রাতে ত্বকের রূপরুটিন | Night skin care routine
রাতের রূপরুটিন Night skin care routine:
সারাদিন বেজায় ব্যস্ত! নিঃশ্বাসও প্রায় গুণে নেওয়ায় জোগাড়। এর মধ্যে আবার রূপচর্চা? বেশ তো, যত্ন নিন রাতে। দিনের শেষে পনেরো মিনিটেই কিস্তিমাত করুন ত্বক আর চুলের সব সমস্যাকে।
সকাল থেকে কাজের অন্ত নেই। ঘুম ভাঙা থেকে সেই যে ছোটা শুরু করেছেন, বিশ্রাম একেবারে রাতে। এত ব্যস্ততার মধ্যে নিঃশ্বাস নেওয়ারই জো নেই, তো রূপচর্চা! এভাবেই দিনের পর দিন অবহেলা পেতে পেতে ত্বক আর চুলেরও বেজায় মুখভার। এরপর হঠাৎ একদিন আয়নায় চোখ ফেলতেই আপনার চক্ষু চড়কগাছ! এ কী হাল হয়েছে চুল আর ত্বকের? কিন্তু নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষ দেওয়ারও নেই। ইস! সময় থাকতে থাকতেই যদি যত্ন নিতেন! কী বললেন? সময় পাননি? আচ্ছা মানলাম, দিনেরবেলা সময়ের না হয় সত্যিই অভাব। কিন্তু রাতের বেলা তো নিশ্চয়ই হাতে দশ-পনেরো মিনিট সময় পান? ঘুমনোর আগে যে সময় মোবাইল স্ক্রিনে আঙুল বোলান, তার কিছুটা সময় ত্বক আর চুলের জন্য বরাদ্দ রাখুন। ওই সময়টুকু কাজে লাগালেই কিন্তু ত্বক আর চুল ভাল থাকবে। কোনও ইলাবোরেট রুটিন ফলো করতে হবে না। শুধু বেসিক যত্নটুকু নিন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঠিক কীভাবে ত্বক আর চুলের যত্ন নেবেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথম ধাপ:
ত্বক পরিষ্কার করা থেকে শুরু করি। অপরিষ্কার ত্বকে যাই ব্যবহার করুন না কেন, ত্বকের তাতে কোনও উপকারই হবে না। বাড়ির বাইরে বেরোলে তো বটেই, এমনকী সারাদিন বাড়িতে থাকলেও কিন্তু ত্বকে তেল, ঘাম ইত্যাদি জমা হয়। তাই রাতে শুতে যাওয়ার আগে তাই মুখ পরিষ্কার করা একান্ত জরুরি। যদি মুখে কোনও মেক-আপ থাকে, তাহলে প্রথমে তুলোয় করে মেক-আপ রিমুভার নিয়ে ভালভাবে মেক-আপ তুলে নিন। এরপর সামান্য বেবি অয়েল বা অলিভ অয়েল নিয়ে মুখে মাসাজ করুন। টিস্যু দিয়ে একবার মুখ মুছে ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। প্রয়োজন হলে দু’বার ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। যাঁরা প্রতিদিন বাইরে বেরোন, তাঁরা সপ্তাহে যে কোনও দু’দিন ফেসওয়াশের পর স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।
দ্বিতীয় ধাপ:
এই স্টেপ অবশ্য অপশনাল। যাঁরা দিনের বেলা ব্যস্ততার কারণে ত্বকের সেভাবে যত্ন নিতে পারেন না, তাঁরা রাতে ফেসপ্যাক লাগাতে পারেন। আর যেহেতু ত্বক সারা রাত বিশ্রাম পায়, তাই শোওয়ার আগে কোনও ফেসপ্যাক লাগালে তার ফলও ভাল পাওয়া যায়। যে কোনও পছন্দের ক্লে-বেসড (স্বাভাবিক এবং তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে) কিংবা ক্রিম-বেসড (শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে) ফেসপ্যাক লাগাতে পারেন। অথবা গোলাপ জল এবং মুলতানি মাটি (স্বাভাবিক এবং তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে) কিংবা টকদই, মধু এবং পাকা কলা (শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে) একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’দিন এই স্টেপ ফলো করলেই হবে।
তৃতীয় ধাপ:
