Skin Care: মহিলাদের ত্বকের বয়স কমানোর উপায় এবং রূপচর্চা
Skin Care: মহিলাদের ত্বকের বয়স কমানোর উপায় এবং রূপচর্চা
রূপচর্চায় দারচিনি:
গরমমশলাত্রয়ীর অন্যতম উপকরণ দারচিনি। রান্নাঘরের অতি পরিচিত সদস্য তো বটেই, পাশাপাশি শরীরের নানা সমস্যা সমাধানেও এর যথেষ্ট নামডাক রয়েছে। মুখশুদ্ধি থেকে গলাব্যথা—সবেতেই দারচিনির জয়জয়কার। অবশ্য এর গুণের এখানেই শেষ নয়। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বক এবং চুলের নানা সমস্যারও অব্যর্থ সমাধান এই দারচিনি। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসে ভরপুর, অ্যান্টি-ব্যাক্টিরিয়াল, অ্যান্টি-সেপ্টিক, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি উপাদানে সমৃদ্ধ এই মশলা অ্যাকনে থেকে ফাঁটা গোড়ালি, সব সমস্যাতেই ভীষণ উপকারী। নানাভাবে রূপচর্চায় কাজে লাগাতে পারেন এই জাদুকাঠিকে। বেছে বেছে দশটি উপায়ের সন্ধান দিলাম। আজ থেকেই রূপরুটিনে দারচিনিকে শামিল করে ফেলুন।
অ্যাকনের প্রতিকারে:
যাঁরা অ্যাকনে, ব্রন কিংবা পিম্পলের সমস্যায় বিব্রত, তাঁরা দারচিনি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। অ্যাকনের ব্যাক্টিরিয়া ধ্বংস করে ত্বক পরিষ্কার করতে দারচিনি সুপরিচিত। এতে নানা ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি, অ্যান্টি-ব্যাক্টিরিয়াল, অ্যান্টি-সেপ্টিক উপাদান এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস রয়েছে যা অ্যাকনে নির্মূল করার পাশাপাশি ত্বকের লালচেভাব দূর করতেও সাহায্য করে। সামান্য দারচিনিগুঁড়ো এবং মধু মিশিয়ে অ্যাকনের উপর লাগাতে পারেন। সারারাত রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের এক্সফোলিয়েশন:
মিহি দারচিনিগুঁড়ো প্রাকৃতিক এক্সফোলিটের হিসেবেও দারুণ কার্যকরী। ত্বকের উপরিভাগে জমে থাকা মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ত্বক সজীব এবং উজ্জ্বল করতে তুলতে হলে দারচিনি কাজে লাগাতে পারেন। সামান্য টকদইয়ের সঙ্গে অল্প দারচিনিগুঁড়ো মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের রন্ধ্রের ভিতর জমে থাকা ময়লা দূর হবে। শুষ্ক ত্বক, অতিরিক্ত সিবাম, ধুলো, তেল ইত্যাদি থাকলে, তাও দূর হবে। স্ক্রাবের পরিবর্তে ফেসপ্যাকেও ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি। ১ চা-চামচ দারচিনিগুঁড়ো, ২ চা-চামচ টকদই এবং সামান্য পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ব্লেমিশ কমাতে:
দারচিনি ত্বকের কোষ তৈরির প্রক্রিয়া এবং রক্ত সঞ্চালনা দ্রুততর করে। নিয়মিত তাই দারচিনি ব্যবহার করলে ত্বকে পুষ্টির কোনও ঘাটতি থাকবে না। এতে ত্বকের রিপেয়ারিং প্রসেসও দ্রুত হয়। ফলে ত্বকে কোনও ক্ষত বা দাগ-ছোপ থাকলে, তাও তাড়াতাড়ি হালকা হয়ে আসে। সামান্য দারচিনিগুঁড়ো এবং চন্দনবাটা একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট রেখে অথবা মিশ্রণ শুকিয়ে যাওয়া অবধি রেখে ঈষদুষ্ণ জলে তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিন। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে একবার মুখ ধুয়ে নিন। এই প্যাক সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন।
সেলুলাইটের প্রতিকার:
