ে বেঁধে নিন।
ব্যাগে সুগন্ধি ক্যারি করুন। মাঝে মাঝে স্প্রে করে নিতে পারেন। রিফ্রেশড লাগবে।

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url