Science stories: 'অমৃতসূত্র' বিজ্ঞান সম্পর্কিত একটি নতুন গল্প সাহিত্য

 'অমৃতসূত্র' বিজ্ঞান সম্পর্কিত একটি নতুন গল্প সাহিত্য


অমৃতসূত্র - পর্ব ১

অমৃত যে চায়ের দোকানটায় এখন বসে আছে, সেই দোকান ছাড়িয়ে আরও দুটো দোকান পর একটা মিষ্টির দোকানে লোকটা বসে রয়েছে খবরের কাগজ হাতে। খবরের কাগজটা একটা আড়াল মাত্র। লোকটা নিজেকে খবরের কাগজ দিয়ে আড়াল করে এক নাগাড়ে নজর রেখে চলেছে অমৃতর উপর। অমৃত তা বেশ বুঝতে পারছে। কী চায় লোকটা, অমৃতর কাছে? হঠাৎ বুকটা যেন কেঁপে উঠল অমৃতর। লোকটা কি কোনও ভাবে জেনে ফেলেছে অমৃতর মতলবটা? লোকটা কি জানে, কেন আজ সাত সকালে নিজের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছে অমৃত? কী মতলব নিয়ে ও আজ এসে দাঁড়িয়েছে এই অচেনা, অজানা জায়গায়? ওই অচেনা লোকটা কি সবটাই তা হলে জানে অমৃতর ব্যাপারে? ভয়ে কাঁপছে অমৃতর সারা দেহ।

অমৃত আর বসল না ওখানে। তাড়াতাড়ি হাতের পাউরুটি আর চা-টা কোনও রকমে শেষ করে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট দোকানিকে দিয়ে হাঁটা লাগাল অনির্দিষ্টের দিকে।

“এই যে ভাঙানিটা নিয়ে যাও...এই খোকা... ভাঙানিটা নেবে তো... খোকা এই খোকা?”

কে শোনে আর দোকানির পিছু ডাক! এখন ওই লোকটার নজর এড়িয়ে পালাতে পারলে বাঁচে অমৃত।

কিন্তু সত্যিই কি বাঁচে অমৃত! অমৃত যে আজ বাঁচার জন্য বাড়ি ছেড়ে, পরিজন ছেড়ে পালিয়ে এসেছে!

ডাক্তার বাবার এক মাত্র ছেলে অমৃত মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল এই বছর। পরীক্ষার আগে পর্যন্ত অমৃতর পিছনে ৬ জন টিউটর দিয়েছিলেন ওর বাবা। কিন্তু গত কাল পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল অমৃত অঙ্ক, ইংরেজি আর ইতিহাসে পাশ মার্ক তুলতে পারেনি। সমাজের কাছে মুখ ডুবিয়েছে ডাক্তার বাবার। অমৃতর জন্য মানসম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে গোটা পরিবারের। অমৃতর রেজ়াল্ট জানার পর থেকে গোটা বাড়ি জুড়ে শোকের ছায়া। বাবা মুখ দেখতে চান না অপদার্থ ছেলের। মাম্মাম উপোস করে আছে, কেঁদেকেটে একসা। ঠাম্মা করুণ নয়নে গত কালের পর থেকে তাকিয়ে আছে অমৃতর ইঞ্জিনিয়ার দাদুর ফটোর দিকে। সব কিছু দেখে ওর একটা কথাই বার বার মনে হয়েছে, সবের জন্য দায়ী ও নিজে। ও একটা অপদার্থ! কিচ্ছু হবে না আর ওকে দিয়ে! ও এই বাড়ির অসম্মানের কারণ! বাড়ির সব সুখ, স্বপ্ন মরে গেছে ওর কারনেই। 

সারা রাত জেগে অনেক ভেবে-ভেবে, আজ ভোর থাকতেই অমৃত বেরিয়ে পড়েছে বাড়ি ছেড়ে। বাবার কথাটাই ঠিক। ও অপদার্থ, কিচ্ছু আর হবে না অমৃতর দ্বারা। অমৃতও ভেবে নিয়েছে এই অপদার্থ জীবনের কোনও মানে নেই। এ জীবন না রাখাই ভাল। ওর মতো অপদার্থ না-থাকলে পরিবারের মান-সম্মানটা অন্তত বজায় থাকবে সমাজে। ভাবতে ভাবতে এক সময় রেল স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছে অমৃত। কত বড় স্টেশন! কত মানুষ! ওর মতো একটা পনেরো-ষোলো বছরের ছেলে হারিয়ে গেলে, কেউ কখনও জানতেও পারবে না।

