Didi Ke Bolo: ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে বারবার বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন তৃণমূল কর্মীরা
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে বারবার বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন তৃণমূল কর্মীরা
‘দিদিকে বলো’-তে শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের উপায় ছিল না। ফোনে অভিযোগ জানানোর বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে সুরক্ষা কবচ অনেকটাই ব্যতিক্রমী। তৃণমূলের বিধায়ক-সাংসদ-শীর্ষ নেতারা পৌঁছে যাচ্ছেন এ বঙ্গের গ্রামে গ্রামে, অলিতে-গলিতে, মেঠো রাস্তায়। রাজ্যের সমস্ত গ্রামকে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো এমন সার্বিক রাজনৈতিক কর্মসূচি আগে কোনও দল নিয়েছে বলে তো মনে করতে পারছি না। ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে ঠিকই, গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকে দেওযার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু, দিনের শেষে জনসংযোগ হচ্ছে দারুণ ভাবে।
মেজাজ (বদ) বড় সর্বনেশে। একবার মাথায় চড়লে বিপদ অনিবার্য।
দত্তপুকুরে যা ঘটল, তা আমাদের দেখাল, ক্ষমতা আর মেজাজের গভীর সখ্য। দিদির দূতের সামনে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন এলাকার অনুন্নয়ন নিয়ে, স্থানীয় এক মন্দির কমিটির সদস্যেরা। বিনিময়ে চড় খেতে হয় এক সদস্য তথা এলাকার বিজেপি নেতাকে। পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জেও মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছে ‘দিদির দূত’ এক বিধায়ককে। ঘর নেই, রাস্তা নেই মানুষ বলতে শুরু করেছিলেন তাঁর সামনে। সেই বিধায়ক আবার ‘অন ক্যামেরা’ কোনও সমস্যা শুনবেন না। অভিযোগ, সে জন্য বন্ধ করান সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরা।
জনসংযোগের নামে তৃণমূল কংগ্রেস সরাসরি মাঠে-ময়দানে নামিয়ে দিয়েছে জন প্রতিনিধিদের। এবং পরের পর ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, তৃণমূল স্তরে ক্ষোভ ঠিক কোন জায়গায় পৌঁছেছে। আবার এটাও মানতে হবে যে, দত্তপুকুর বা রানিগঞ্জের মতো একটা-দুটো জায়গা বাদ দিলে জনতার ক্ষোভ বেশ ভাল ভাবেই সামাল দিচ্ছেন মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদেরা। কোথাও বাবা-বাছা করে, কোথাও কাঁধে হাত রেখে, কোথাও বয়স্ককে প্রণাম করে কিংবা কোথাও সরাসরি প্রশাসনকে ফোন করে সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নিঃসন্দেহে শাসকদলের এক দারুণ ‘কৌশল’। হয়তো ‘সুরক্ষা কবচ’ও। ভোট আসার ঢের আগেই দুয়ারে নেতাকে পাঠিয়ে ক্ষোভের আঁচ ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নেওয়া। যা হচ্ছে, এখনই হয়ে যাক। ভোটের সময় অন্য ‘খেলা’।
বিরোধীরা সমালোচনা করবেন। সেটাই স্বাভাবিক। আগেও করেছেন। কিন্তু, ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি যে তৃণমূলকে বড়সড় ‘ডিভিডেন্ড’ দিয়েছে, তা বিধানসভা নির্বাচনের ফল থেকেই স্পষ্ট। এ বারও বিরোধীরা গুছিয়েয়দানে নামার আগেই চলে এসেছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। ভোটের ঢের আগে সলতে পাকানোর কাজটা শাসকদল শুরু করে দিল এই কর্মসূচির মাধ্যমে। এই কর্মসূচি ‘দিদিকে বলো’-র চেয়েও বেশি সফল হতেই পারে। সবে তো শুরু। ‘দিদিকে বলো’-তে শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের উপায় ছিল না। ফোনে অভিযোগ জানানোর বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে সুরক্ষা কবচ অনেকটাই ব্যতিক্রমী। তৃণমূলের বিধায়ক-সাংসদ-শীর্ষ নেতারা পৌঁছে যাচ্ছেন এ বঙ্গের গ্রামে গ্রামে, অলিতে-গলিতে, মেঠো রাস্তায়। রাজ্যের অতি প্রত্যন্ত গ্রামকেও ছুঁয়ে যাওয়ার মতো এমন সার্বিক রাজনৈতিক কর্মসূচি আগে কোনও দল নিয়েছে বলে তো মনে করতে পারছি না।
ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে ঠিকই, গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকে দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু, দিনের শেষে জনসংযোগ হচ্ছে দারুণ ভাবে। রাজনৈতিক দলের আর কী চাই?
লক্ষ্য তো একটাই—গ্রাম দখল ধরে রাখা। কে না জানে, সরকারে ক্ষমতা কায়েম রাখার পথ গ্রাম হয়েই বেরোয়। ঠিক এই জায়গাতেই তৃণমূল অনেক যোজন এগিয়ে বিরোধীদের থেকে। এক দিকে সরকার পৌঁছে যাচ্ছে দুয়ারে, শিবির করার মাধ্যমে। অন্য দিকে, দল পৌঁছচ্ছে গ্রামে গ্রামে, দূত হয়ে। সঙ্গে নানাবিধ জলকল্যাণমুখী সরকারি প্রকল্প তো রয়েইছে।
নিয়োগ-দুর্নীতি, আবাস যোজনা, গরু পাচার, কয়লা পাচার প্রভৃতি নানা অভিযোগে বিদ্ধ এখন তৃণমূল। এমন এক আবহে হতে চলেছে মহা গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোট। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আদৌ অবাধ ভোট হবে কি না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরের পর সভায় বলছেন বটে, পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে। কিন্তু, ওই যে বলে ‘না-আঁচালে বিশ্বাস নেই’। ২০১৮-র মতো এ বারও ‘উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে’ কোনও সুরক্ষা কবচ বা তাবিজ ছাড়াই হইহই করে জিতবে তৃণমূল কংগ্রেস, এখনই বলে দেওয়া যায়।

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url