story literature: 'তিন মাসের জেল, সাত দিনের ফাঁসি' রহস্যময় একটি নতুন গল্প সাহিত্য
'তিন মাসের জেল, সাত দিনের ফাঁসি' রহস্যময় একটি নতুন গল্প সাহিত্য
তিন মাসের জেল, সাত দিনের ফাঁসি
বড়দিনের আর তিনদিন বাকি। মন্ত্রীমশাই সকালে হালকা জিম করে ডবল ডিমের ওমলেটে সবে কামড় বসিয়েছেন, এমন সময় রাজামশাইয়ের হোয়াটসঅ্যাপ। সঙ্গে টেক্সট মেসেজও— ‘এখনই চলে আসুন। ভেরি আর্জেন্ট ম্যাটার।’
বিরক্ত হলেন মন্ত্রীমশাই। চুলে একটু কলপ করারও ইচ্ছে ছিল। সেটাও মাটি হল। রাজামশাইয়ের জরুরি তলব বলে কথা! তড়িঘড়ি ওমলেটটা প্রায় গিলেই ড্রাইভারকে বললেন গাড়ি প্রস্তুত করতে। তাড়াহুড়োয় ড্রাইভার দরজা খুলে দেওয়ার আগেই নিজে গাড়ির দরজা খুলে উঠে পড়েছেন। এমনকি, মেনগেটের সিকিওরিটি গার্ডটা সেলাম ঠুকল কি না তাও খেয়াল করলেন না! ব্যাটা মাঝে মাঝেই ভুলে যায়। টেনশন কমাতে একটা জর্দা-টর্দা দেওয়া পান মুখে পুরে নিয়েছিলেন। কিন্তু টেনশন এমন যে, মুখে যত পিক এল, গিলে ফেললেন সব। অথচ কতজন তাঁরই গাড়ির পাশে কাচ নামিয়ে দিব্যি পিক ফেলে গেল।
মন্ত্রীমশাইয়ের শুধু চিন্তা, কী এমন হল যে, এই সাত-সকালেই তলব? বড়দিনের সব প্রস্তুতিই তো সেরে ফেলেছেন। সাহেবপাড়ায় আলোর রোশনাই, হোর্ডিং, ব্যানার, খবরের কাগজ বা অন্যান্য মিডিয়ায় ক্রিসমাস উপলক্ষে রাজামশাইয়ের শুভেচ্ছা বার্তা সবই তো তৈরি হয়ে গিয়েছে। সান্ত্রী-পুলিশের দায়িত্বও সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা-ও এখন কিসের আর্জেন্ট ম্যাটার? সাহেবপাড়ার লাইটগুলো কি জ্বলছে না? জিশু খ্রিস্টকে রবীন্দ্রনাথ বলে মনে হচ্ছে? গেল বছর এমন হয়েছিল। লোকে বুঝতে পারত না যদিও, কিন্তু লাইট কোম্পানি কবিগুরু নাম লেখা টুনিগুলো বদলাতে ভুলে গিয়েছিল। সে এক গোলমেলে কাণ্ড। নিন্দুকের তো অভাব নেই, তার উপর হাজার রকমের মিডিয়া। কত রকম তরজা শুরু হয়ে গেল। তবে রক্ষে, এর মধ্যে ভাল লোকও ছিল। রবীন্দ্রনাথই যে জিশু খ্রিস্টের অবতার, তাঁরা এমন সম্ভাবনা নিয়ে রীতিমতো কঠিন আলোচনা শুরু করে দিল। তাতে তর্কটা ঘুরে গেল অন্য দিকে। এবারেও সেই কোম্পানি আলোটা করেছে। মন্ত্রীমশাই রাজি ছিলেন না, নেহাত তাঁর ভায়রাভাইয়ের কালীপুজোর লাইটিংটা ফ্রি-তে করে দিয়েছিল, তাই কেবল ধমক-ধামক দিয়েই ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই বিষয়টাই রাজামশাইয়ের কানে চলে যায়নি তো! শীতেও ঘামতে শুরু করলেন মন্ত্রীমশাই।
রাজবাড়ি পৌঁছে দেখেন, রাজামশাই বৈঠকখানায় বসে বেশ একটা মারপিটের হিন্দি সিনেমা দেখছেন জমিয়ে। মন্ত্রীমশাইকে দেখে বললেন, “একটু বসুন। লাস্ট সিন চলছে। মিনিট দশেক বাকি।”
