Winter care: শীতের ক’মাস আরও উপভোগ্য করে তুলতে রূপচর্চার কমপ্লিট গাইডলাইন
Winter care: শীতের ক’মাস আরও উপভোগ্য করে তুলতে রূপচর্চার কমপ্লিট গাইডলাইন
বাতাসের রুক্ষতা আর শুষ্কতা থেকে ত্বক আর চুলকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজন বিশেষ পরিচর্যা। শীতের ক’মাস আরও উপভোগ্য করে তুলতে রূপচর্চার কমপ্লিট গাইডলাইন রইল সকলের জন্য।
নেই নেই করেও শীতের আমেজ বেশ মালুম হচ্ছে এবছর। গ্রীষ্মপ্রধান দেশ বলেই বোধহয় বছরের এই সময়টা সকলের কাছে এতটা উপভোগ্য হয়ে ওঠে। চারদিকে বেশ পিকনিক-পিকনিক হাওয়া, প্রায় সকলেই কার্নিভাল মোডে। বিয়েবাড়ি, পার্টি, পিকনিক... সব মিলিয়ে একদম টাইট শেডিউল সবার।
কিছু একটা ভুলে যাচ্ছেন কি?
অনুষ্ঠানের এত বড় লিস্ট স্বমহিমায় কমপ্লিট করতে হলে ত্বক আর চুলের দিকেও তো একটু তাকাতে হবে, নাকি? উষ্ণতার পারদ একটু নামতে না নামতেই তো যত রাজ্যের সমস্যা শুরু! আজ খুসকি তো কাল ঠোঁট ফাটা, পরশু আবার ত্বকের মুখভার। শুনতে যতই সাধারণ হোক, সময় থাকতে থাকতেই এদের নিয়ন্ত্রণ করুন। না হলে অনুষ্ঠানের সাজ আর আপনার উইন্টার ফেস্টিভ মুড, দু’টোই মাঠে মারা যাবে...
রুক্ষ চুলের দেখভাল:
চুলের রুক্ষতা থেকে শুধু চুল পড়ার সমস্যাই হয়, তা নয়। খুসকি, ডগা চেরা, নির্জীবতার মতো হাজারও সমস্যার সূত্রপাত হয় রুক্ষ চুল থেকে। চুল সহজে বাড়তে চায় না, নতুন চুল উঠতে চায় না। যাঁদের সারা বছর চুল শুষ্ক থাকে, তাঁদের সমস্যার তো আরও পোয়া বারো! শীতে চুল ভাল রাখতে রোজকার যত্ন নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটা বাড়তি জিনিস মনে রাখুন।
• চুল রোজ রোজ ধোবেন না। শীতে যেহেতু বাতাসের আর্দ্রতা এমনিই কম থাকে, তাই চুল ভেজালে, তা শুকনোর জন্য বাতাস চুলের নিজস্ব আর্দ্রতাও কেড়ে নেয়। ফলে রোজ রোজ চুলে জল দিলে শুষ্কতা এবং রুক্ষতা, দুই-ই বাড়বে। একদিন অন্তর চুলে জল দিন। যাঁদের চুল খুব ঘন, তাঁরা মাঝের দিনগুলোয় গরম জলে তোয়ালে ভিজিয়ে খানিকক্ষণ চুলে জড়িয়ে রাখতে পারেন। তারপর হেয়ার সেরাম লাগিয়ে নিন চুলের দৈর্ঘ্য বরাবর।
• ভিজে চুল তোয়ালে দিয়ে ঘষবেন না। নরম সুতির তোয়ালে ব্যবহার করুন এই দু’মাস। ভেজা চুলে এই তোয়ালে জড়িয়ে পাগড়ির মতো করে বেঁধে নিন। একটু পরে তোয়ালে বাড়তি জল শুষে নিলে খুলে নিন।
• চুল আঁচড়ানোর জন্য কাঠের চিরুনি মাস্ট এই ক’মাস। এতে চুলে ফ্রিকশন কম হয় এবং ক্ষতির আশঙ্কাও কমে।
• রাতে অবশ্যই চুল হালকা করে বেঁধে শুতে যান। স্যাটিনের পিলোকেস ব্যবহার করুন, যাতে চুলে বেশি ঘষা না লাগে। না পারলে স্যাটিনের কোনও স্কার্ফ দিয়ে চুলে ঢেকে নিন।
