Clothing design: বিয়ে-পার্বণে সেজে ওঠার জন্য নতুন কিছু পোশাকের ডিজাইন দেখে নিন

 বিয়ে-পার্বণে সেজে ওঠার জন্য নতুন কিছু পোশাকের ডিজাইন দেখে নিন


পৌষ পাততাড়ি গোটাতেই শহর জুড়ে নামবে বিয়ের মরসুম। প্রজাপতির বিধানে সেজে উঠবে কোনও চেনা দালান, খিড়কি, মনের কোণ। সাত পাকের ‘উৎসবে’ ঝলমল করে উঠবে আটপৌরে বঙ্গজীবন। 

উৎসবই বটে। বারো মাসে তেরো পার্বণ যাপনে অভ্যস্ত বাঙালির কাছে এখন ‘বিয়েবাড়ি’ শুধুমাত্র সামাজিক অনুষ্ঠান নয়। বরং তা এক পরব। আনন্দ করে বাঁচতে ভালবাসা বাঙালির কাছে বিয়েবাড়ি মানেই হুল্লোড়, হইচইয়ের এক মস্ত ফিকির। সাজের মজায় মজে থাকার সুবর্ণ সুযোগও।

কোন আচার-অনুষ্ঠান বাঙালির নিজের, কোনটা অবাঙালি, কোনটাই বা পাশ্চাত্যের হাতছানিতে সাবেক রীতি-নীতির বেড়া ভেঙে গড় গড়েছে বাঙালি বিয়ের অন্দরমহলে, সে প্রসঙ্গ অন্য। বাঙালি এখন তা নিয়ে খুব একটা ভাবিতও নয়। কোন অনুষ্ঠানে কোন সাজ সবচেয়ে মানানসই, কোন ‘লুক’ এই আসরগুলির মধ্যমণি হয়ে ওঠার বাজি জিতিয়ে দেবে এক মুহূর্তে— এ সবেই বরং বেশি ব্যস্ত আজকের ‘বং’-মন। যার কল্যাণে বিয়েবাড়ি এখন হয়ে উঠেছে আমবাঙালির সাজ পার্বণ।

বিয়েবাড়ি, বেনারসি ও বাঙালি। এই বন্ধন আদি ও অকৃত্রিম। কিন্তু জরি আর ক্রিস্টালে জড়ানো লেহঙ্গা চোলির হাতছানিও উপেক্ষা করা বেশ কঠিন এখন। গত কয়েক দশকে পুরুষদের বিয়েবাড়ির সাজেও দর বেড়েছে শেরওয়ানি কিংবা শার্টের সঙ্গে ব্লেজ়ার বা টাক্সিডোরের। কিন্তু উপেক্ষা করা যায় না শিকড়ের টানও। তখন ধুতি-পাঞ্জাবির চেয়ে আপন আর কে! 



তবে পাঞ্জাবির জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দেওয়াও বাঙালি সমাজে বেশ কঠিন। তসর বা সিল্কের পাঞ্জাবির মতো বিয়েবাড়ির মেজাজ ধরে রাখার হাতযশ আর কারও নেই। তাতে সুতোর কাজ, গলার কাছে নকশা বা একপাশে বোতাম থাকলে সাবেকিয়ানার পাল্লা আরও ভারী হয়। আবার আর পাঁচ জন পাঞ্জাবি পরিহিতের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া আটকাতে অনেক সময়েই উপরে চাপে বাহারি জহর কোটও। 