মন্ত্রীমশাই মনে-মনে বিরক্ত হলেন। দিব্যি তো ফিলিম দেখছেন রাজামশাই, তাড়াই নেই কোনও। গতকাল ফেসবুকে জিশুকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলেন মন্ত্রীমশাই। ক’টা লাইক পড়ল দেখাই হল না। আর তাড়াহুড়োয় মোবাইলটাও ফেলে এসেছেন।
যাই হোক, দশ মিনিটের বদলে চল্লিশ মিনিট পর সিনেমা শেষ হতে রাজামশাই বললেন, “একটা নতুন প্রতিযোগিতা শুরু করব ভাবছি। ফি-বছর এই সময়ে পিকনিকের ঢল নামে চারিদিকে। বিশেষ করে এই বড়দিন থেকে নিউইয়ার পর্যন্ত। লোকজন কত আমোদ-আহ্লাদ করে। রকমারি খাবার। ঝলমলে পোশাক। গানবাজনা। খেলাধুলো। ভাবছি, এদের মধ্যে থেকে সেরা পিকনিকের দশ-বিশটা দল ডেকে নিয়ে প্রাইজ় দেব। ক্রীড়ামন্ত্রীর দফতরই এটা দেখবে। পিকনিক পার্টিগুলোর উপরে নজর রাখবে ওরা গোপনে।”
ইতিমধ্যে ক্রীড়ামন্ত্রীও এসে পড়েছিলেন। বললেন, “না না স্যর। গোপনে না। আমরা অ্যাড দিয়ে দেব। লোকে নয়তো নিজের সেরাটা দেবে না। এই নিয়ে চর্চাও হবে। আমরা প্রতিযোগিতায় যোগদানের জন্য এন্ট্রি-ফিও নিতে পারি।”
“তা ঠিক। কিন্তু সময় যে খুব কম। এন্ট্রি-ফিটা এ-বছর বাদ থাক। প্রাইজ়টা কী হতে পারে সেটা ভাবুন।”
ক্রীড়ামন্ত্রী হেসে বললেন, “স্যর, এটা একদম ইউনিট করে দেব।”
“ইউনিট না, বলুন ইউনিক,” মন্ত্রীমশাই শুধরে দিয়েছেন।
রাজামশাই ধমক দিলেন, “কথার মধ্যে বাধা দেবেন না। বোঝা গেলেই হল। ক্রীড়ামন্ত্রী মাঠের মানুষ। ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, যে-কোনও বড় খেলা মাঠে গিয়ে দেখছেন ছোট্ট বয়স থেকে। অত ইংরেজি জানেন না। তা ছাড়া ওটা আমাদের ভাষা না। হিন্দিটা তো ভালই বলেন।”
“হ্যাঁ স্যর, যা বলছিলাম,” ক্রীড়ামন্ত্রী খুশি খুব, “যারা যারা পুরস্কার পাবে, তারা ইচ্ছেমতো ডিজে বাজিয়ে নাচ-গান ও নানা অনুষ্ঠান করতে পারবে। তা সে হোল নাইট কি মিডনাইট। তা ছাড়া আনন্দ হলে রাত দশটার পরে বা যখন মন চাইবে বাজি-টাজি ফাটাতে পারবে। ওদের জন্য শব্দেরও কোনও লিমিট রাখা যাবে না। এ ছাড়া ছোটখাটো ব্যাপার, যেমন মশাটশা তাড়াতে বা আবর্জনা জমলে সেগুলো পুড়িয়ে ফেললে পুরসভা ধরবে না। গাড়ির হর্ন বাজিয়েই আনন্দ করতে পারবে। বিদেশে তো এটা শুরুই হয়ে গেছে। দোল খেলার সময়ও রং-টং নিয়ে বাধানিষেধ থাকবে না। দরকারে যে-কোনও প্লাস্টিকও ইউজ় করতে পারবে। এটা অবশ্য ঠিক পুরস্কার বলা যায় না। সবাই করছে। আর রাস্তায় বারোয়ারি পুজো-টুজো করতেই পারবে। পুজোর পর রাস্তার প্যান্ডেল করার ফলে যা খোঁড়াখুড়ি হবে তা মেরামতেরও দরকার নেই। আর...”