স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে উঠে পড়ার আগে অমৃতর মনে পড়ল মায়ের শুকনো মুখটা। মনে পড়ল রাগী বাবা আর হতাশ ঠাম্মাকেও। মনে পড়ল স্কুলের বন্ধুদের। তার পরই মনে পড়ল, পাশ করা বন্ধুরা সব হাসছে ওকে দেখে। সকলে দাঁড়িয়ে আছে পরীক্ষায় অকৃতকার্য অমৃতর দিকে আঙুল তুলে। ওকে এ সবের থেকে বাঁচতেই হবে, তাই তো খুঁজে খুঁজে এই স্টেশনে এসেছে ও। শুধু পালিয়ে বাঁচার জন্য! এত ক্ষণে হয়তো ও দিকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না।

‘‘অমৃত!’’

ট্রেনে আর ওঠা হল না অমৃতর। তার আগেই অমৃতকে পিছন থেকে কেউ যেন জাপটে ধরল।

সেই লোকটা! সকাল থেকে পিছু নিয়ে নিয়ে এখানে পর্যন্ত এসেছে। কী চায় কী ও? বাবা কি গোয়েন্দা লাগিয়েছে অমৃতকে নজর রাখার জন্য?

‘‘ছাড়ো... ছাড়ো আমাকে... ছাড়ো বলছি,’’ অমৃত নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় অচেনা লোকটার বজ্রকঠিন বন্ধন থেকে। কিন্তু লোকটার গায়ে ভীষণ শক্তি। পারে না অমৃত লোকটার সঙ্গে।

অমৃত চিৎকার করে, ‘‘কী চাও

কী তুমি? আমাকে ফলো করছ কেন?

কে তুমি?’’ লোকটার বাহুবন্ধনের

মধ্যেও অমৃতর ছটফটানি কমে না,

‘‘কে তুমি বলো?’’

অমৃতর প্রশ্নে অচেনা লোকটা এর পর যা বলল, তাতে বেশ অবাক হতে

হল ওকে। অমৃতকে বাহুবন্ধনে ধরে রেখেই লোকটা অবাক করে দিয়ে বলল, ‘‘আমি অমৃত।’’

‘‘ঠাট্টা করছ? তুমি কেন অমৃত হতে যাবে? অমৃত আমার নাম।’’

‘‘তুমিও যেমন অমৃত, আমিও অমৃত,’’ লোকটা বলল।

‘‘তাতে কী! পৃথিবীতে এক নামে হাজার লোক থাকতে পারে। তা বলে আমাকে তুমি ফলো করবে? এই

ভাবে ধরবে?’’

‘‘ঠিক বলেছ, এক নামে হাজার হাজার মানুষ আছে পৃথিবী জুড়ে। কিন্তু তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের চেয়ে আলাদা। আলাদা আলাদা মানুষ। কিন্তু তুমি অমৃত আর আমি অমৃত এক! অভিন্ন!’’ ফিসফিসিয়ে বলল লোকটা।

অমৃত কিছু বুঝতে পারল না লোকটার কথা। পাগল নাকি লোকটা। দেখে মনে না হলেও, কথা শুনে মনে হচ্ছে। হঠাৎই অমৃত জোরে কামড় দিল লোকটার হাতে। অমৃতকে ছেড়ে লোকটা চিৎকার করে উঠল যন্ত্রণায়। এই সুযোগে দৌড়তে শুরু করল অমৃত। কিন্তু লোকটা ওকে ছাড়ল না সহজে।

‘‘শোনো অমৃত... তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে... খুব দরকারি কথা... আমি অনেক দূর থেকে এসেছি শুধু তোমার জন্য... তুমি আজ আমার কথা না শুনলে পৃথিবীর খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে একটা। দাঁড়াও অমৃত...’’