তসর বা তাঁতের কাপড় বহু যুগ ধরেই বাংলার আপন। বন্ধুত্ব তুলনায় পরে হলেও নানা রকমের সিল্ক ও তার গায়ে বাহারি বুটি বা জরির কারুকার্যও এখন আপন হয়ে গিয়েছে বাঙালি নারীর। বিয়েবাড়ির ভিড়ে র সিল্ক, ব্রোকেড-এর পাশাপাশি বেনারসি, কাতান, পাটোলা, সম্বলপুরী, মুগা, বোমকাই, কাঞ্চিপুরম, পৈঠানির মতো প্রাদেশিক ঐতিহ্যের ধারা গায়ে জড়িয়েও সহজে নজরকাড়া যেতে পারে। সঙ্গত দিতে না হয় থাকল এলো খোপা আর টিকলি। বঙ্গললনার বিয়েবাড়ির সন্ধের সাজপাট সম্পূর্ণ করতে আর কী চাই! শুধু যে সিল্কে ভরসা রাখতে হবে তা-ও নয়। বিকল্পও রয়েছে ঢের। জর্জেট, স্যাটিন, শিফন, অর্গ্যানজ়া— বিয়েবাড়ির সাজে লেহঙ্গা, সালোয়ার কামিজ, শারারা বা চুড়িদারের রমরমার যুগে এরাও প্রথম সারির খেলোয়াড়।



হিমফুলের মরসুম যতটা পিঠেপুলির, ততটাই বিয়েবাড়িরও। হালকা শীতের বিয়েবাড়ি না-হয় গ্রীষ্মের শামিল। কিন্তু পারদ পতন সহ্যের সীমা ছাড়ালে? তা বাঙালি যতই কানচাপা টুপি, মাফলারের ভক্ত হোক না-কেন, বিয়েবাড়ির চৌহদ্দির নাগাল তারা কখনও পায়নি, পাবেও না।  কিন্তু পরোয়া নেই! বঙ্গনারী তো সেই কবেই শাড়ির সঙ্গে টার্টলনেক সোয়েটার বা লং জ্যাকেট আপন করে নিয়েছে। হালফিলে সেই তালিকায় জুড়েছে ফার কোট, ডেনিম বা লেদার জ্যাকেটের মতো কেতাদুরস্তেরাও।  

পোশাক যা-ই বাছা হোক না-কেন, বিয়েবাড়ির সাজে রঙের দাবি দাবিয়ে রাখা বাঙালির ধাতে কোনওদিনই ছিল না। উজ্জ্বল রংয়ের ছটায় চোখ না ধাঁধালে আবার বিয়েবাড়ি কীসের! ইদানীং অবশ্য নান্দীমুখ বা গায়ে হলুদের মতো দিনের বেলার কর্মসূচিতে একটু হালকা রংগুলিও বেশ প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু মেহেন্দি, সঙ্গীত, বা বিয়ের আসরের রাতে ঘন নীল, পান্না সবুজ, সোনালি, রানি, বেগুনির মায়াজাল উপেক্ষা করা কঠিন। হাজার রঙের ভিড়ে পুরুষদের জন্য সনাতনী পোশাকের ক্ষেত্রে তসর রংটির জমিদারি এখনও অবিচল।

গয়না ছাড়া বিয়েবাড়ি নিয়ে আলোচনা বৃথাই। বিয়ের উৎসবে যুগ যুগ ধরে সোনা ও রুপোর আধিপত্য অমলিন। ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। আগামী কয়েক প্রজন্মেও সেই ধারায় খুব একটা হেরফের হবে বলে মনে হয় না।



তবে এই দুই ধাতুর জনপ্রিয়তায় পরিবর্তন না হলেও সময়ের সঙ্গে প্রায় আমূল বদলে গিয়েছে তা দিয়ে তৈরি গয়নার কারিকুরি, পাল্টেছে জৌলুস। পাশাপাশি, জড়োয়া বা সীতাহারের মহিমা অটুট রেখেই হালকা কস্টিউম অলঙ্কারও নিঃশব্দে জায়গা করে নিয়েছে বিয়েরবাড়ির সাজে। গত দশকের গোড়া থেকে সেই দৌড়ে শামিল হয়েছে জাঙ্ক ও কাপড়ের তৈরি গয়নাও। 

কালে কালে নব্যসংস্কৃতির ছোঁয়ায় পাল্টেছে বাঙালির জীবনচর্যা। বলাই বাহুল্য, পরিবর্তনের চোরাস্রোত এসে ধাক্কা দিয়েছে তাদের বিয়েবাড়ির সাজপাটেও। নান্দনিকতায় বাঁচতে ভালবাসা বাঙালি তা আপন করে নিয়েছে নিজের মতো করেই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url