“থামুন, থামুন,” মন্ত্রীমশাই না বলে পারলেন না, “ইয়ার্কি করছেন না কি? এ সব তো বেআইনি বিষয়।”
“আমাকে আগে শেষ করতে তো দেবেন,” দমে না গিয়ে বললেন ক্রীড়ামন্ত্রী, “আমি তো এবারে গুটখা, পানটান খাওয়ার ব্যাপারে বলছিলাম। দেখুন স্যর, বাজিশিল্প যেমন বহু মানুষের রুজিরোজগার জোগায়, গুটখা বা পান-জর্দাও তাই। একটু তলিয়ে ভাবুন স্যর, এতে যে দেদার পিক ফেলা হচ্ছে তাতে অর্থনীতির চাকাও ঘুরছে কেমন!”
“বুঝলাম না,” বললেন রাজামশাই।
“বুঝলেন না? রাস্তার ডিভাইডারগুলো দেখুন স্যর। নতুন রঙের পরত পড়তে না পড়তেই গুটখার পিকে ফের লাল হয়ে যাচ্ছে। আবার টেন্ডার ডাকতে হচ্ছে। লেবার আসছে। তারা কাজ পাচ্ছে। রোজগার হচ্ছে তাদের। কিন্তু আগায় রং করে ল্যাজে পৌঁছনোর আগেই আগা ফের লাল। এই সব লোক কিন্তু দেশের আসল সেবক। প্রতিযোগিতায় এদের আরও পিক ফেলার উৎসাহ দিতে হবে। ডিভাইডারই নয় শুধু, নজর করলে দেখবেন যত্রতত্রই এই পিকের দাগ। কিছু কিছু জায়গা আবার পার্মানেন্ট পিকদানি। যেমন রেলের স্টেশন, অফিসবাড়ি, পাইকারি বাজারটাজার। গড়িয়াহাট বেসমেন্ট বাজারের সিঁড়িগুলো এর অসাধারণ স্যাম্পেল। কয়েকটা জায়গায় গুটখার পিক-এ ইয়া মোটা মোটা পলস্তারা পড়ে গিয়েছে।”
আবার বাধা দিলেন মন্ত্রীমশাই, “কিন্তু, তাও নতুন রং হয়নি। মানে তোমার যুক্তিতে কেউ কাজ পায়নি। বরং পরিবেশের বারোটা বেজেই চলেছে। ফালতু কথা বন্ধ করো এবার। দেশটাকে তুমি উচ্ছন্নে পাঠাতে চাও দেখছি।”
“আপনি তো পুরোটা বলতেই দিচ্ছেন না। যারা পুরস্কার পাবে, শুধু তারাই এই সব কর্ম করার লাইসেন্স পাবে। অন্যরা পাবে না। ফলে কী হবে, এখন যেমন ধরতে পারছি না, এবারে এই সব কাজ করলেই লাইসেন্স দেখতে চাওয়া হবে। যারা দেখাতে পারবে না, তাদের মোটা জরিমানা হবে। দেশের আয়ও বাড়বে।”
“বাহ্, ভাল বুদ্ধি তো!” মন্ত্রীমশাইয়ের দিকে চেয়ে বললেন রাজামশাই।