খানিক দৌড়ঝাঁপের পর আবার অমৃতকে ধরে ফেলল লোকটা।

‘‘কী চাও কী তুমি? আমাকে ছাড়ছ

না কেন?’’

‘‘বললাম না, আমি অনেক দূর থেকে ছুটে এসেছি শুধু তোমার জন্য।’’

‘‘আমার জন্য? আমি কী করব? কী হবে আমাকে দিয়ে? আমি যে অপদার্থ। জানো না? ‌আমাকে ছেড়ে দাও বলছি,’’ অমৃত আর পারে না, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত অমৃত লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।

‘‘তুমি অপদার্থ নও অমৃত,’’ লোকটি ধীরে-ধীরে বসে পড়ে অমৃতর সামনে, ধুলো-মাটির উপরে, ‘‘মন দিয়ে শোনো আমার কথা। তা হলেই বুঝতে পারবে তুমি কী।’’

‘‘তার আগে বলো তুমি কে?’’ অমৃতর গলার স্বর এখন খুব নরম।

‘‘চিনতে পারোনি এখনও?’’ লোকটা মৃদু হাসল। তার পর রহস্যজড়িত কণ্ঠে বলল, ‘‘দেখো তো আমার দিকে ভাল করে তাকিয়ে। চিনতে পারো কি না!’’

অমৃত এই প্রথম লোকটির মুখের দিকে তাকাল। কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থেকে মনে হল খুব চেনা। লোকটির চোখ, মুখ, নাক, সারা মুখমণ্ডল যেন ওর প্রতি দিনের চেনা। কোথায় যেন দেখে অমৃত রোজ রোজ, এই অদ্ভুত পরিচিত মুখমণ্ডল! কিন্তু মনে করতে পারে না কিছুতেই।

‘‘তুমি কে!’’

লোকটা হাসে, ‘‘বললাম না, আমি অমৃত।’’

‘‘কোথায় থাকো তুমি?’’

‘‘বললে বুঝতে পারবে না। শুধু এটুকু শোনো আমি আর তুমি এক।’’

‘‘এক মানে!’’ অমৃতর চোখে কৌতূহল।

‘‘আমি তোমার ভবিষ্যৎ। আর তুমি আমার ছোটবেলা, আমার অতীত!’’

(ক্রমশ)

অমৃতসূত্র - পর্ব ২

কিছু ক্ষণ কোনও কথা নেই দু’জনের মধ্যে। শুধু তাকিয়ে আছে দু’জন দু’জনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে। এ বার অমৃত চিনতে পারে লোকটাকে। চিনতে পারে ওই চোখ-মুখ-নাক। ওই চোখ-মুখ-নাক অমৃত রোজ দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। শুধু লোকটার মুখে বয়সের রেখাগুলো না পড়লে আর মাথা ভর্তি সাদা চুল না হলে অমৃত আর লোকটাকে আলাদা করা যেত না কিছুতেই।

‘‘চিনতে পেরেছ নিজেকে?’’ লোকটা জিজ্ঞেস করে। অমৃত কোনও উত্তর দেয় না। শুধু চেয়ে থাকে।

‘‘আমি তোমার ভবিষ্যৎ থেকে এসেছি। আমরা দু’জনে এক... অভিন্ন... এক অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা এই দুই অমৃত! আমি ভবিষ্যৎ, তুমি অতীত।’’

‘‘সত্যি বলছ তুমি?’’

লোকটা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়, ‘‘শোনো, আমি তোমার ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী সত্তা, অমৃতসূদন বড়াল। অনেক প্রচেষ্টায় তৈরি করেছি অতি আশ্চর্য এক যন্ত্র। এত দিন ধরে চেষ্টা করেও যা পারেনি পৃথিবীর কোনও দেশের বিজ্ঞানী।’’

‘‘কী যন্ত্র?’’ অমৃত জানতে চায়।

বিজ্ঞানী অমৃতসূদন চোখ বড় বড় করে নিচু স্বরে বলল, ‘‘টাইম মেশিন।’’