• শ্যাম্পুর ব্যবহার সপ্তাহে দু’দিনের বেশি করবেন না। খুসকির সমস্যায় টি-ট্রি অয়েল শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। সাধারণ কন্ডিশনারের বদলে লিভ-ইন কন্ডিশনার লাগান। অনেকের চুলই দু’দিন শ্যাম্পু না করলে তেলতেলে দেখায়। তাঁরা একদিন অন্তর যখন চুল ধোবেন, সাধারণ জলের পরিবর্তে অন্য একটা মিশ্রণ ব্যবহার করুন। কমলালেবুর খোসা, কয়েকটা লবঙ্গ জলে ফেলে ফুটিয়ে নিন ১৫ মিনিট। এই জল ছেঁকে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় চুল ধোওয়ার কাজে ব্যবহার করুন। এতে চুলের বাড়তি তেলাভাব কেটে যাবে, তবে চুল রুক্ষ হবে না।
• মনে হতে পারে, তেল লাগালেই শুষ্কতার সমস্যা কমে যাবে। সাময়িক উপকার পাবেন ঠিকই, তবে অতিরিক্ত তেল থেকে ক্ষতিও হতে পারে। কারণ প্রতিদিন চুল ধোবেন না, শ্যাম্পু করবেন না। ফলে চুলের গোড়ায় বাড়তি তেল জমে থাকতে পারে। ঘাম হলেও তাও তেলের পরতের নিচে ট্র্যাপড হয়ে গোড়ার ক্ষতি করবে। তাই একদম হালকা কোনও তেল পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করুন। অলিভ অয়েল বা হোহোবা অয়েল কয়েক ফোঁটা করে তালুতে ঢেলে সিঁথি কেটে কেটে পুরো স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন। চাপ দেবেন না, আঙুলের ডগা আলতো করে স্ক্যাল্পে বোলাতে থাকুন। পুরো চুলে এভাবে তেল লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর একটা টিসু স্ক্যাল্পে চেপে চেপে দেখুন। যদি তাতে তেলের রেসিডিউ দেখতে পান, বুঝবেন বেশি তেল লাগিয়েছেন। পরদিন সেই মতো তেলের পরিমাণ কমিয়ে নিন।
• শীতের মাঝামাঝি একবার চুলের ডগা ট্রিম করে নিন। এতে ডগা চেরার সমস্যা হবে না। নিয়মিত রাতে শুতে যাওয়ার আগে কোনও হেয়ার সেরাম নিয়ে শুধু চুলের ডগায় লাগিয়ে তারপর চুল বেঁধে নিন। এতে চুলের ডগা মসৃণ এবং আর্দ্র থাকবে।
শুষ্ক ত্বকের সমাধান:
ক্রিমের পর ক্রিম মাখছেন, সেরাম, মাস্ক, সব চলছে। কিন্তু শুষ্কতা যেমন ছিল, তেমনই! শীতে এই সমস্যা কিন্তু ঘরে ঘরে হয়। তবে এর সমাধান আরও বেশি প্রডাক্ট ব্যবহার করা নয়। বরং সঠিক পদ্ধতিতে, সঠিক ধরনের প্রডাক্ট ব্যবহার করলে শুষ্কতা থেকেও রেহাই পাবেন আর ত্বকে লাবণ্যও আসবে।
• স্ক্রাবিং করুন প্রতি সপ্তাহে বা দু’ সপ্তাহে একদিন। ঘরে বানানো মাইল্ড স্ক্রাব ব্যবহার করুন। ওটমিল গরম দুধে খানিকক্ষণ ভিজতে দিন। তারপর সেই মিশ্রণ ঠান্ডা করে তা সার্কুলার মোশনে মুখে ঘষুন। গোলাপের পাপড়ি অল্প দুধের সরের সঙ্গে বেটে তা দিয়েও স্ক্রাবিং করতে পারেন। অথবা কমলালেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। যাঁদের সেনসিটিভ ত্বক, তাঁরা শুধু টক দই লাগান মুখে। এটিও মৃত কোষ দূর করবে।
• সপ্তাহে একবার মুখে স্টিম দিন। ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইটহেডসের সমস্য থাকলে স্টিম নেওয়ার পর স্ক্রাবিং করুন। নাহলে স্রেফ মুখ ধুয়ে টোনার লাগান।