ক্রীড়ামন্ত্রী উৎসাহ পেয়ে বললেন, “আবার অর্থনীতির চাকাও ঘুরবে। ফি-বছর প্রতিযোগিতা হতে থাকলে নতুন নতুন দল উঠে আসবে। পিকনিকের সংখ্যাও বাড়বে। মানুষজন আরও কাজ পাবে। আমরা প্রথম তিনটে দলকে নগদও কিছু দিয়ে দেব। এতে উৎসাহও বাড়বে।”
রাজামশাই খুব খুশি। মনে মনে ভাবলেন ক্রীড়ামন্ত্রীকে অর্থ দফতরেরও অর্ধেক দায়িত্ব দিয়ে দেবেন। ওটা নিজের কাছেই রেখেছেন। খুব চাপ।
“তা হলে আর দেরি কেন, বিজ্ঞাপন দিয়ে দাও,” বললেন রাজামশাই।
এমন সময় অন্দরমহল থেকে বার্তা এল রানিমা তলব করেছেন। জরুরি। রাজামশাই ঘুরে এসে বললেন, “আবার একটা সমস্যা। আমার ছেলের আবার এতে আপত্তি। সে এইমাত্র ফোন করে তার মাকে জানিয়েছে। কী করা যাবে এখন?”
“কীসে আপত্তি তার?” জিজ্ঞেস করলেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
“জানি না। আমার সব কাজেই তো তার আপত্তি,” বললেন রাজামশাই, “এই যে পার্ক স্ট্রিটটা প্রতিবার বড়দিনে লাইট দিয়ে সাজানো হয়...”
“এতেও তার আপত্তি? এ তো বহুকাল ধরেই...” বলে উঠেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
“আঃ! কথা শেষ করার আগেই কথা বলা একটা রোগ তোমাদের। এটা কি টিভি চ্যানেলের কোনও লাইভ প্রোগ্রাম? সে বলছে পার্ক স্ট্রিটের ওই আলোকিত অংশটুকুই কেন সাহেবপাড়া বলা হবে? ওইটুকুর মধ্যে একটা গির্জা পর্যন্ত নেই। গির্জা-টির্জা নিয়ে স্বয়ং জোব চার্নকের সমাধি-টমাধি বা সাহেবি আমলের সব বড় বড় অট্টালিকা, এ সবই রয়েছে ডালহৌসি বা কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটের দিকটায়। রাইটার্স বিল্ডিং বলুন বা রাজভবন অথবা হাইকোর্ট— আসল সাহেবপাড়া তো ওই চত্বরেই। ওটাও সাজানো উচিত।”
“হতে পারে, ছোট ছেলে স্যর। ক্লাস সেভেনে পড়ে মোটে। কতটা আর জানে। ওকে ডাকুন বুঝিয়ে দিচ্ছি,” বললেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
রাজামশাই বললেন, “ডাকব কী? সে তো গেছে তার ঠাম্মার বাড়ি। আমাদের গ্রামে। গতকাল প্রতিযোগিতার কথাটা বলেছিলাম ফোনে। যাকগে ওর কথা থাক, বিজ্ঞাপনটা দিয়েই দাও। বাংলাতেই দিয়ো। তোমার যা ইংরেজি জ্ঞান!”