মুখ পরিষ্কার করে নরম তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে অতিরিক্ত জল মুছে নিন। ভুলেও মুখ ঘষবেন না। এতে ত্বক ইরিটেটেড হয় এবং এজিং সাইনসও তাড়াতাড়ি দেখা দেয়। এরপর টোনার ব্যবহার করুন। পরিষ্কার ত্বকে নিয়মিত টোনার ব্যবহার করলে দেখবেন অ্যাকনে, ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডসের সমস্যাও কমবে। অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার বাছুন। তৈলাক্ত ত্বকে নিম, বেসিল, টি-ট্রি অয়েল, গ্রিন টি ইত্যাদি সমৃদ্ধ টোনার খুব ভাল কাজ করে। অপরদিকে শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে গোলাপজল, অ্যাভোকাডো, মধু ইত্যাদি উপাদানে সমৃদ্ধ টোনার আদর্শ। তবে খেয়াল রাখবেন, টোনার যেন অ্যালকোহল-বেসড না হয়। তাতে লাভের থেকে ত্বকের ক্ষতিই বেশি হবে।
চতুর্থ ধাপ:
এবার পালা ময়শ্চারাইজ়ারের। শুধু রাত নয়, যে কোনও সময়ের রূপরুটিনের ক্ষেত্রেই এটি অন্যতম প্রধান ধাপ। তাই শরীর যত ক্লান্তই থাকুক না কেন, ময়শ্চারাইজ়ার লাগাতে ভুললে চলবে না! যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত, তাঁরা মুখ ভিজে থাকা অবস্থাতেই ত্বকে অল্প ময়শ্চারাইজ়ার লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে তুলো দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। শীতকালের শুকনো আবহাওয়ায় একটু ভারী ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করতে পারেন। গরমকালে ব্যবহার করুন ওয়াটার-বেসড ময়শ্চারাইজ়ার। পুরো মুখে লাগিয়ে সার্কুলার মোশনে মাসাজ করে নিন। মুখের পাশাপাশি গলায় এবং ঘাড়েও ময়শ্চারাইজ়ার লাগান। একই সঙ্গে সারা শরীরেরও ময়শ্চারাইজ়ার লাগান। হাত, পায়ের পাতা, হাঁটু, গোড়ালি ইত্যাদি অংশের প্রতি বেশি জোর দিন। আজকাল বাজারে বিভিন্ন স্লিপিং মাস্কও পাওয়া যায়। এগুলো মূলত জেল-বেসড ময়শ্চারাইজ়ার, যা পুরু স্তরে সারারাত ত্বকে লাগিয়ে রাখা যায়। রাতে ব্যবহার করার জন্যই এগুলো বিশেষভাবে প্রস্তুত। ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হলে এই ধরনের মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন।
পঞ্চম ধাপ:
ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করার পর ঠোঁট আর্দ্র থাকা অবস্থাতেই নরম তোয়ালে বা ওয়েট টিস্যু পেপার দিয়ে আলতো করে ঘষে নিন। এতে ঠোঁটের মৃত কোষ উঠে আসবে এবং ঠোঁট নরম হবে। এরপর কোনও ময়শ্চারাইজ়িং লিপবাম লাগান। এর পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন আন্ডার-আই ক্রিম। আমাদের চোখের নীচের ত্বক খুব পাতলা হয় বলে ওই অংশেই সবার আগে এজিং সাইনস দেখা যায়। তাই ডার্ক সার্কলের সমস্যা না থাকলেও, প্রতিদিন আন্ডার-আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এতে ওই অংশের ত্বক দৃঢ়, নরম এবং মসৃণ থাকবে।
ষষ্ঠ ধাপ:
ত্বকের যত্ন মোটামুটি শেষ। এবার নজর দিন চুলের দিকে। পরদিন শ্যাম্পু করার হলে, সামান্য নারকেল তেল গরম করে স্ক্যাল্পে এবং চুলের ডগায় মালিশ করে নিন। সপ্তাহে দু’বার এই অবস্থাতে গরম জলে তোয়ালে ডুবিয়ে চুলে জড়িয়ে রাখুন। এরপর চুল বড় দাঁড়ার কাঠের চিরুনি দিয়ে ভালভাবে ব্রাশ করে নিন। চুল লম্বা হলে হালকা পনি বা বিনুনি করে নিতে পারেন। এতে চুল পড়া কমবে।



আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url