• শীতকালে অনেকের চোখ-মুখ ফুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। এর মূল কারণ শরীরে জলের ঘাটতি। এর থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান। এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে বরফের টুকরো মুখে চেপে চেপে লাগান। কমলালেবুর রস জমিয়ে তাও মুখে লাগাতে পারেন।
• শীতে সাধারণত অ্যাকনের সমস্যা হয় না। তবে হলে তার উপর দারচিনি গুঁড়ো করে চন্দনের সঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে পারেন। খুব দ্রুত ফল পাবেন।
• শীতের ক’মাস থ্রেডিং, ওয়্যাক্সিং করার সময় বাড়তি যত্ন নিন। পারলে ফেশিয়াল রেজ়ার দিয়ে বাড়িতেই আইব্রো শেপ করুন। কারণ বারবার থ্রেডিং করালে ত্বক আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে। ওয়্যাক্সিংয়ের পরিবর্তে এই দু’-তিনমাস শেভিং করলেই ভাল।
• স্নানের আগে শরীরে তেল না লাগিয়ে, স্নানের পর ত্বক ভিজে থাকা অবস্থায় প্রথমে লোশন লাগান। তারপর অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। এতে আর্দ্রতা দীর্ঘক্ষণ বজায় থাকবে। l সাধারণ সাবানের পরিবর্তে মাইল্ড সাবান বা গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করুন, যাতে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে না পড়ে। শরীরে স্ক্রাব করার জন্য নরম লুফা বা বডি স্ক্রাবিংয়ের জন্য তৈরি নরম গ্লাভস ব্যবহার করুন।
• দিনের শেষ মেক-আপ তোলার জন্য মেক-আপ রিমুভিং ওয়াইপ ব্যবহার করবেন না। এতে মুখের ত্বকে টান পড়ে। পরিবর্তে মিসেলার ওয়াটার বা ক্লেনজ়িং বাম ব্যবহার করুন। অবশ্যই ডাবল ক্লেনজ়িং করুন। কারণ ত্বকের পক্ষে বাসি মেক-আপের চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছু নেই।
• অ্যালকোহল বেসড সুগন্ধি বা ডিওর পরিবর্তে অ্যালকোহল ফ্রি রোল-অন ব্যবহার করতে পারেন।
ফাটা ঠোঁটের প্রতিকার:
শীতের শুষ্কতা ঠোঁটের আর্দ্রতা কেড়ে নিলে ঠোঁট ফাটতে পারে সহজেই। আর যত্ন না নিলে তা শুধু আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্যই নষ্ট করবে না, অনেক সময় ফাটা ঠোঁট বেশ বেদনাদায়কও হতে পারে। তবে যত্ন শুরু করার আগে কয়েকটা বিষয় লক্ষ করুন। ঠোঁটের চারপাশের অংশ ফেটেছে, নাকি মাঝের অংশ এবং স্পর্শ করলে তা স্রেফ খসখসে লাগছে, নাকি জ্বালাভাব, রক্ত পড়ার মতো সমস্যাও হচ্ছে। যদি শুধু খসখসে মনে হয় বা চারধারের ত্বক ফেটে থাকে, সেক্ষেত্রে সমস্যা রাতারাতিও কমানো সম্ভব। কিন্তু যদি রক্ত পড়া বা ঠোঁটের মাঝের অংশ ফেটে থাকে, তাহলে পুরোপুরি সেরে উঠতে একটু সময় লাগবে।
• যাঁদের খসখসে ঠোঁটের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা রাতে মুখ পরিষ্কার করার পর কোনও পেট্রোলিয়াম জেলি ঠোঁটে লাগান। ঠোঁটের চারধারেও পুরু করে লাগাবেন। সারারাত রেখে দিন। সকালে ভিজে সুতির কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষুন। খুব টানাটানি করবেন না।