“ঠিক আছে স্যর। চড়ুইবাতি কম্পিটিশন।”
“আবার কম্পিটিশন কেন, এই তো এতক্ষণ প্রতিযোগিতা বলছিলে।”
“সরি স্যর। চড়ুইবাতি প্রতিযোগিতা।”
“ঠিক আছে, যা করার তাড়াতাড়ি করো,” বলে উঠে পড়লেন রাজামশাই।
মন্ত্রীমশাই খুব খুশি। যা কিছু হ্যাপা ক্রীড়ামন্ত্রী বুঝুক। চড়ুইবাতিই লিখুক। ওই ভাবেই বিজ্ঞাপন যাক। বড্ড অহঙ্কার হয়েছে। তার পান চিবনো নিয়েও খোঁচা দিয়েছে। রাজামশাই কেমন শাস্তিটা দেন, দেখবেন তারিয়ে তারিয়ে।
কিন্তু তেমন আর হল কই! পরের দিনই তোলপাড় চারিদিক।
যে পারছে চড়ুইপাখি মারছে। দেশীয় পাখি মারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু কে শুনবে? স্বয়ং ক্রীড়ামন্ত্রীর দফতর থেকে ব্যানার ছাপিয়ে বেরিয়েছে, ‘চড়ুইভাত প্রতিযোগিতা’।
“ঠিক আছে, যা করার তাড়াতাড়ি করো,” বলে উঠে পড়লেন রাজামশাই।
মন্ত্রীমশাই খুব খুশি। যা কিছু হ্যাপা ক্রীড়ামন্ত্রী বুঝুক। চড়ুইবাতিই লিখুক। ওই ভাবেই বিজ্ঞাপন যাক। বড্ড অহঙ্কার হয়েছে। তার পান চিবনো নিয়েও খোঁচা দিয়েছে। রাজামশাই কেমন শাস্তিটা দেন, দেখবেন তারিয়ে তারিয়ে।
কিন্তু তেমন আর হল কই! পরের দিনই তোলপাড় চারিদিক।
যে পারছে চড়ুইপাখি মারছে। দেশীয় পাখি মারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু কে শুনবে? স্বয়ং ক্রীড়ামন্ত্রীর দফতর থেকে ব্যানার ছাপিয়ে বেরিয়েছে, ‘চড়ুইভাত প্রতিযোগিতা’।
পুরস্কারের পুরোটা আর বলা হয়নি, কেবল নগদের বিষয়টা রয়েছে। ব্যস, লোকজন ভেবেছে এবারে বড়দিনে কেক-পেস্ট্রির সঙ্গে চড়ুই পাখি খেতেও উৎসাহ দিচ্ছে ক্রীড়া দফতর। দেদার চড়াই ধরাও হচ্ছে। এমনিতেই চড়ুইয়ের সংখ্যা কমে আসছে নানা উপদ্রবে। তার উপর কিনা এমন ঘোষণা!
পরিবেশবিদরা সবাই পথ আটকে হরতাল শুরু করেছে। খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে চারিদিকে, একদিকে পরিবেশবিদ অন্যদিকে প্রতিযোগীরা।
পিকনিকে উৎসাহী প্রতিযোগীরাই সংখ্যায় বেশি। অনেকে আবার এর সঙ্গে ময়দানে ফের বইমেলা শুরু করা বা রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করার জন্য দাবি জানাতে শুরু করেছে। ডিজিটাল মিডিয়াও বসে নেই। একের পর এক বাইট চলছে।
ক্রীড়ামন্ত্রী রাজামশাইয়ের পায়ে পড়েছেন, “কেউ ক্যামফ্লেজ করেছে স্যর। আমাকে সরানোর চেষ্টা। প্রিন্টে যাওয়ার আগে আমি নিজের চোখে ঘোষণাটা দেখেছি, চড়ুইবাতি প্রতিযোগিতা।”
“চড়ুইবাতি প্রতিযোগিতা?” ধমক দিলেন রাজামশাই।
“হ্যাঁ। ইয়ে মানে না স্যর। চড়াইবাতি প্রতিযোগিতা।”