‘‘টাইম মেশিন!’’ বিস্মিত হয়ে গেল অমৃত।

‘‘হ্যাঁ, টাইম মেশিন। যাতে করে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অতীত, ভবিষ্যতে পৌঁছনো যায় এক নিমেষে। এই যেমন আমি এসেছি আমার অতীতে, তোমার কাছে,’’ বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়ালের চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

‘‘এত দিন ধরে নিরলস ভাবে চেষ্টার পর গত কালই আমি কমপ্লিট করেছি গোটা প্রজেক্টটা। আমার স্বপ্নের আবিষ্কার! আর সেই যন্ত্রের স্ক্রিনে নিজের অতীতটা দেখতে গিয়েই দেখলাম তোমাকে। মানে নিজেকে। নিজের ছোটবেলায় এক দুর্বল মুহূর্তে করতে যাওয়া এক অন্যায়কে। দেখেই শিহরিত হলাম।’’

‘‘কী অন্যায়?’’

‘‘ওই যেটা তুমি ঘটাতে যাচ্ছিলে... যার জন্য তুমি রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে ট্রেনে চেপে...’’

মাথা নিচু হয়ে গেল অমৃতর। তার পর এক বার নদীর দিকে, এক বার গাছের দিকে আর এক বার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘তুমি কি সত্যি বলছ এগুলো?’’

‘‘এখনও অবিশ্বাস!’’ অতীতের দিকে তাকিয়ে আছে ভবিষ্যৎ।

‘‘প্রমাণ দিতে পারবে?’’ অতীতের প্রশ্ন ভবিষ্যৎকে।

বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়াল মৃদু

মৃদু হেসে বলল, ‘‘পারব। তোমার

হাতটা দাও।’’

অতীত একটু ভেবে শেষে হাত বাড়িয়েই দিল ভবিষ্যতের দিকে। বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়াল তার কোটের পকেট থেকে একটা রিমোট বের করে এনে চাপ দিল একটা গোল সুইচে। তার পরই চার দিকের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হল। রামধনু রঙের একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে আলোকবর্ষ গতিতে অতীত ভেসে চলল তার ভবিষ্যতে।

‘‘কোথায় এটা?’’ হাজারো যন্ত্রপাতি ঘেরা একটা ঘরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস

করল অমৃত।

‘‘এটাই আমার ল্যাব। তুমি আমার আবিষ্কারের সহায়তায় চলে এসেছ ভবিষ্যতে। মনে রেখো এটা কিন্তু পৃথিবী নয়, আমরা এখন রয়েছি মঙ্গলে।’’

‘‘মঙ্গল মানে মঙ্গল গ্ৰহ?’’ মৃদু-মৃদু হেসে মাথা নাড়ল বিজ্ঞানী।

‘‘আমি বাড়ি ফিরতে চাই,’’ একটু ভয় পেল এ বার অমৃত।

বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বলল, ‘‘নিশ্চয়ই যাবে অমৃত। কিন্তু তার আগে আমাকে কথা দাও।’’

‘‘কী কথা?’’

‘‘পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে যা করতে যাচ্ছিলে আজ, তেমন কিছু আর কখনও করবে না। মনে রেখো, অতীতের গড়া পথেই ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে থাকে।’’

‘‘কিন্তু আমি যে অপদার্থ...’’

‘‘কে বলেছে তুমি অপদার্থ! তুমি

কী, তা তুমি নিজেও জানো না অমৃত! তোমার সকল অকৃতকার্যতাকে পায়ে দলে বর্তমানের পথ ধরে ভবিষ্যতের

জন্য এগিয়ে চলো অমৃত।’’

‘‘আমি পারব?’’

‘‘হ্যাঁ পারবে। নিশ্চয়ই পারবে তুমি। এক দিন এই সাধারণ অমৃত থেকে হয়ে উঠবে বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়াল!’’

‘‘আমি পারব! হ্যাঁ আমি পারব!’’