সেলুলাইট আজকাল খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এই সমস্যায় কম-বেশি প্রায় সকলেই ভুক্তভোগী। ত্বকের ঠিক নিচের স্তরে ফ্যাটের স্তর জমেই তৈরি হয় এই সেলুলাইট। আর একবার সেলুলাইট তৈরি হলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়ায় বেশি কঠিন। তবে এই জেদী সেলুলাইট থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার খুব ভাল অপশন হল দারচিনি। প্রতিদিন ডায়েটে দারচিনি যোগ করতে পারেন। এতে শরীরে সেলুলাইট কম তৈরি হবে। পাশাপাশি দারচিনি দিয়ে তৈরি স্ক্রাবও ব্যবহার করতে পারেন। দারচিনির কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে তুলতে এর সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন সামান্য কফিগুঁড়ো। কফিও সেলুলাইট কমাতে সিদ্ধহস্ত। ফলে এই উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করলে খুব ভাল ফল পাবেন। সম পরিমাণে কফিগুঁড়ো এবং দারচিনিগুঁড়োর সঙ্গে সামান্য নারকেল মিশিয়ে সেই মিশ্রণ সেলুলাইটযুক্ত অংশে মাসাজ করুন। সার্কুলার মোশনে ১০ মিনিট ধরে মাসাজ করবেন। প্রতিদিন করতে পারলে ভাল। একান্তই সম্ভব না হলে একদিন অন্তর ব্যবহার করুন।
ত্বকের বয়স রুখতে:
বয়স মোটামুটি পঁচিশের কোঠা পেরলেই ত্বক নিয়ে নতুন সমস্যা শুরু হয়। বলিরেখা, ফাইন লাইনস ইত্যাদি দেখা দিতে শুরু করে। বাজার থেকে পয়সার শ্রাদ্ধ করে ক্রিম, প্যাক, মাস্ক এনেও আখেরে লাভ কিছুই হয় না। সত্যি কথা বলতে, যে যাই বলুক না কেন, ত্বকের বয়স আটকানো কখনই সম্ভব নয়। তবে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে যত্ন নিলে ত্বকের এজিং প্রসেস ত্বরান্বিত করা অবশ্যই সম্ভব। তাছাড়া নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বক যে বয়স্কালেও সুন্দর থাকবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বলিরেখা, ফাইন লাইনস, কালো ছোপ—অর্থাৎ ত্বকে বার্ধক্যের বিভিন্ন ছাপ প্রতিরোধ করতে হলে ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি। এই জাদুকাঠি বাজারচলতি কেমিক্যালযুক্ত প্রডাক্টের তুলনায় যে ত্বকের পক্ষে ভাল, তা আশা করি বলে দিতে হবে না? ত্বকে ফ্রি-র্যাডিকালের পরিমাণ কমিয়ে ত্বক উজ্জ্বল এবং দৃঢ় করে তুলতে হলে আজ থেকেই দারচিনি ব্যবহার করতে শুরু করুন। দারচিনি জলে ফুটিয়ে সেই জল ঠান্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই জল চা হিসেবে পান করাও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এছাড়া যে কোনও অ্যান্টি-এজিং ফেসপ্যাকে (ডিম, কলা, মধু, দুধ ইত্যাদি মিশিয়ে বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন) সামান্য দারচিনিগুঁড়ো মিশিয়ে ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।
ফাঁটা গোড়ালির সমস্যায়:
শীতকালে ফাঁটা গোড়ালির সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে পারেন দারচিনি। দারচিনি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে যেমন কার্যকরী, তেমনই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। তাই ফাঁটা গোড়ালির সমস্যাতেও খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সিনামন এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। তবে শুধু এসেনশিয়াল অয়েল কখনই ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করবেন না। ২ ফোঁটা সিনামন এসেনশিয়াল অয়েলের সঙ্গে ১ চা-চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ফেঁটে যাওয়া অংশে লাগিয়ে রাখতে পারেন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে এই মিশ্রণ লাগিয়ে মোজা পরে নিন। প্রতিদিন রাতে এই তেল ব্যবহার করলে কয়েকদিনের মধ্যে গোড়ালি নরম এবং মসৃণ হয়ে উঠবে।