রাজামশাই খুব রেগে গিয়েছেন, কাদের নিয়ে তিনি দেশ চালাচ্ছেন! হুকুম দিলেন, “পঞ্চাশ হাজার বার সঠিক বানানটা লিখুন। উঁহু, বসে না, দাঁড়িয়ে। আর শুধু চড়ুইভাতি না, সঙ্গে সাবোটাজ আর ক্যামোফ্লেজ বানান দুটোও মানে-সহ লিখবেন এক হাজার বার। আর আপনি মন্ত্রীমশাই, খুঁজে বের করুন, ভুল না সত্যিই সাবোটাজ? চড়ুইবাতি হোক কি চড়াইবাতি। চড়ুইভাত কী ভাবে হল? আর প্রিন্টের আগে এতগুলো লোকের নজরে পড়ল না? প্রিন্টের পরেও না? সব ক’টাকে দেখছি আমি।”
যাই হোক, প্রতিযোগিতা তো তুলে নেওয়াই হল সঙ্গে সঙ্গে। যদিও তার রেশ চলল নিউ ইয়ার পেরিয়ে সেই সরস্বতী পুজো পর্যন্ত।
অবশ্য ইতিমধ্যে কর্মটি কার তাও জানা গিয়েছে। বড়দিনের পরের দিনই জানা যায় এটা রাজামশাইয়ের ছেলের কীর্তি। সে এই বয়সেই কম্পিউটারে তুখোড়। মায়ের কাছে রাজামশাইয়ের এই উদ্ভট পরিকল্পনা শুনেই সে ক্রীড়ামন্ত্রীর কম্পিউটার হ্যাক করে চড়ুইভাতির হ্রস্বই বাদ দিয়েছিল। অবশ্য ক্রীড়ামন্ত্রী চড়ুইবাতিই লিখে দিয়েছিলেন। তাঁর দফতরের আধিকারিক সেটা ঠিক করে দেন। কিন্তু প্রিন্টে যে পাল্টে গিয়েছে তা তিনি আর দেখেননি।
রাজামশাই কী আর শাস্তি দেবেন ছেলেকে! তার ঠাম্মা স্বয়ং এসে ধিক্কার দিয়ে গিয়েছেন যে, “ওকে কী দোষ দিবি? বড় একটা বিপর্যয়ের থেকে তোকে বাঁচিয়েছে ও। কী সব মন্ত্রী নিয়ে কাজ করিস অ্যাঁ? আর কী সব চিন্তাভাবনা! আর তেমনই তোর প্রজাও বটে। তা অবিশ্যি যেমন রাজা তার তেমনই তো প্রজা হবে। কত বললুম, আমার কাছে চলে আয়। কেমন সুন্দর চড়ুইভাতি করলাম আমরা। কেক বানালাম। পায়েস করলাম নলেন গুড়ের। তার পর নদীর ধারে গিয়ে জমজমাট বনভোজন, বুঝলি। শীতের ধনেপাতার বড়া, বেগুনি আর চা-ও ছিল সঙ্গে। আর আমাদের সঙ্গে অন্য কারা ছিল জানিস, তোর বুড়ো মন্ত্রীমশাইয়ের দুই নাতি-নাতনিও। খবরই তো রাখিস না ছোটদের কিছু তোরা! আমি গাইলাম দুটো বাউলগান। আর ওরা গাইল ‘কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া’, ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’, বাংলায় আর ইংরেজিতে। ওগুলো পশ্চিমের সুরে বাঁধা হয়েছিল, মনে আছে তো কিছু? নাকি গড্ডলিকা প্রবাহে থেকে তাও ভুলেছিস। যাকগে, শাস্তি যদি দিতে চাস, তোর ক্রীড়ামন্ত্রী যে সব কম্মের জন্য পুরস্কার দিতে চাইছিল, সেই অপকম্মকারী লোকগুলোকে ধরে ধরে তিন মাসের জেল আর সাত দিনের ফাঁসি দে। এটা কে বলেছিল, তা মনে আছে তো, নাকি তাও ভুলে বসেছিস?”
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url