• এছাড়া সপ্তাহে একদিন নারকেল তেল, কফি এবং দুধের সর একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে, তা ঠোঁটের উপর লাগিয়ে শুতে যান। সকালে ভিজে হাত দিয়ে ঘষে তুলে নিন।
• রক্ত পড়ার সমস্যা বা ঠোঁট অতিরিক্ত ফেটে থাকলে কোনও মেডিকেটেড লিপবাম ব্যবহার করুন। ঘন অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম একটু গরম করে গলিয়ে তা ফাটা অংশের উপর লাগান। সারারাত রেখে দিন। এভাবে কয়েকদিন করলে ফাটা ভাব চলে যাবে।
• জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটার অভ্যেস থাকলে তা বদলান। এতে ঠোঁটের শুষ্কতা আরও বেড়ে যায়। বরং যখনই ঠোঁট শুষ্ক লাগবে, লিপবাম লাগানো অভ্যেস করুন। এই সময় ম্যাট লিপস্টিকও এড়িয়ে চলা ভাল। কারণ এই ধরনের লিপস্টিকেও ঠোঁটের শুষ্কতা বেড়ে যায়। পরিবর্তে স্যাটিন বা ডেমি ম্যাট লিপস্টিক লাগান, যা ঠোঁটকে আর্দ্রও রাখবে আবার খুব একটা শাইনি এফেক্টও দেবে না।
• যে লিপস্টিকই লাগান, তা খুব দীর্ঘক্ষণ পরে থাকবেন না। যদি একান্তই প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে ঘণ্টাখানেক অন্তর লিপস্টিক মুছে লিপবাম লাগিয়ে তারপর আবার লিপস্টিক পরুন। লিপস্টিক লাগানোর আগে ঠোঁটে অন্তত ১৫ মিনিট লিপবাম লাগিয়ে রাখুন। তারপর লিপস্টিক লাগান।
হাত-পায়ের যত্ন নিন:
গোটা শরীরের যেমন যত্ন নিচ্ছেন, হাত-পায়ের ক্ষেত্রে সেসব যত্ন তো জরুরি বটেই। তবে যেহেতু শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে হাত-পা বেশিক্ষণ জলের সংস্পর্শে থাকে, তাই কিছু বাড়তি যত্ন নিন।
• বডি লোশনের পরিবর্তে হাত এবং পায়ের জন্য যে বিশেষ ক্রিম পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করুন। এই ক্রিমের ঘনত্ব অনেক বেশি হয়। ফলে চট করে ত্বক শুষ্ক হতে পারে না।
• গোড়ালি ফাটার সমস্যা হলে পা খুলে রাখবেন না। যত বেশি পা বাতাসের সংস্পর্শে থাকবে, তত সমস্যা বাড়বে। পা পরিষ্কার রাখাও এক্ষেত্রে জরুরি। দিনের শেষে পা ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে মুছে ফুট ক্রিম লাগান। তারপর অলিভ অয়েল লাগিয়ে মোজা পরে শুতে যান।
• সপ্তাহে একদিন হাত এবং পা স্ক্রাব করুন। ওটমিল বা কফির মতো ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করুন। খুব গরম জলে হাত-পা ধোবেন না। গোড়ালির মৃত কোষ তুলতে পিউমিস স্টোন ব্যবহার করলে অবশ্যই ভিজে ত্বকে করবেন।
এভাবে শীতের ক’মাস ত্বক আর চুলের যত্ন নিন। দেখবেন, উষ্ণতার পারদ নামলেও চেহারার লাবণ্যে কোনও খামতি থাকবে না...

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url