লিপ প্লাম্পার:
ফাঁটা গোড়ালির পাশাপাশি রুক্ষ, শুষ্ক ঠোঁটেও ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি। ঠোঁটের উপরিভাগে জমে থাকা মৃত কোষের পরত সরিয়ে ঠোঁট নরম এবং মসৃণ করতে দারচিনির জুড়ি মেলা ভার। আধ চা-চামচ দারচিনিগুঁড়ো এবং আধ চা-চামচ মধু মিশিয়ে লিপ স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁটে সামান্য ইরিটেশন হতে পারে। অবশ্য তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। দারচিনিতে রয়েছে সিনাম্যালডিহাইড, যা এর গন্ধ এবং এই ইরিটেশনের জন্য দায়ী। এই কমপোনেন্ট লিপ প্লাম্পিংয়েরও কাজ করে। যাঁদের ঠোঁট খুব পাতলা, তাঁরা বাজার থেকে দামী লিপ প্লাম্পার না কিনে দারচিনিগুঁড়োও ব্যবহার করতে পারেন। সামান্য দারচিনিগুঁড়ো ঠোঁটে কয়েক মিনিট ঘষে টিস্যু পেপার দিয়ে ঠোঁট মুছে নিন।
স্ক্যাল্প পরিষ্কার করতে এবং চুলের গ্রোথ বাড়াতে:
দারচিনির মিষ্টি গন্ধ স্ক্যাল্প ফ্রেশ রাখতে সাহায্য করে। তাই শ্যাম্পুর সঙ্গে সামান্য দারচিনিগুঁড়ো মিশিয়ে নিতে পারেন। অথবা আধ চা-চামচ দারচিনিগুঁড়ো, ১ চা-চামচ মধু এবং পরিমাণমতো জল মিশিয়ে নিনি। এই মিশ্রণ স্প্রে বোতলে ভরে স্ক্যাল্পে স্প্রে করতে পারেন। স্ক্যাল্প খুব একটা ঘষাঘষি করবেন না। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া দারচিনি যেহেতু রক্ত সঞ্চালনের গতি বাড়াতে সাহায্য করে, তাই চুলের গোড়ায় পুষ্টির ঘাটতি থাকে না। তাই চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়ার সমস্যাও কমে। পাশাপাশি চুলের গ্রোথও ভাল হয়।
প্রাকৃতিক চুলের রং হিসেবে:
সালঁতে গিয়ে চুলে হাইলাইটস করানো আজকাল যেমন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তেমনই খরচসাপেক্ষও। যদি বলি বাড়িতে বসে বিনা খরচেই যদি সালঁর মতো হাইলাইটস পেয়ে যান, তাহলে? দারচিনি এবং মধু একসঙ্গে প্রাকৃতিক হাইলাইটার হিসেবে কাজ করে। অসম্ভব মনে হলেও, এটাই কিন্তু বাস্তব। ব্যবহার করে নিজেই দেখে নিন ফল পান কি না। সাধারণত সালঁতে যে ধরনের হাইলাইটার ব্যবহার করা হয়, তার অন্যতম প্রধান উপকরণ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। আর দারচিনিতে প্রাকৃতিকভাবেই এই উপাদান মজুত রয়েছে। তবে একা দারচিনিতে কিন্তু কাজ হবে না। আধকাপ পাতিলেবুর রস, ১ টেবলচামচ দারচিনিগুঁড়ো এবং ১ টেবলচামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে এই মিশ্রণ চুলের ডগায় লাগাতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রনজ়ার হিসেবে:
মেক-আপ কিটে ব্রনজ়ার না থাকলে, তার বিকল্প হিসেবে দারচিনিগুঁড়ো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। বেশ ন্যাচারাল ফিনিশ আসবে। তবে শ্যাডো হিসেবে দারচিনিগুঁড়ো ব্যবহার না করাই ভাল। অসাবধানতাবশত চোখে চলে যেতে পারে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url