‘‘পারবে, তুমি নিশ্চয়ই পারবে। চলো, এ বার তোমাকে নিজের জায়গায় পৌঁছনোর ব্যবস্থা করি। এসো।’’

বিজ্ঞানী তার তৈরি টাইম মেশিনটার ভিতরে অমৃতকে বসিয়ে কম্পিউটার স্ক্রিনের উপর ডেট, টাইম সেট করল।

‘‘মনে রেখো অমৃত, তুমি সব পারবে।’’

তার পর সেই রিমোটটার অন্য

একটা সুইচে চাপ দিল বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়াল। আবার দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে গেল নিমেষে। রামধনু টানেলের মধ্যে দিয়ে আলোকবর্ষ গতিতে এগিয়ে

চলল অমৃত।

যখন ঘুম ভাঙল, অমৃত দেখল সকাল হয়েছে। ও নিজের বিছানার উপর শুয়ে। তা হলে স্বপ্ন ছিল!

পঞ্চাশ বছর পর

সেই ছোট্ট অমৃতর বয়স এখন পঁয়ষট্টি ছাড়িয়েছে। চার দিকে শত স্বপ্নাতীত পরিবর্তন হয়েছে এত বছরে। পরিবর্তন হয়েছে অমৃতর। সে এখন বড় হয়েছে। ছোট্ট অমৃত থেকে হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়াল। বেশ কিছু দিন ধরে কিছু একটা আশ্চর্য আবিষ্কারের পিছনে পড়ে আছে সে দিন-রাত। যা নিয়ে প্রচুর গবেষণা, পড়াশোনা, থিসিস লেখা হয়েছে পূর্বে। কিন্তু সবটাই খাতায়-কলমে। বাস্তব রূপ দিতে পারেননি কোনও বিজ্ঞানী। আবিষ্কারটা সেই অতি চর্চিত, টাইম মেশিন! প্রতি বারই একটুর জন্য সফল হচ্ছে না বিজ্ঞানী অমৃতসূদন। কোথাও কিছু একটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে সূত্রে। মাথাটা একটু ফ্রেশ করার জন্য অমৃতসূদন কাচ-ঢাকা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বাইরে ছুটে চলেছে স্পেসযানগুলো। এই ক’বছরে কত উন্নত হয়ে উঠেছে এই গ্ৰহটা। যখন ওরা মঙ্গলে প্রথম এসেছিল তখন কিছুই ছিল না শূন্য উপত্যকা ছাড়া। আর আজ সেজে উঠেছে সেই ফেলে আসা পৃথিবীর মতো। পৃথিবীর ভাবনায় হঠাৎ কী একটা মনে পড়তেই অমৃতসূদন চট করে গিয়ে বসল ল্যাবের কম্পিউটারে। দ্রুত হাতে লিখে চলল নতুন কিছু সূত্র। তার পর হঠাৎই সূত্রগুলো চেঞ্জ করতে না-করতেই সবুজ বাতিটা জ্বলে উঠল তৈরি করা যন্ত্রটার মাথায়। অমৃতসূদন চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘ইউরেকা! আমি পেরেছি!’’

তার পরই স্ক্রিনের উপর চোখ রাখল অমৃতসূদন। অতীতের একটা দৃশ্য ফুটে উঠল সিনেমার মতো। দেখতে-দেখতে এক সময় চমকে উঠল অমৃতসূদন, ‘না, এ হতে পারে না। এ ভাবে শেষ হতে পারে না আমার সব কিছু, আমার এত গবেষণা...’

এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়াল অতীতের একটা বিশেষ তারিখ ও সময় দিল টাইম মেশিনে। তার পর নিজে গিয়ে বসল মেশিনের ভিতর।

পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়াল দেখল হাতের ঘড়িতে মাত্র পনেরো মিনিট সময় আছে। খুঁজে খুঁজে এক সময় পেয়ে গেল ছেলেটাকে। চিনে নিতে একটুও ভুল হয়নি। পনেরো-ষোলো বছরের ছেলেটা রেল স্টেশনে একা দাঁড়িয়ে। চোখ-মুখ শুকনো।

ছেলেটা ট্রেনের হাতল ধরার আগেই বিজ্ঞানী অমৃতসূদন বড়াল দৌড়ে গিয়ে ওকে জাপটে ধরল নিজের বুকের

মধ্যে, ‘‘না, অমৃত না...’’

(সমাপ্ত)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url